উচ্চশিক্ষার জন্য কেন বেছে নেবেন অস্ট্রেলিয়া

ইলাস্ট্রেশন: এহসানুর রাজা রনি

বিদেশে পড়ালেখার জন্য ইন্টারন্যাশনাল শিক্ষার্থীদের কাছে পছন্দের তালিকায় থাকা দেশগুলোর মধ্যে অস্ট্রেলিয়া অন্যতম। শর্তের নমনীয়তা, অনুকূল জলবায়ু, বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতিসহ নানা কারণে শিক্ষার্থীরা অস্ট্রেলিয়াকে নিজের স্বপ্ন পূরণের জন্য উপযুক্ত মনে করছে। এ ছাড়া, বিভিন্ন স্কলারশিপের হাতছানি তো আছেই। 

চলুন জেনে নিই বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য অস্ট্রেলিয়া কেন অন্য দেশগুলোর চেয়ে এগিয়ে। 

শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন ও গবেষণা সুযোগ

'গ্রুপ অব এইট'-খ্যাত বিশ্বের নামকরা গবেষণাভিত্তিক আটটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান অস্ট্রেলিয়ায়। অত্যাধুনিক সুবিধা ও গবেষণার জন্য পরিচিতি ছাড়াও উদ্ভাবনী দক্ষতার জন্য বিশ্বসেরা র‍্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকে এখানকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। প্রতিবারের মতো ২০২৩ সালেও কিউএস ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র‍্যাঙ্কিংয়ে জায়গা করে নিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব সিডনি (৪১), মোনাশ ইউনিভার্সিটি (৫৭), ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া (৯০), ইউনিভার্সিটি অব অ্যাডিলেইড (১০৯)। তাই গবেষণায় আগ্রহী শিক্ষার্থীদের কাছে অস্ট্রেলিয়া হতে পারে পছন্দসই দেশগুলোর একটি। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি পেশাদার গবেষকদের জন্যও অস্ট্রেলিয়ায় রয়েছে অবারিত সুযোগ। পিএইচডি, পোস্ট-ডক্টরাল ডিগ্রি অর্জনের ক্ষেত্রেও প্রচুর ফান্ড দেয় অস্ট্রেলিয়া। তবে এখানে পড়তে গেলে প্রয়োজন পড়বে প্রতিযোগিতা ও যোগ্যতার লড়াইয়ে এগিয়ে থাকার মতো সামর্থ্য, শক্তিশালী একাডেমিক ট্র্যাক রেকর্ড। 

মর্যাদাপূর্ণ ডিগ্রি

অস্ট্রেলিয়া উদ্ভাবনী বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষার জন্য খ্যাতি অর্জন করেছে বহু আগে। অস্ট্রেলিয়ান ডিগ্রি বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি পাওয়ায় অস্ট্রেলিয়া শিক্ষার্থীদের পছন্দের দেশ হওয়ার ক্ষেত্রে আরেকটি কারণ। অস্ট্রেলিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সাইবার সিকিউরিটি, ব্যবসা, হিসাববিজ্ঞানের মতো অন্যান্য ক্ষেত্রেও এগিয়ে রয়েছে। এ ছাড়াও, অস্ট্রেলিয়ান কোয়ালিফিকেশন ফ্রেমওয়ার্ক (একিউএফ) শিক্ষায় মানসম্মত ও স্বীকৃত অগ্রগতি নিশ্চিত করে। এই কাঠামো পঠিত বিষয়ে প্রাপ্ত ডিগ্রির আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির নিশ্চয়তা দেয়। অস্ট্রেলিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ এবং অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবহারিক প্রশিক্ষণের ওপর বেশি নজর দেওয়ায় শিক্ষার্থীদের উন্নত ক্যারিয়ারের সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন হয়। যা অস্ট্রেলিয়ার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে যেমন অবদান রাখছে, তেমনি ইন্টারন্যাশনাল শিক্ষার্থীদের অধ্যয়নে সুযোগও সৃষ্টি করছে। 

খণ্ডকালীন কাজের সুযোগ

নিজেদের দক্ষতা বৃদ্ধি, জীবনমান উন্নয়ন, বাড়তি অর্থ উপার্জনের জন্য অস্ট্রেলিয়ায় অধ্যয়নরত ইন্টারন্যাশনাল শিক্ষার্থীরা খণ্ডকালীন চাকরি করার সুযোগ পায়। এতে পরিবারের ওপর আর্থিক চাপও অনেকাংশে কমে। অস্ট্রেলিয়া সরকার ইন্টারন্যাশনাল শিক্ষার্থীদের স্টুডেন্ট ভিসা ৮১০৪ বা ৮১০৫ শর্ত অনুসরণে পড়াশোনা চলাকালীন প্রতি সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা পর্যন্ত খণ্ডকালীন কাজ করার অনুমতি দেয়। আর সেমিস্টার ব্রেকে পূর্ণকালীন চাকরি করা যায় এখানে। অস্ট্রেলিয়া সমৃদ্ধিশীল পর্যটন ও আতিথেয়তার জন্য জনপ্রিয় হওয়ায় হোটেল, রেস্তোরাঁ, ক্যাফেতে কর্মীর প্রয়োজন হয়। যেখানে শিক্ষার্থীরাই বেশি কাজ করে থাকে। এখানে গ্রীষ্মকালীন ছুটি বা অন্যান্য ছুটি ছাড়াও গ্রীষ্মকালীন সেমিস্টার বাধ্যতামূলক না হওয়ায় কাজের অনুমতি থাকলে শিক্ষার্থীরা সেই সময়ে পূর্ণকালীন চাকরি করতে পারে। 

স্থায়ী বসবাসের সুবিধা 

ইন্টারন্যাশনাল শিক্ষার্থীদের পঠিত বেশিরভাগ ডিগ্রি বা কোর্স অস্ট্রেলিয়ায় স্থায়ী বসবাস বা পিআর এর জন্য উপযুক্ত হয়ে থাকে। এসব ডিগ্রি বা কোর্সগুলো মূলত স্বল্পমেয়াদী দক্ষতা পেশার তালিকা (এসটিএসওএল) এবং মাঝারি ও দীর্ঘমেয়াদী কৌশলগত দক্ষতা তালিকা (এমটিএসএসএল)-তে থাকায় কাজের সুযোগ তৈরি করে। পড়াশোনা শেষে অস্ট্রেলিয়ার শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পাওয়াও সহজ হয়। তারপর প্রয়োজনীয় অনুমতির শর্ত পূরণ করলে ইন্টারন্যাশনাল শিক্ষার্থীরা অস্ট্রেলিয়ায় স্থায়ী বসবাসের জন্য আবেদন করতে পারে এবং কোনো অতিরিক্ত ঝামেলা ছাড়াই সেখানে থাকার সুবিধা গ্রহণ করতে পারে।

জলবায়ু ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য

অস্ট্রেলিয়ায় বছরব্যাপী নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু থাকায় বসবাসের অনুকূল পরিবেশ পাওয়া যায়। এখানকার আবহাওয়ায় থাকে গ্রীষ্মের উষ্ণতা, হালকা শীতের আমেজ, রৌদ্রময় সূর্যের আভা। সমুদ্র সৈকত থেকে মাঠ প্রান্তর সব জায়গায় মনোরম পরিবেশের দেখা পাওয়া যায় অস্ট্রেলিয়ায়। এখানে পড়তে আসলে বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির অভিজ্ঞতায় সুখস্মৃতির বাস্তব ছবির সঙ্গে মেলবন্ধন ঘটতে পারে। এখানকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিরাপদ পরিবেশ ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের ঐশ্বর্য লালন করায় শিক্ষার্থীরা নতুন দেশে মানিয়ে নেওয়ার সাহস পায়। দক্ষ শিক্ষকদের ছায়াতলে শিক্ষার্থীরা আত্মমর্যাদার নিশানাও খুঁজে পায়। 

তবে বিদেশে পড়ালেখার জন্য অস্ট্রেলিয়া বা অন্যান্য যেকোনো দেশকে বেছে নেওয়ার আগে আপনার একাডেমিক যোগ্যতা, পছন্দের কোর্সে আসন সংখ্যা, অন্য পরিবেশে খাপ খাইয়ে নেওয়ার ক্ষমতা, ভাষাগত দক্ষতা, যোগাযোগের চ্যালেঞ্জ ইত্যাদি বিষয় মনে রাখা জরুরি। এজন্য রাত জেগে শুধু স্বপ্ন দেখলেই হবে না। স্বপ্ন পূরণ করার জন্য সব বাধাকে পেছনে ফেলার ক্ষমতাও অর্জন করতে হবে, তবেই আঁধার শেষে আলোর দেখা পাবেন। 
 

Comments

The Daily Star  | English
conflict over security responsibilities at Dhaka airport

Dhaka airport: APBn at odds with aviation force over security duties

A conflict has emerged between the Aviation Security Force (AVSEC) and the Airport Armed Police Battalion (APBn) over security responsibilities at Hazrat Shahjalal International Airport (HSIA). APBn claims that AVSEC took control of their office on October 28, hindering their ability to perform duties effectively

1h ago