মালয়েশিয়ায় অবৈধ অভিবাসী কর্মীদের বৈধতা কার্যক্রম শুরু

কুয়ালালামপুর সিটি সেন্টার। ছবি: রয়টার্স

মালয়েশিয়ায় পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী অবৈধ অভিবাসী কর্মীদের বৈধ হওয়ার কার্যক্রম আবার শুরু হয়েছে।

আজ শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া নতুন বৈধতা প্রক্রিয়া চলবে পুরো বছর। এ কর্মসূচিতে দেশটিতে থাকা অবৈধ বাংলাদেশি কর্মীও বৈধ হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন।

বাংলাদেশিদের সহজ প্রক্রিয়ায় বৈধ করার বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছেন মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ।

বর্তমানে মালেশিয়ায় মোট কতজন অনথিভুক্ত বা অবৈধ বাংলাদেশি রয়েছেন তার নির্দিষ্ট কোনো হিসাব নেই। তবে, সে সংখ্যা আড়াই লাখেরও বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে।

গত ১০ জানুয়ারি দেশটির মন্ত্রীপরিষদ বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম, অবৈধ অভিবাসীদের রিক্যালিব্রেশন প্ল্যান ২.০ বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেন। সেদিনই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুশন ইসমাইল চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত অনথিভুক্ত অভিবাসী কর্মীদের বৈধকরণ কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন।

১৮ জানুয়ারি দেশটির ইমিগ্রেশন মহাপরিচালক খায়রুল জাইমি দাউদের বিবৃতিতে দেওয়া সময়সূচি অনুযায়ী আজ শুক্রবার থেকে বৈধতা কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

যে ৮টি খাতে নিয়োগের মাধ্যমে অভিবাসী কর্মীদের বৈধতার অনুমতি দেওয়া হয়েছে সেগুলো হলো- উৎপাদন, নির্মাণ, খনি ও খনন, নিরাপত্তা রক্ষী, সেবা, কৃষি, বাগান ও বিদেশি গৃহকর্মী। এসব খাতে বৈধতার জন্য কর্মীর বয়স ১৮ থেকে ৪৯ বছর হতে হবে।

কালো তালিকায় থাকা অভিবাসীরা এ সুযোগ পাবেন না বলে ইমিগ্রেশন বিভাগের বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

মালয়েশিয়ান নিয়োগকর্তারা ইমিগ্রেশন বিভাগ থেকে অ্যাপয়েন্টমেন্টের তারিখ পাওয়ার আগে https://imigresen online.imi.gov.my/myimms/main- অনলাইনেও আবেদন করতে পারবেন।

অনুমোদন প্রক্রিয়া শেষ হতে মাত্র ১দিন সময় লাগবে। একবার সম্পূর্ণ হলে নিয়োগকর্তারা তাদের বিদেশি কর্মীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ফরেন ওয়ার্কার্স মেডিক্যাল এক্সামিনেশন মনিটরিং এজেন্সির (ফমিমা) মাধ্যমে নিতে হবে, যেখানে তারা সুস্থ এবং তাদের নিজ নিজ সেক্টরে কাজ করতে সক্ষম এমন বিবৃতি থাকবে।

পরবর্তী প্রক্রিয়াটি হবে পুননির্মাণ ফি, ভিসা, অস্থায়ী কাজের ভিজিট পাস (পিএলকেস), প্রক্রিয়াকরণ ফি এবং শুল্ক প্রদান। যখন সব নথি সম্পূর্ণ হবে তখন নিয়োগকর্তারা পিএলকেস মুদ্রণ করতে পারবেন।

এক্ষেত্রে রিক্যালিব্রেশন ফি (জরিমানা) নির্ধারণ করা হয়েছে, দেড় হাজার রিঙ্গিত। এ ছাড়া উত্পাদন, নির্মাণ, খনি ও খনন, নিরাপত্তা প্রহরী ও পরিষেবা খাতে ১ হাজার ৮৫০ রিঙ্গিত এবং বৃক্ষরোপণ ও কৃষি খাতে ৬৪০ রিঙ্গিত লেভী দিতে হবে। এর সঙ্গে পিএলকেস ৬০ রিঙ্গিত ও প্রসেস ১২৫ রিঙ্গিত এবং মেডিকেল ও অন্যান্য খরচসহ মোট সরকারি খরচ সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৫৩৫ রিঙ্গিত।

দেড় হাজার রিঙ্গিত রিক্যালিব্রেশন ফি কমানো বা বিলুপ্ত করার কোনো পরিকল্পনা নেই বলে জানিয়েছে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশন এ বৈধতা প্রক্রিয়ার জন্য কোনো ব্যক্তি বা সংস্থাকে এজেন্ট বা মধ্যস্থতাকারী হিসেবে নিয়োগ দেয়নি। কাজেই এ ব্যাপার অভিবাসী কর্মীদের সর্তক ও সচেতন থাকার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

এর আগের রিক্যালিব্রেশন প্রোগ্রামের অধীনে মালয়েশিয়ায় ৪ লাখ ১৮ হাজার ৬৪৯ জন বিদেশি কর্মী কাজের জন্য নিবন্ধিত হয়েছিলেন। এ নিবন্ধনের মেয়াদ ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ছিল।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এ বছরের ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত, ইমিগ্রেশন বিভাগ ১৪ লাখ ৮৪ হাজার ৬৭৭ বিদেশি কর্মীকে অস্থায়ী কাজের ভিজিট পাস দিয়েছে, যার মধ্যে বাংলাদেশের ৪ লাখ ৪৬ হাজার ২২৯ জন, ইন্দোনেশিয়ার ৩ লাখ ৯৯ হাজার ৮২৭ জন, নেপালের ২ লাখ ৮৫ হাজার ৭৬৮ জন, মিয়ানমারের ১ লাখ ৩৫ হাজার ৫৯০ জন এবং ভারতের ৮১ হাজার ২ জন।

গত ২৫ জানুয়ারি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুশন ইসমাইলের সঙ্গে বৈঠকে অনথিভুক্ত বাংলাদেশিদের সহজ প্রক্রিয়ায় বৈধ করার বিষয়ে অনুরোধ জানান বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. গোলাম সারোয়ার। বিষয়টি সহানভূতির সঙ্গে বিবেচনার আশ্বাস দেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

লেখক:মালয়েশিয়াপ্রবাসী সাংবাদিক

Comments

The Daily Star  | English
Reforms vs election

Reforms vs election: A distracting debate

Those who place the election above reforms undervalue the vital need for the latter.

8h ago