ভালোবাসা আছে সঙ্গতি নেই

ছবি: প্রবীর দাশ/স্টার

দুদিন বেশ উৎকণ্ঠায় কেটেছে রিয়ার। রাজধানীর পুরান ঢাকার বাসিন্দা তিনি। তার সন্তানসম্ভবা পোষা বিড়ালটি হঠাৎ করেই হারিয়ে গিয়েছিল। গত সোমবার সকালে নিজে নিজে ঘরে ফিরে এলেও তার মাথায় আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়। বাসার পাশেই কেন্দ্রীয় ভেটেরিনারি হাসপাতালে বিড়ালটিকে নিয়ে যান তিনি।

ছবি: প্রবীর দাশ/স্টার

শুধু রিয়া নন, তার মতো আরও অনেকেই প্রতিদিন পোষা প্রাণীর চিকিৎসার জন্যে ছুটে আসেন এই হাসপাতালে। কর্তৃপক্ষের নিবন্ধন অনুযায়ী, সেখানে প্রতিদিন ১৫০ থেকে ২০০ প্রাণীর চিকিৎসা দেওয়া হয়। এর বাইরে আরও অর্ধশতাধিক প্রাণীকে ফলোআপ চিকিৎসার জন্যে আনা হয়।

গত সোমবার সকাল ১১টার দিকে কেন্দ্রীয় ভেটেরিনারি হাসপাতালে পৌঁছালে দেখা যায়, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে পোষা কুকুর, বেড়াল, খরগোশ, পাখি নিয়ে ভিড় জমিয়েছেন অনেকে। অনেকে আবার গরু, গাভী, ভেড়া, ছাগল নিয়েও এসেছিলেন।

তবে হাসপাতালে চিকিৎসক সংকটের কারণে অনেককেই দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়। পশু চিকিৎসা সময়সাপেক্ষ হওয়ায় সাধারণভাবেই সেবা গ্রহণকারীদের অনেক সময় লাগে।

এ নিয়ে ক্ষোভ জানান বাসাবো থেকে আসা নাজমুল আলম। পোষা কুকুর নিয়ে এসেছিলেন তিনি। দ্য ডেইলি স্টারকে নাজমুল বলেন, 'এতো বড় হাসপাতাল কিন্তু ডাক্তার নেই। এ কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে।'

একই কথা জানালেন এলিফ্যান্ট রোড থেকে আসা সুপ্রভা তানিন। পোষা বিড়াল নিয়ে এসেছিলেন তিনি। ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এখানকার চিকিৎসকরা ভালো। কিন্তু, তাদেরকে পাওয়া যায় না। তাদের জন্য অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়। তারা সবসময়ই রোগী নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। এ কারণে বাইরের একজন চিকিৎসক দেখাই। কিন্তু, এখন তিনি দেশের বাইরে থাকায় বাধ্য হয়ে এখানে এসেছি।'

চিকিৎসকদের কক্ষে তাকালে এ কথার সত্যতা মেলে। ব্যস্ততার মধ্যেই কথা হলো হাসপাতালের ভেটেরিনারি সার্জন ডা. মো. আসাদুজ্জামানের সঙ্গে। ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'প্রতিদিন ১৫০ থেকে ২০০ কেস আমাদের কাছে আসে। আমরা অল্প কয়েকজন চিকিৎসক মিলে সেবা দেওয়ার চেষ্টা করি। আমাদের এখানে চিকিৎসক বাড়ানো এখন সময়ের দাবি।'

কেন্দ্রীয় ভেটেরিনারি হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, এখানে বিসিএস ক্যাডার হিসেবে ৬ ও নন-ক্যাডারে আরও ৮ চিকিৎসকের পদ রয়েছে। ২ ক্ষেত্রেই এখন চিকিৎসক রয়েছেন ২ জন করে। ফাঁকা রয়েছে ১০ পদ। এর বাইরে ডেপুটিশনে আছেন আরও ৩ চিকিৎসক।

শুধু চিকিৎসকই নয় সংকট রয়েছে টেকনিশিয়ান পদেও। এখানে ১৪ জনের বদলে কাজ করছেন ৭ জন।

হাসপাতালে আসা রোগীদের পাশাপাশি ভিআইপি কলেও যেতে হয় এখানকার চিকিৎসকদের। তারা বঙ্গভবন, গণভবনে যেসব পশুপাখি রয়েছে সেগুলোরও চিকিৎসা করেন। এর বাইরে রাজারবাগ পুলিশ হর্স ইউনিট, র‌্যাবের ডগ স্কোয়াড ইউনিটেরও দায়িত্ব পালন করেন এখানকার চিকিৎসকরা।

চিকিৎসা নিতে আসা পশুদের জন্যে এখানে রয়েছে অত্যাধুনিক ডিজিটাল এক্স-রে, আল্ট্রাসনোগ্রাফি, প্রাথমিক অস্ত্রোপচার ও প্যাথলজিক্যাল ল্যাব। এর বাইরে সম্প্রতি স্থাপন করা হয়েছে এনডোসকপি মেশিনও। তবে নভেম্বরের শুরু থেকেই ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন অকেজো হয়ে আছে।

এ দিকে, কেন্দ্রীয় ভেটেরিনারি হাসপাতাল ভবনটিও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের এক কর্মী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ভবনটি পাকিস্তান আমলে নির্মাণ করা হয়েছে। এখন এটি ঝুঁকিপূর্ণ। বৃষ্টি এলে ভেতরে পানি পড়ে।'

হাসপাতালের মূল গেটের পাশেই গবাদি পশুর চিকিৎসা দেওয়া হয়। সেখানকার একটি শেডের নিচে চিকিৎসা চলে।

সম্পূর্ণ কেন্দ্রীয় একটি পশু হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্পের জন্য ৩ বছর আগে মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রণালয়ে আবেদন পাঠানো হয়েছিল। তবে সে প্রকল্পটি বাতিল হয়ে গেছে। নতুন করে ভবন নির্মাণের জন্যে আরেকটি প্রকল্পও হাতে নেওয়া হচ্ছে।

কর্তৃপক্ষ যা বলছে

এখানে পশুদের চিকিৎসা নিতে যারা আসছেন তাদের অভিযোগ স্বীকার করে নেন কেন্দ্রীয় ভেটেরিনারি হাসপাতালের পরিচালক ডা. সাইফুল আহাদ সরদার।

চিকিৎসক সংকটের বিষয়ে ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'আমরা অর্ধেক জনবল নিয়ে হাসপাতাল চালাচ্ছি। চিকিৎসকরা অমানবিক পরিশ্রম করছেন। বিষয়টি প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরকে জানিয়েছি। তারা ফাঁকা পদ পূরণের আশ্বাস দিয়েছেন। তবে এখনো কোনো অগ্রগতি হয়নি।'

এক্স-রে মেশিন নষ্টের বিষয়ে তিনি বলেন, 'মেশিনটি নভেম্বরের শুরুর দিকে নষ্ট হয়েছে। সেটি এখন অকেজো হয়ে আছে। সরকারি প্রতিষ্ঠান হওয়ায় আমরা চাইলেই এটি পরিবর্তন করতে পারছি না। কারণ, এটি ঠিক করতে ২৫ হাজার টাকার বেশি খরচ হবে। এ কারণে আমাদের টেন্ডার ডাকতে হবে। টেন্ডার ডাকার আরও ২০ থেকে ২১ দিন পর মেশিনটি ঠিক করতে পারবো।'

নতুন ভবন নির্মাণের প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, 'আগের প্রকল্পটি বাতিল হয়েছে। আমরা উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত ভেটেরিনারি হাসপাতাল নির্মাণের জন্যে নতুন প্রকল্প হাতে নিচ্ছি।'

Comments

The Daily Star  | English

Fire at secretariat: Documents of 5 ministries, divisions burned

Documents of at least five ministries and divisions have been burned as fires ravaged part of Building-7 of the Secretariat for almost 10 hours.

14h ago