অস্ট্রেলিয়া

সিডনিতে শিশুর মৃত্যু নিয়ে প্রথমবারের মতো কথা বললেন বাবা

সিডনিতে শিশুর মৃত্যু নিয়ে প্রথমবারের মতো কথা বললেন বাবা
অস্ট্রেলিয়ার দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে আরিকের পরিবার। ছবি: দ্য টেলিগ্রাফ থেকে নেওয়া

অস্ট্রেলিয়ায় প্রতি বছর ৫ হাজারেরও বেশি শিশুকে উত্তপ্ত গাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়।

তবে দীর্ঘ সময় উত্তপ্ত গাড়িতে আটকে থাকার পর শিশুকে মৃত অবস্থায় উদ্ধারের উদাহরণ অস্ট্রেলিয়াতে খুব বেশি নেই। তাই গোটা অস্ট্রেলিয়াজুড়ে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আরিকের মৃত্যু নিয়ে এত আলোচনা। 

সিডনিতে মর্মান্তিকভাবে মারা যাওয়া শিশু আরিকের বাবা বলেছেন, 'আমি যদি অন্য অভিভাবককে আরও সতর্ক হতে সাহায্য করতে পারি যাতে এ রকম আর না ঘটে তাহলে এটি থেকে ইতিবাচক কিছু হবে। আমি শুধু অন্য অভিভাবকদের বলতে চাই, আপনার বাচ্চারা কোথায় আছে সব সময় ১২০ শতাংশ নিশ্চিত হন।'

গত বৃহস্পতিবার সিডনিতে উত্তপ্ত গাড়ির মধ্যে ৬ ঘণ্টা আটকে থাকার পর অতিরিক্ত তাপমাত্রায় মারা যায় ৩ বছর বয়সী আরিক হাসান। তার বাবা তাকে চাইল্ড কেয়ারে নামিয়ে না দিয়ে গাড়ির মধ্যে রেখেই চলে যান বাসায়। গাড়ির ভেতরে তখন তাপমাত্রা ছিল প্রায় ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। 

আরিকের মৃত্যুকে ঘিরে গত এক সপ্তাহ ধরে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে, মিডিয়াতে এবং শিশু নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর মধ্যে তৈরি হয়েছে নানা প্রশ্ন, কৌতূহল, রহস্য।
 
নিহত আরিকের বাবা নেওয়াজ হাসানের 'আশ্চর্যজনক নীরবতা' সেই প্রশ্ন ও রহস্যকে আরও বাড়িয়ে তুলেছিল। 

অবশেষে নেওয়াজ হাসান অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম প্রধান সংবাদপত্র 'দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফে' একটি সাক্ষাৎকার দিয়ে ওইদিনের ঘটনা বর্ণনা করেছেন।
 
তিনি বলেছেন, 'আমি সাধারণত ডে কেয়ারে আরিককে নিয়ে যাবার পথে তার সঙ্গে কথা বলতাম কিন্তু ওই দিন সে ঘুমিয়ে ছিল। আগের রাতে তার ভালো ঘুম না হওয়ায় সে ক্লান্ত ছিল। গাড়ি নীরব ছিল। সেই নীরবতা আমাকে ভুলে যেতে সাহায্য করেছে।' 

নেওয়াজ ব্যাখ্যা করে জানিয়েছেন, তিনি বড় ছেলেকে স্কুলে নামিয়ে দিয়ে সাধারণত ছোট ছেলে আরিককে ডে কেয়ারে নামান। গত ১৮ মাস ধরে নিয়মিতভাবে এটি তিনি করেছেন। ঘটনার দিন আরিক ঘুমিয়ে থাকায় তার কথা ভুলে যান এবং গাড়ি পার্ক করে বাসায় যান। সেখানে তিনি হোম অফিসের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। নেওয়াজ হাসান একটি আর্থিক সংস্থার বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করছেন। 

নেওয়াজ হাসান জানান, প্রায় ৬ ঘণ্টা পর তিনি যখন তার ৬ বছর বয়সী বড় ছেলেকে স্কুল থেকে এনে গাড়ির পিছনের দরজা খুললেন তখনই তিনি দেখতে পেলেন তার ছোট ছেলে সেখানে প্রাণহীন পড়ে আছে।

নেওয়াজ তার ছেলেকে দ্রুত কাছের দোকানে নিয়ে গিয়ে সিপিআর করে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়নি। আরিক আগেই মারা গিয়েছিল।

তিনি সাক্ষাৎকারে বলেন, 'আমি এখনো জানি না এটি কীভাবে হয়েছিল। আমার মাথায় কিছুই ছিল না। আমি বিভ্রান্ত ছিলাম না। আমি শুধু ভুলে গিয়েছিলাম।'

কিডসেফের মতে, অস্ট্রেলিয়ায় প্রতি বছর ৫ হাজারেরও বেশি শিশুকে উত্তপ্ত গাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়।

তবে দীর্ঘ সময় উত্তপ্ত গাড়িতে আটকে থাকার পর শিশুকে মৃত অবস্থায় উদ্ধারের উদাহরণ অস্ট্রেলিয়াতে খুব বেশি নেই। তাই গোটা অস্ট্রেলিয়া জুড়ে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আরিকের মৃত্যু নিয়ে এত আলোচনা। 

শিশু নিরাপত্তার আইনজীবী সংস্থা কিডসেফ বলেছে, গাড়িতে শিশুদের অযত্নে রেখে যাওয়া, এমনকি অল্প সময়ের জন্যও মারাত্মক হতে পারে।

শিশুদের শরীর প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় ৩ থেকে ৫ গুণ দ্রুত গরম হয়। শিশু যত ছোট তারা তত বেশি দুর্বল হয়। 

২৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের দিনে একটি গাড়ির ভেতরে তাপমাত্রা মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যে ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছাতে পারে।

এটি 'গুরুতর আঘাত' এবং মস্তিষ্কের ক্ষতির কারণ হতে পারে।

২০ মিনিটের পর তাপমাত্রা ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছায় যা মৃত্যুর কারণ হতে পারে। গাড়ি ছায়ায় পার্কিং করা মূল তাপমাত্রাকে প্রভাবিত করে না।

নিউ সাউথ ওয়েলস পুলিশ নেওয়াজ হাসানকে অভিযুক্ত করেনি। তবে মর্মান্তিক ঘটনাটির তদন্ত চলছে।

 

আকিদুল ইসলাম: অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী লেখক, সাংবাদিক

 

 

Comments

The Daily Star  | English

Dhanmondi’s dining delights

In the 1990s, Dhanmondi was just another quiet neighborhood in Dhaka, with the occasional tinny tinkle of rickshaws on Satmasjid Road. If you craved something to renew your taste buds, Bailey Road, Gulshan, or Banani were the places to go.

13h ago