সিডনি অপেরা হাউসে ভারতীয় পতাকা, বাংলাদেশের পতাকাও দেখতে চান প্রবাসীরা

ছবি: সংগৃহীত

ভারতের স্বাধীনতার ৭৫তম বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে অস্ট্রেলিয়ার সিডনি অপেরা হাউসের পালগুলো ভারতীয় জাতীয় পতাকার রঙে আবৃত করা হয়।

নিউ সাউথ ওয়েলসের প্রিমিয়ার ডমিনিক পেরোটেট এবং বহুসংস্কৃতির মন্ত্রী মার্ক কোরে ভারতের স্বাধীনতা বার্ষিকীকে স্মরণীয় করে রাখতে কমলা, সাদা ও সবুজ রঙে আইকনিক সিডনি ল্যান্ডমার্কের আলোকসজ্জাকে স্বাগত জানিয়েছেন।

প্রিমিয়ার বলেছেন, 'ভারত আমাদের ভালো বন্ধু এবং আমরা দেখতে পাচ্ছি আমাদের সম্পর্ক আরও দৃঢ় থেকে শক্তিশালী হচ্ছে। আমাদের বন্ধুত্ব দীর্ঘদিনের মূল্যবোধ এবং পারস্পরিক স্বার্থের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে।'

বহুসংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী মার্ক কৌর বলেছেন, 'আমরা আজ রাতে সেই বন্ধুত্ব উদযাপন করব এবং ভারতের জন্য এই ঐতিহাসিক উপলক্ষকে স্বীকৃতি দিয়ে একসঙ্গে কাজ করার জন্য আমাদের নতুন প্রতিশ্রুতি পালন করব।'

মন্ত্রী আরও বলেছেন, 'এটিই আমাদের বহুসংস্কৃতির সমাজের বিকাশের উপায়।  আমাদের রাষ্ট্রের জনগণের উদারতার কারণে বহুসংস্কৃতির এই দেশে প্রতিটি দেশের মর্যাদা সমুন্নত রাখতে আমরা বদ্ধ পরিকর।'

অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের গভীর সম্পর্ক প্রায় ৫০ বছরের। স্বাধীনতার পর পাশ্চাত্য এবং উন্নত দেশগুলোর মধ্যে অস্ট্রেলিয়াই প্রথম বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কও খুব গভীর। বাংলাদেশের নানা সংকটে ও দুর্যোগে সবার আগে পাশে দাঁড়ায় অস্ট্রেলিয়া। 

অথচ বাংলাদেশের বিজয় দিবস কিংবা স্বাধীনতা দিবসে গত ৫০ বছরে কখনোই তাদের আইকনে তা প্রতিফলিত না হওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন প্রবাসীরা। 

বিশেষ করে এবারে ভারতের স্বাধীনতা দিবসে সে দেশের পতাকা অপেরা হাউজের পালগুলোতে শোভা পেলে বাংলাদেশের বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় আসে। 

এ ব্যাপারে অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে একজন কাউন্সিলর জানান, গত বছর আমরা বিজয় দিবসের প্রাক্কালে উদ্যোগ নিয়েছিলাম। আমাদের সিডনি কন্স্যুলেট অফিস সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগও করেছিলেন কিন্তু মহামারির কারণে তা সম্ভব হয়নি। এ বছর আমরা আবার চেষ্টা করব।' মহামারির সময় ছাড়া গত ৫০ বছরে আর কখনো কি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল? এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, 'আমার জানা মতে আরও কয়েকবার নেওয়া হয়েছিল।' 

কেন্টারবুড়ি- ব্যাংক্সটাউন সিটি কাউন্সিলের কাউন্সিলর সাজেদা আক্তার সানজিদা এ ব্যাপারে দ্য ডাইলি স্টারকে বলেন, 'এটা আমাদের সবার ব্যর্থতা। এখানে যেমন হাইকমিশনের দায় রয়েছে, তেমনি দায় রয়েছে কমিউনিটির নেতাদেরও। আশা করছি আমরা সম্মিলিতভাবে উদ্যোগ নিয়ে আগামী ১৬ ডিসেম্বর আমাদের প্রিয় পতাকা অপেরা হাউজে শোভিত করতে পারব।' 

বিডি হাব, সিডনির সভাপতি আব্দুল খান রতন বলেন, 'ব্যক্তি কিংবা কমিউনিটির উদ্যোগে এমন বৃহত্তর কাজ সম্ভব নয়। এ ছাড়া কর্তৃপক্ষও অনুমতি দেবে না। এ ব্যাপারে হাইকমিশনকেই এগিয়ে আসতে হবে। দুঃখজনক হলেও সত্য, হাইকমিশন বাংলাদেশি বিচ্ছিন্ন একটি প্রতিষ্ঠান। কমিউনিটির সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। কখনোই তারা কমিউনিটির সংগঠকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন না। অপেরা হাউজে ভারতীয় পতাকা শোভিত হবার পর আশা করি তাদের বোধদয় হবে।'

অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বীর মুক্তিযোদ্ধা হেলালউদ্দিন দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, 'অবশ্যই এই ব্যর্থতা আমাদের দেশের কূটনৈতিক অদূরদর্শিতার। গত ৫০ বছরেও কেউ এমন উদ্যোগ নেয়নি এটি সত্যি হতাশাজনক।' 

আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন সংস্থা টেলিওজের সিইও জাহাঙ্গীর আলম বলেন, 'এটি আসলে খুবই হতাশাজনক। আমাদের কূটনৈতিক কর্মকর্তাদের যথাযত দেশপ্রেমের অভাব রয়েছে। তা নাহলে আজ স্বাধীনতার ৫০ বছরেরও বেশি হয়ে গেলো এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের জাতীয় কোনো দিবসে বাংলাদেশের পতাকার রঙে অপেরা হাউজ সাজানো হয়নি। আমার মনে হয় অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা এটা নিয়ে কখনো চিন্তাও করেনি।'

প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধা এনায়েতুর রহীম জানান, একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমার দাবি, ১৬ ডিসেম্বর যেন আমাদের গৌরবের পতাকাটি অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম আইকনে দেখতে পাই। 

অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশ জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আব্দুল মতিন তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, 'সিডনির অপেরা হাউস হচ্ছে সারা বিশ্বের অন্যতম পর্যটন আইকন। শুধু ভারতের স্বাধীনতা দিবসেই অপেরা হাউসের পালগুলো ভারতের পতাকায় রঙিন করা হয় না, অন্যন্য দেশের স্বাধীনতা দিবস ও বিশেষ বিশেষ দিবসেও পালগুলো রঙিন করা হয়। আর এর জন্য ভূমিকা রাখছে সেসব দেশের হাইকমিশন। কিন্তু বাংলাদেশ হাই কমিশন এই বিষয়ে ব্যর্থ।'

গত ২৬ মার্চ অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেন এবং এডেলাইডে স্থানীয় বাংলাদেশি কমিউনিটির প্রচেষ্টায় সেখানের প্রধান ব্রিজ এবং কয়েকটি সরকারি স্থাপনায় বাংলাদেশি পতাকা আবৃত করা হয়েছিল। এ ছাড়া ক্যানবেয়ায় হাইকমিশনের উদ্যোগে কমনওয়েলথ ব্রিজের দুই পাশে বাংলাদেশি পতাকা উত্তোলন করা হয় এবং কয়েকটি সরকারি স্থাপনায় লাল সবুজের রঙে আলোকসজ্জা করা হয়। 

 

আকিদুল ইসলাম: অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী লেখক, সাংবাদিক

 

Comments

The Daily Star  | English

Neighbours’ support over Rohingya crisis remains minimal: foreign adviser

'During the last eight years, the amount of or the level of support that we expected from our neighbours has not been forthcoming'

1h ago