মালয়েশিয়ায় হালাল পণ্যের প্রদর্শনীতে নজর কাড়ল বাংলাদেশি পাটপণ্য

ছবি: সংগৃহীত

মালয়েশিয়ায় আন্তর্জাতিক হালাল শোকেসের ১৯তম আসরে বাংলাদেশি পণ্য বেশ সাড়া জাগিয়েছে। বাংলাদেশি পাটপণ্যের প্রতি বিভিন্ন দেশের আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের আগ্রহ দেখা গেছে। প্রতিদিনই বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নে দর্শনার্থীদের ভিড় দেখা গেছে।

গতকাল বুধবার মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী দাতো শ্রী আনোয়ার ইব্রাহীম এবং উপ-প্রধানমন্ত্রী দাতো শ্রী ড. আহমেদ জাহিদ হামিদি বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন পরিদর্শন করেন। বাংলাদেশের প্রদর্শিত পণ্যকে সম্ভাবনাময় বলে উল্লেখ করেন তারা।

বাংলাদেশের পাট ও পাটের তৈরি পণ্যের প্রতি বিশেষ করে মালয়েশিয়া ও অন্যান্য দেশের আমদানিকারকদের আগ্রহ দেখা গেছে। এ নিয়ে তারা প্যাভিলিয়নে দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সঙ্গেও কথা বলেন।

বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নে দায়িত্বরত কর্মকর্তারা বলেন, 'শুরুর দিন থেকেই মেলায় ভালো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার তৃতীয় দিনে দর্শনার্থীর ভিড় বেশি ছিল। বাংলাদেশি পণ্যের প্রতি আগ্রহ দেখে আমাদেরও উৎসাহও অনেক বেড়ে গেছে।'

সম্প্রতি বিশ্বব্যাপী হালাল পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় হালাল বাণিজ্যের পরিমাণও ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। হালাল বাণিজ্যে মালয়েশিয়ার অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য এবং সে কারণে এ বিষয়ে মালয়েশিয়ার সঙ্গে কাজ করার জন্য বাংলাদেশ প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে। এই মেলায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশে হালাল সেক্টরের উন্নয়ন তথা মালয়েশিয়াসহ আসিয়ান অঞ্চলে বাংলাদেশি পণ্যের বাজার বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

১২ সেপ্টেম্বর থেকে মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক ট্রেড অ্যান্ড এক্সিবিশনে ৪ দিনব্যাপী শুরু হওয়া এ আসর চলবে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। খাদ্য ও পানীয়, মডেস্ট ফ্যাশন, ই-কর্মাস, ইসলামিক ফিন্যান্স ও ফিনটেকসহ মোট ১৩টি ক্লাস্টারে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৪০টি দেশের অংশগ্রহণের মাধ্যমে বেশ জমে উঠেছে এ আসর। বিশ্বের ১ হাজার ৪০টি প্রতিষ্ঠান ১ হাজার ৮০০টি বুথের মাধ্যমে এই মেলায় অংশগ্রহণ করেছে।

এই মেলা শুধু আসিয়ান অঞ্চলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এখানে আন্তর্জাতিক প্যাভিলিয়নে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অংশগ্রহণসহ বিভিন্ন ট্রেড কমিশন, সরকারি সংস্থা, শিল্প ও ব্যবসায়িক নেতারা অংশগ্রহণ করেছেন।

বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর সহযোগিতায় এবং মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে এই মেলায় বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নে ৯টি বুথে মোট ১৬ টি বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে।

খাদ্য, পোশাক শিল্প, পাট ও পাটজাত পণ্য, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, আইটি ও হস্তশিল্প এসব ক্যাটগরিতে বাংলাদেশ থেকে বোম্বে সুইটস অ্যান্ড কোং লিমিটেড, এগ্রোভার্স লিমিটেড, তাহমিনাস, পিপলস লেদার ইন্ডাস্ট্রিজ, কেএমআর ক্রাফট, কারুপণ্য, বন্ধন নূরস, অ্যালবাট্রস ফ্যাশন, পশরা লেদার এন্ড জুট, জুটএক্স, বিদোরা ব্যাগ এবং হস্তশিল্প, টেকসলিউশন, প্রিঙ্ক, ত্রিনাস ক্লোসেট, ডাইনাস গ্ল্যামার এবং কল্পতরু তাদের পণ্য প্রদর্শন করছে। মালয়েশিয়ায় সাম্প্রতিক সময়ে আয়োজিত মেলার মধ্যে এটিতেই বড় পরিসরে বাংলাদেশ অংশগ্রহণ করেছে।

মেলার দ্বিতীয় দিনে বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন ঘুরে দেখেন দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনার মো. গোলাম সারোয়ার। সে সময় সঙ্গে ছিলেন, মালয়েশিয়া এক্সটারনেল ট্রেড ডেভেলাপমেন্ট কর্পোরেশনের পরিচালক এস জয়শংকরসহ হাইকমিশনের কর্মকর্তা ও প্রবাসী বাংলাদেশিরা।

এ সময় হাইকমিশনার সাংবাদিকদের জানান, হালাল পণ্যের বাণিজ্য একটি ক্রমবর্ধমান সেক্টর। বাংলাদেশ বিশ্বের তৃতীয় মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হলেও হালাল পণ্য বাণিজ্যে অনেক পিছিয়ে রয়েছে।

বাংলাদেশে হালাল ডেভেলপমেন্ট অথরিটি গঠনের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে হাইকমিশনার মো. গোলাম সারোয়ার বলেন, 'সারাবিশ্বে বর্তমানে হালাল বাণিজ্যের পরিমাণ ২.৩ ট্রিলিয়ন ডলার, ২০৩০ সালে বাণিজ্য বেড়ে দাঁড়াবে ৩.৬ ট্রিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ যদি এর ১০ শতাংশ বাজার ধরতে পারে তাহলে ৩৬০ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্যের সুযোগ সৃষ্টি হবে। ১ শতাংশ ধরলেও ৩৬ বিলিয়ন ডলার বাণিজ্যের সুযোগ সৃষ্টি হবে। সে লক্ষ্যে আমাদের কাজ করতে হবে।'

লেখক: মালয়েশিয়াপ্রবাসী বাংলাদেশি সাংবাদিক

Comments

The Daily Star  | English

Pope Francis dies at 88

He had recently survived a serious bout of double pneumonia.

11m ago