বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী বিজ্ঞানীর তালিকায় মালয়েশিয়া প্রবাসী এম এ হান্নান

ড. এম এ হান্নান ইউনিভার্সিটি তেনাগা মালয়েশিয়ার (ইউনিটেন) বৈদ্যুতিক প্রকৌশলে বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক। ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী বিজ্ঞানীদের একজন হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন মালয়েশিয়া প্রবাসী বাংলাদেশি গবেষক অধ্যাপক ড. এম এ হান্নান।

নবায়নযোগ্য শক্তি নিয়ে উল্লেখযোগ্য গবেষণার ওপর ভিত্তি করে এই স্বীকৃতি দিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক বিশ্বখ্যাত অ্যানালিটিক্স প্রতিষ্ঠান 'ক্লারিভেট'।

ড. এম এ হান্নান ইউনিভার্সিটি তেনাগা মালয়েশিয়ার (ইউনিটেন) বৈদ্যুতিক প্রকৌশলে বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক।

এক বিবৃতিতে ইউনিটেন জানায়, ৬৯টি দেশের গবেষকরা এই স্বীকৃতি পান। তাদের মধ্যে একজন এম এ হান্নান। মালয়েশিয়া থেকে কেবল তিনিই এবারের স্বীকৃতি তালিকায় আছেন।

বিবৃতিতে আরও জানানো হয়, ২০১১ সাল থেকে ২০২১ পর্যন্ত ১১ বছরে ড. এম এ হান্নানের গবেষণার ওপর ভিত্তি করে এই স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এম এ হান্নান ধারাবাহিকভাবে ওয়েব অব সায়েন্স ইনডেক্সে ৭ হাজার ৯১১টি উদ্ধৃতিসহ ২৫৫টি নিবন্ধ প্রকাশ করেছেন।

ইউনিটেনের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. নূর আজুয়ান আবু ওসমান বলেন, 'এই সাফল্য ইউনিটেনকে বৈজ্ঞানিক গবেষণার উৎকর্ষতায় বৈশ্বিক মঞ্চে এনেছে।'

অধ্যাপক ড. এম এ হান্নানের এ অর্জনের খবর মালয়েশিয়ার জাতীয় সংবাদ সংস্থা বার্নামাসহ শীর্ষস্থানীয় সবকয়টি সংবাদমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার করেছে। এ নিয়ে মালয়েশিয়ান ও প্রবাসী বাংলাদেশিরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন। 

ড. এম এ হান্নান ১৯৯০ সালে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তড়িৎ এবং ইলেকট্রনিক প্রকৌশলে স্নাতক করেন। এমএসসি ও পিএইচডি করেন ইউনিভার্সিটি কেবাংসান মালয়েশিয়া (ইউকেএম) থেকে।

ড. এম এ হান্নানের ২৮ বছরেরও বেশি শিল্প ও একাডেমিক অভিজ্ঞতা রয়েছে। এ ছাড়া, আন্তর্জাতিক জার্নাল এবং সম্মেলনের কার্যক্রমে প্রকাশিত ৪০০টিরও বেশি নিবন্ধের লেখক বা সহ-লেখক তিনি।

ড. এম এ হান্নানের গবেষণার আগ্রহের মধ্যে রয়েছে বৈদ্যুতিক এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য সমন্বিত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বুদ্ধিমত্তা ব্যবস্থার বিকাশে ব্যবহারমূলক গবেষণায় দক্ষ ও টেকসই ব্যবস্থা অর্জন এবং ভবিষ্যতের জ্বালানির প্রয়োজনে কম কার্বন প্রযুক্তি অর্জন এবং শক্তি ও বিদ্যুৎ খাতে নেট-জিরো লক্ষ্য অর্জনে স্থিতি।

এ ছাড়াও, উচ্চশিক্ষায় উপযুক্ত শেখার পদ্ধতি নিশ্চিত করার জন্য একাডেমিক এবং শিল্প গবেষণা প্রযুক্তিকে শিক্ষণ ও শেখার প্রক্রিয়ায় রূপান্তরিত করার সঙ্গে জড়িত ড. এম এ হান্নান।

দিনাজপুরের বিরল উপজেলার বহলা গ্রামের মোহাম্মদ হোসেন (মৃত) ও হালিমা হোসেনের ছেলে ড. এম এ হান্নান। তার সহধর্মিণী ড. রওশন আরা বেগম পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন অর্থনীতিবিদ। তিনি মালয়েশিয়ার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও জাপানের কুমামোটো বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ছিলেন। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার সিডনি ম্যাককুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে কাজ করছেন। একমাত্র মেয়ে নাহলা ইফতেশাম হান্নান সেখানে চিকিৎসা বিজ্ঞানে অধ্যয়নরত।   

অনুভূতি জানাতে গিয়ে ড. এম এ হান্নান বলেন, 'একজন উচ্চ উদ্ধৃত গবেষকের স্বীকৃতি মহান সম্মানের। এটি অবশ্যই আমাকে ও আমার বিশ্ববিদ্যালয়কে আরও অনেক বেশি স্বীকৃতি দেবে, মনোবল বাড়াবে। আশা করি আমার দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং বাংলাদেশকেও গর্বিত করবে।'

তিনি বলেন, 'আমার আকাঙ্ক্ষা হলো গবেষণা পরিচালনা, উচ্চমানের প্রশিক্ষণ এবং মিশনের নেতৃত্ব প্রদান, যার লক্ষ্য গবেষণার অখণ্ডতা, শ্রেষ্ঠত্ব, এবং আর্থ-সামাজিক শক্তি পরিবর্তন, চ্যাম্পিয়নশিপ এবং বিশ্বব্যাপী অবস্থান অর্জনের দিকে প্রভাবের একটি শক্তিশালী সংস্কৃতি রচিত করা।'

নতুন এবং উদীয়মান গবেষক-বিজ্ঞানীদের জন্য ড. এম এ হান্নানের উপদেশ, মানুষের মনের কৌতূহলই হলো সর্বোত্তম গবেষণার হাতিয়ার। তাই কৌতূহল এবং সহজাত প্রবৃত্তির উদ্রেককারী প্রশ্নগুলো অনুসরণের পরামর্শ থাকবে। এতে সাফল্য-স্বীকৃতি সবই ধরা দেবে। সেই সঙ্গে পরিশ্রম,  সততা, সহযোগিতা এবং সহকর্মীদের প্রতি সম্মানের সঙ্গে আচরণেও সচেতন থাকতে হবে।

লেখক: মালয়েশিয়া প্রবাসী সাংবাদিক

Comments

The Daily Star  | English

Yunus in Rome to attend Pope Francis' funeral

The chief adviser is visiting the Vatican to attend Pope Francis' funeral

1h ago