মাঝরাতে অক্সিজেন শেষ ‘অন্য হাসপাতালে যান’, রোগীর মৃত্যু
সিলেটের সোবহানীঘাট এলাকায় বেসরকারি সিলেট কমিউনিটি বেজড হাসপাতালের করোনাভাইরাস বিশেষায়িত অংশে গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে ভর্তি ছিলেন ৫৪ জন রোগী। তাদের মধ্যে ১৯ জন ছিলেন আইসিইউতে। রাত ১২টা থেকে হঠাৎ অক্সিজেনের চাপ কমতে থাকে। রাত আড়াইটায় অক্সিজেন শেষ হওয়ার ঘণ্টাখানেক আগে রোগীদেরকে হাসপাতাল ছেড়ে অন্য হাসপাতালে যেতে বলে কমিউনিটি বেজড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
পরে, অ্যাম্বুলেন্স জোগাড় করে আইসিইউয়ের ১১ জন ও সাধারণ শয্যার দুই জন রোগী হাসপাতাল ছেড়ে যান। কিন্তু, অন্য হাসপাতালে গিয়ে ভর্তির আগেই মারা যান কাঞ্চন বেগম নামে এক রোগী।
কাঞ্চন বেগমের মেয়ে বাবলী বেগম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘তারা হঠাৎ করেই জানায় অক্সিজেন শেষ। অন্য হাসপাতালে যেতে হবে। আমার মায়ের শারীরিক অবস্থা খুব খারাপ ছিল। তাই, তাড়াহুড়ো করে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাই। কিন্তু, সেখানে ভর্তির আগেই তিনি মারা যান।’
এ ঘটনায় পরিবারের সবাই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে এবং কেউ লিখিত অভিযোগ দেওয়ার অবস্থায় নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাদের সঙ্গে যা করেছে, আমরা তার বিচার চাই।’
ওসমানী হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুলেন্সে কাঞ্চন বেগমের মরদেহ নিয়ে থেকে আবার কমিউনিটি বেজড হাসপাতালে ফিরে এলে তার স্বজনদের আহাজারির একটি ভিডিও ফেসবুকে আপলোড করেন আরেক রোগীর স্বজন। পরে, বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা শুরু হয়।
একই হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি ছিলেন মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলা থেকে আসা রোগী স্বপ্না বেগম।
তার ছেলে মইন উদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘সে রাতে আমার কাজিন হাসপাতালে ছিল। রাত ১২টার দিকে সে জানায় অক্সিজেন ফ্লো কমতে শুরু করেছে। কর্তব্যরত চিকিৎসরা তাকে জানান যে লাইনে একটু সমস্যা হচ্ছে বোধহয়, ঠিক হয়ে যাবে।’
তিনি বলেন, ‘এরপর রাত ২টার দিকেও এর সমাধান হয়নি। রিসিপশনে থাকা কেউ এর কারণ জানাতে না পারলে, আমি তখন হাসপাতালে যাই। তখন হাসপাতালের ম্যানেজার এসে বলেন যে অক্সিজেনের সংকট দেখা দিয়েছে, ৩টার দিকে শেষ হয়ে যাবে। এর মধ্যে রোগীদের অন্যত্র নিয়ে যেতে বলেন তিনি।’
‘আমরা তখনই অ্যাম্বুলেন্সের খোঁজ করতে থাকি এবং আড়াইটার দিকে অক্সিজেন শেষ হয়ে যায়। তখন, অক্সিজেনের অভাবে রোগীরা কাতরাতে থাকেন এবং আইসিইউ নরকে পরিণত হয়। আমি মাকে নিয়ে দ্রুত সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছে সাধারণ শয্যায় ভর্তি করি।’
‘হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তাদের কাছে কোনো বিকল্প ব্যবস্থা ছিল না। এমনকি, সংকট হতে পারে বিষয়টি বোঝার পরও তারা রোগীদের আগে সতর্ক করেনি বরং একদম শেষ সময়ে করেছে। এক্ষেত্রে, আরও অনেক রোগীর মৃত্যু হতে পারত।’
দেরিতে রোগীদের অক্সিজেন সংকট সম্পর্কে জানানোর বিষয়টি অস্বীকার করে হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. তারেক আজাদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘তিনটি অক্সিজেন যোগানদাতা কোম্পানি থেকে আমরা অক্সিজেন নেই। কিন্তু, মহাসড়কে যানজটের কারণে সেদিন অক্সিজেনের সাপ্লাই সময়মতো পৌঁছায়নি। তাই সংকট হতে পারে ধরে নিয়ে আমরা রাত ১২টার দিকেই রোগীদের জানাই অন্য হাসপাতালে যেতে।’
তিনি বলেন, ‘যেহেতু ক্যাজুয়ালিটি ঘটেছে, তাই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। কিন্তু, আমাদের সেবা দেওয়ার এতদিনেও আমাদের হাসপাতালে কোন রোগীর মৃত্যু হয়নি। তাছাড়া, রোগীরা চলে যাওয়ার সময় আমরা বকেয়া বিল পরিশোধে চাপও দেইনি। এই রোগীদের কাছে আমাদের ছয় লাখেরও বেশি টাকা বকেয়া আছে।’
যোগাযোগ করা হলে সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. প্রেমানন্দ মণ্ডল দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তিনি বিষয়টি সম্পর্কে জানেন না।
Comments