অস্ট্রেলিয়ায় কমেছে বিদ্যুৎ-গ্যাসের দাম

অস্ট্রেলিয়ার একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র। ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশে দফায় দফায় বাড়ছে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম। জ্বালানি সংকট এখন দেশের অন্যতম প্রধান সমস্যা। জ্বালানি বিলের উচ্চমূল্য পরিশোধ করতে হিমশিম খাচ্ছে দেশের মানুষ।

অন্যদিকে দেশের মন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন দলের নীতি নির্ধারকরা বলছেন, 'সবকিছু ঠিক আছে'। জ্বালানির সমস্যা চূড়ান্ত থাকলেও সেটাকে সাময়িক বলে প্রচার করছেন তারা।

দেশের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী নিয়মিত আমেরিকা, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার উদাহরণ দিয়ে দেশের সাধারণ মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করছেন যে, সেসব দেশেও রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের ফলে জ্বালানির মূল্য বেড়েছে।

যুদ্ধ সাময়িকভাবে বৈশ্বিক জ্বালানি সংকটে প্রভাব ফেললেও তা কাটিয়ে উঠেছে অধিকাংশ দেশ। তারা কেবলমাত্র জ্বালানির মূল্য নিয়ন্ত্রণই নয় তা কমিয়েও এনেছে কয়েক গুণ। বাংলাদেশে গত এক বছরে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বাড়ানো হয়েছে কয়েকবার। দাম কমানোর কোনো লক্ষণ নেই। আরও ভয়াবহ সংকট এগিয়ে আসছে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

কয়েকদিন আগে একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে ক্ষমতাসীন দলের একজন নেতা বলেন, অস্ট্রেলিয়াতেও জ্বালানির দাম বাড়ছে। কয়েক মাস আগে দেশের একজন মন্ত্রীও অস্ট্রেলিয়ার বিদ্যুৎ নিয়ে কিছু তথ্য দিয়েছিলেন যা পুরোপুরি সঠিক নয়।

অস্ট্রেলিয়াতে জ্বালানির দাম আগের থেকে অনেক কমেছে। সরকার জ্বালানি খাতে অনুদান দিয়ে জনগণকে স্বস্তি দিয়েছে।

গত কয়েক সপ্তাহ আগে অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্য সরকার এই প্রতিবেদককে জানান, রাজ্য জুড়ে সরকার বিদ্যুৎ বিলের খরচ কমানোর জন্য বিভিন্ন ছাড় দিয়ে সহায়তা করবে। যে পরিবারগুলো 'ফ্যামিলি ট্যাক্স বেনিফিট' পায় তারা পারিবারিক জ্বালানি সহায়তার মাধ্যমে ১৮০ ডলার পর্যন্ত বিদ্যুৎ সাশ্রয় করতে পারবে।

অস্ট্রেলিয়ার জ্বালানিমন্ত্রী ক্রিস বোয়েন বলেছেন, 'জ্বালানি কোম্পানির কাজ মুনাফা অর্জন করা, এটা আমাদের কাজ নয়। আমাদের কাজ জাতীয় স্বার্থে কাজ করা। আমাদের কাজ দেশের চারপাশের কারখানা এবং পরিবারগুলোকে রক্ষা করা।'

ফেডারেল সরকারের বিদ্যুতের দাম কমানোর লক্ষ্যে নেওয়া একটি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রাক্কালে মন্ত্রী দুঃখ করে বলেছেন, 'গ্যাসের এবং বিদ্যুতের চড়া দামের মুখে ব্যবহারকারীদের টিকে থাকতে অনেক অসুবিধা হচ্ছে।'

ক্রমবর্ধমান জ্বালানির দাম কমানোর পরিকল্পনার অংশ হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় মন্ত্রিসভা ১২ মাসের জন্য ১২ ডলার প্রতি গিগাজুল এবং কয়লা প্রতি টন ১২৫ ডলারে সীমাবদ্ধ রাখতে সম্মত হয়েছে।

সরকার জ্বালানি বিল ত্রাণ ব্যবস্থার জন্য ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার অনুদান দেবে। এই অর্থ রাজ্য ও সরকার সরবরাহ করবে।

জ্বালানিমন্ত্রী ক্রিস বোয়েন গ্যাস ও কয়লার দাম নির্ধারিত করার সরকারি পরিকল্পনার পর বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর সমালোচনাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন।

জ্বালানিমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেছেন, অস্ট্রেলিয়ার মাটির নীচে গ্যাস আছে। অস্ট্রেলিয়ানদের ন্যায্য অধিকার আছে তা কম দামে পাওয়ার। তাদের যুদ্ধকালীন মূল্য পরিশোধ করা উচিত নয়। কোম্পানিগুলো খুব বেশি লাভ করলে তাতে দেশের চারপাশের শিল্পগুলো বিপন্ন হবে।

সরকারের পরিকল্পনা ঘোষণার পর থেকে বিদ্যুতের দাম কমেছে।

সরকার জ্বালানি মূল্য নিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনা ঘোষণা করার আগের এবং পরের পাইকারি দামের তুলনা করেছে।

দেখা গেছে, কুইন্সল্যান্ডের খুচরা বিক্রেতারা গত বছরের ৩০ নভেম্বরের তুলনায় এখন প্রতি মেগাওয়াট ঘণ্টায় ৪৪ শতাংশ কম প্রদান করছে। বিদ্যুতের দাম নিউ সাউথ ওয়েলসে ৩৮ শতাংশ, দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ায় ৩২ শতাংশ এবং ভিক্টোরিয়ায় ২৯ শতাংশ কমেছে।

সরকার বলছে, পরিবারগুলোকে আগের তুলনায় এখন ২৩০ ডলার কম দিতে হবে। আয় সহায়তা এবং অন্যান্য সামাজিক নিরাপত্তা প্রদানের পাশাপাশি ছোট ব্যবসার জন্য জ্বালানি বিলের উপর ছাড় দেওয়া হবে।

খুচরা জ্বালানি বিক্রেতা, ফেডারেল সরকার এবং রাজ্য ও অঞ্চলের নেতাদের মধ্যে চুক্তির অধীনে একটি বাধ্যতামূলক আচরণবিধি আছে। ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে জ্বালানি কোম্পানিগুলোর সামাজিক লাইসেন্স আছে।

ভোক্তা ওয়াচডগকে নতুন পরিকল্পনার অধীনে নজরদারি করার এবং খুচরা বিক্রেতাদের নিয়ন্ত্রণ করার জন্য অতিরিক্ত ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

আকিদুল ইসলাম: অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী লেখক, সাংবাদিক

Comments

The Daily Star  | English

Fire breaks out at 11-storey building’s rooftop in Paltan

Eight fire engines are working at the Sabbir Tower to bring the blaze under control, said Rakibul Hasan, duty officer of control room at Fire Service and Civil Defence Headquarters.

7m ago