লিসবনে ‘গণহত্যা দিবস’ পালন, আন্তর্জাাতিক স্বীকৃতির দাবি

গণহত্যা দিবস
দূতাবাস প্রাঙ্গণে মোমবাতি প্রজ্জ্বলনের মিছিল। ছবি: সংগৃহীত

নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নৃশংস ও কাপুরুষোচিত হামলার ঘটনা স্মরণ করে যথাযথ সম্মান ও গাম্ভীর্যের সঙ্গে 'গণহত্যা দিবস' পালন করেছে পর্তুগালের লিসবনে বাংলাদেশ দূতাবাস।

এ উপলক্ষে দূতাবাস প্রাঙ্গণে সেমিনার, আলোকচিত্র প্রদর্শনী ও গণহত্যায় নিহতদের স্মরণে মোমবাতি প্রজ্জ্বলনের আয়োজন করা হয়।

গত ২৫ মার্চ সন্ধ্যায় দূতাবাসে আয়োজিত '৫২ এ বাংলাদেশ: লুকিং ব্যাক ইন দ্য ফ্রিডম স্ট্র্যাগল অ্যান্ড জেনোসাইড' শীর্ষক সেমিনারে পর্তুগালের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, প্রবাসী বাংলাদেশি ও দূতাবাসের কর্মকর্তারা অংশ নেন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে সেমিনার শুরু হয়।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত তারিক আহসান তার বক্তব্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মুক্তিযুদ্ধের সব শহীদ ও বীরাঙ্গনাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

তিনি বলেন, '১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস ধরে হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ ও লুণ্ঠন অব্যাহত ছিল। সারা বাংলাদেশে গণকবর ও হত্যার ক্ষেত্র ছড়িয়ে আছে। এখনো নতুন নতুন গণকবর পাওয়া যাচ্ছে।'

তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, 'যদিও বাংলাদেশে গণহত্যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে ভয়াবহ গণহত্যাগুলোর একটি ছিল, তবুও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এটিকে যথাযথভাবে স্বীকৃতি দেয়নি।'

তার মতে, বাংলাদেশের গণহত্যার অপর্যাপ্ত স্বীকৃতি বিশ্বজুড়ে গণহত্যার অনেক ঘটনার কারণ বলে মনে করা হয়। তিনি বাংলাদেশের গণহত্যাকে স্বীকৃতি দেওয়ার আহ্বান জানান যাতে নিহতদের আত্মা শান্তিতে থাকে।

প্যানেল আলোচনায় মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন লিসবন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক শিব কুমার সিং।

তিনি বাংলাদেশের গণহত্যার অমানবিকীকরণ, নির্মূল ও অস্বীকারের দিকগুলো বিশদভাবে বর্ণনা করে বলেন, পাকিস্তানের উচিত ১৯৭১ সালে যা করেছিল তার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের কাছে ক্ষমা চাওয়া।

তিনি অবিলম্বে বাংলাদেশের গণহত্যাকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিশেষ করে জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানান।

আলোচনায় অংশ নিয়ে লিসবন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সার্জিউ সেনসিউক ২৫ মার্চের কালরাত্রির নির্যাতিত ও মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত অবিলম্বে বাংলাদেশের জনগণের ওপর পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর গণহত্যার স্বীকৃতি দেওয়া।

তিনি সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বাংলাদেশের অসামান্য অর্জনের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং দেখেন যে বাংলাদেশ বিশ্বমঞ্চে একটি অবস্থান তৈরি করেছে।

সেমিনারে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের গণহত্যার ঘটনা সম্বলিত ভিডিও ডকুমেন্টারি, আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় প্রচারিত গণহত্যার যুদ্ধকালীন ফুটেজ ও বাংলাদেশের গণহত্যার স্বীকৃতির মামলা প্রদর্শন করা হয়।

অতিথিদের মধ্যে 'বাংলাদেশ জেনোসাইড রিভিজিটেড' ও 'রিকগনাইজিং দ্য ১৯৭১ বাংলাদেশ জেনোসাইড' শিরোনামের বুকলেট এবং মার্কিন কংগ্রেসে বাংলাদেশের গণহত্যাকে স্বীকৃতি দিয়ে পেশ করা রেজুলেশনও বিতরণ করা হয়।

আলোচনায় প্রশ্ন-উত্তর পর্বে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা প্যানেলিস্টদের বাংলাদেশের গণহত্যা ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কর্তৃক গণহত্যার স্বীকৃতি সম্পর্কে নানান প্রশ্ন করেন।

অতিথিরা চ্যান্সারি প্রাঙ্গণে মোমবাতি প্রজ্জ্বলনের মিছিলে হেঁটে যান এবং '১৯৭১ গণহত্যা' শীর্ষক আলোকচিত্র প্রদর্শনীর সামনে মোমবাতি জ্বালিয়ে গণহত্যায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।

প্রদর্শনীতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীদের দ্বারা সংঘটিত নৃশংসতার ভয়াবহতা প্রত্যক্ষ করে দর্শনার্থীরা হতবাক হন।

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh sees window of opportunity in Trump’s trade war

US President-elect Donald Trump’s trade policies towards China and Mexico could ultimately benefit Bangladesh, according to local apparel exporters.

9h ago