অস্ট্রেলিয়ায় ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের ভূমিকা

অস্ট্রেলিয়ার সাংবিধানিক প্রধান রাজা তৃতীয় চার্লস। ছবি: সংগৃহীত

অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে পৌঁছে ১৭৭০ সালে ব্রিটিশ রাজার পক্ষে সেই অঞ্চলের দখল নেন ক্যাপ্টেন জেমস কুক। অবশ্য এর ১৬৪ বছর আগেই সেখানে পৌঁছেছিলেন ওলন্দাজরা।

মূলত ক্যাপ্টেন কুক আসার পরেই অস্ট্রেলিয়ায় ব্রিটিশ উপনিবেশ স্থাপনের কাজ শুরু হয়। সেই সময় স্থানীয়দের জমি কেড়ে নেওয়া হয়, অনেকেরই প্রাণ যায়। ক্রমেই তারা জমি, নাগরিকত্ব, সমান মর্যাদার অধিকার থেকে বঞ্চিত হন।

১৭৮৮ সালের ২৬ জানুয়ারি সিডনি কোভে 'ইউনিয়ন জ্যাক' উত্তোলন অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ব্রিটিশ সার্বভৌমত্বের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা।

এর ১১৩ বছর পর ১৯০১ সালে অস্ট্রেলিয়া নিজস্ব সংবিধান রচনার মধ্য দিয়ে সার্বভৌম জাতিরাষ্ট্র হিসেবে আবির্ভূত হয়, প্রচলন করে নিজস্ব আইন ও সরকার ব্যবস্থা।

গ্রেট ব্রিটেনের অন্যতম উপনিবেশ হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার গোড়া পত্তন হওয়ার কারণে ব্রিটিশ সরকার ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন ঐতিহ্য অস্ট্রেলিয়ায় প্রচলিত রয়েছে। রাজতন্ত্র সেই ঐতিহ্যের মধ্যে অন্যতম।

১৯৫২ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে এলিজাবেথ আলেকজান্ড্রা মেরি উইন্ডসর যুক্তরাজ্য ও ১৪টি কমনওয়েলথভুক্ত অঞ্চলের রানি হিসেবে রাজত্ব করেছেন ৭০ বছর।

তার মৃত্যুর পর ছেলে চার্লস রাজা হিসেবে স্থলাভিষিক্ত হলেন। তিনি তৃতীয় চার্লস হিসেবে তার রাজত্ব শুরু করেছেন।

রাজা হিসেবে চার্লস অস্ট্রেলিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান, যা সাংবিধানিকভাবে একটি দেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতাশীল ব্যক্তি।

রাজা ব্রিটিশ সশস্ত্র বাহিনীর নেতৃত্বের ভূমিকায় কাজ করেন এবং সেখানে আইন প্রণয়নে রাজকীয় সম্মতি প্রদান করেন। অস্ট্রেলিয়ায় রাজার প্রতিনিধি হিসেবে গভর্নর জেনারেল সেই ভূমিকাগুলো পালন করেন।

অস্ট্রেলিয়া সরকারের পরামর্শ অনুযায়ী ব্রিটেনের রানি বা রাজা গভর্নর জেনারেল নিয়োগ করেন। যেহেতু রাষ্ট্রপ্রধান অস্ট্রেলিয়ার বাইরে থাকেন, তাই তিনি প্রতিনিধি হিসেবে অন্য কাউকে মনোনীত করেন। ব্রিটিশ রাজ পরিবারের প্রতিনিধি হিসেবে গভর্নর জেনারেল দেশটির নির্বাচিত সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

অস্ট্রেলিয়ায় রাজার প্রতিনিধি গভর্নর জেনারেল ক্যানবেরায় থেকে তার দায়িত্ব পালন করছেন। তার অধীনস্থ গভর্নররা প্রত্যেক রাজ্যের রাজধানীতে অবস্থান করে প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডে তাকে সহযোগিতা করে থাকেন।

অস্ট্রেলিয়ান রিপাবলিক মুভমেন্টের ন্যাশনাল ডিরেক্টর স্যাণ্ডি বায়ার বলেন, 'সরকার পরিচালনায় গভর্নর জেনারেলের সরাসরি ভূমিকা না থাকলেও তার ওপর গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব ন্যস্ত রয়েছে। রাজ পরিবারের এই প্রতিনিধির সম্মতি ছাড়া সংসদে কোনো আইন পাস হতে পারে না। এমনকি জাতীয় নির্বাচনও হতে পারে না।'

সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের সিনিয়র লেকচারার ডক্টর সিন্ডি ম্যাকক্রিরি বলেন, 'তার ভূমিকা বেশিরভাগই আনুষ্ঠানিক।'

১৭ শতকের শেষ পর্যন্ত ব্রিটিশ রাজারা আজকের তুলনায় অনেক বেশি ক্ষমতাশীল ছিলেন। তখন রাজা বা রানি নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন। ব্রিটিশ রাজপরিবার গত ৩০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে একটি সাংবিধানিক রাজতন্ত্র ব্যবস্থার মধ্যে কাজ করেছে। আগের মতো তারা আর নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারী নন।

এখন যুক্তরাজ্যের রাজা বা রানি সাধারণত প্রতি বছর পার্লামেন্ট অধিবেশন শুরু করেন এবং সিংহাসন থেকে একটি বক্তৃতা দেন। সেই ভাষণটিও তার লেখা নয়। ভাষণটি রাজার জন্য প্রধানমন্ত্রী লেখেন। অস্ট্রেলিয়ায় এই কাজটি করেন রাজতন্ত্রের প্রতিনিধি গভর্নর জেনারেল।

আকিদুল ইসলাম: অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী লেখক, সাংবাদিক

Comments

The Daily Star  | English

Hamza scores on home debut as Bangladesh beat Bhutan 2-0

Bangladesh's star midfielder Hamza Choudhury found the net as the men in red and green secured a 2-0 win over Bhutan in a FIFA friendly at the National Stadium in Dhaka on Wednesday. 

39m ago