চাহিদা বাড়ছে প্যাকেটজাত মহিষের মাংসের
ভোজ্যতেল, জ্বালানি তেল, গ্যাস, বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বেড়েই চলেছে নিত্যপণ্যের দাম। ২ বছর আগেও গরুর মাংসের কেজি ৫০০ টাকায় বিক্রি হতো। তবে বর্তমানে মাংস কিনতে গুনতে হচ্ছে ৬৮০ থেকে ৭০০ টাকা।
গরুর মাংসের দাম নাগালের বাইরে চলে যাওয়ায় অনেকেই ঝুঁকছেন মহিষের মাংসের দিকে। বাড়ছে ভারত থেকে আমদানিকৃত প্যাকেটজাত হিমায়িত মহিষের মাংসের চাহিদা।
রাজধানীর কাওরান বাজারের মাংসের দোকানগুলো ঘুরে দেখা গেছে, গরুর মাংসের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা দামে। অন্যদিকে হিমায়িত মহিষের মাংস বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ৫০০ থেকে ৫২০ টাকা দামে। ভারত থেকে আমদানি করা এই হিমায়িত মহিষ মাংসের ৩ কেজির প্যাকেট বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৫৬০ টাকার মধ্যে।
কাওরান বাজারের কয়েকজন মাংস ব্যবসায়ী জানান, বেশ কিছু হোটেল-রেস্টুরেন্ট নিয়মিতভাবে হিমায়িত মহিষের মাংস নেন। কারণ, এসব মাংসে কোনো হাড় বা চর্বি থাকে না।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, আগে মহিষের মাংসের কেজি বিক্রি হতো ৪৮০ টাকা করে। সম্প্রতি চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এখন দাম বেড়ে ৫০০ থেকে ৫২০ টাকা হয়েছে। কাবাবের জন্য মহিষের মাংস বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকা কেজিতে। এই মাংস হালাল এবং খেতেও সুস্বাদু।
রাজধানীর সুপারশপগুলোতেও প্যাকেটজাত হিমায়িত মহিষের মাংস বিক্রি হচ্ছে। রাজধানীর একটি সুপারশপের একজন কর্মী পরিচয় গোপন রাখার শর্তে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা প্রতিদিনই মহিষের মাংসের অর্ডার পাচ্ছি। ৩ কেজির প্যাকেট আগে আমরা ১ হাজার ৪৪০ টাকা দরে বিক্রি করতাম। এখন দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রতি প্যাকেট ১ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আমরা হোম ডেলিভারিও করে থাকি।'
এ দিকে, রাজধানীর কয়েকটি হোটেল-রেস্টুরেন্টে গরুর মাংসের নামে গ্রাহকদের মহিষের মাংস পরিবেশনেরও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
কিছু অসাধু ব্যবসায়ী প্যাকেটজাত এই মহিষের মাংসের সঙ্গে গরুর মাংস মিশিয়ে গরুর মাংস হিসেবেই বিক্রি করছেন।
যদিও দেশের কসাইরা মহিষ কিনে সেগুলো জবাই করে মাংস বিক্রি করতে গেলে তার দাম পরে অনেক বেশি। গাবতলী এলাকার একজন কসাই জানান, এভাবে মহিষের মাংস বিক্রি করতে গেলে দাম পরবে কেজিপ্রতি অন্তত ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা।
গত শুক্রবার রাজধানীর কাওরান বাজারের দোকান ঘুরে দেখা যায়, গরুর মাংসের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা দামে। তবে, কখনো কখনো বিক্রেতারা ফ্রিজে রাখা গরুর মাংস কম দামে বিক্রি করেন বলে জানান।
সাধারণত সন্ধ্যার দিকে যেসব ক্রেতা মাংস কিনতে দোকানে যান তাদের সঙ্গে মাংস নিয়ে দামাদামির এক পর্যায়ে বিক্রেতারা ফ্রিজে রাখা ঠাণ্ডা মাংস কম দামে বিক্রির প্রস্তাব দেন।
এক বিক্রেতা বলেন, 'সকালে গরু জবাই করার পরে কিছু মাংস ফ্রিজে রেখে দিয়েছিলাম। সেগুলো কম দামে দিতে পারি।'
এরপর কিছু কমে, ৬০০ টাকা কেজিতে গরুর মাংসের সঙ্গে হিমায়িত মহিষের মাংস মিলিয়ে বিক্রি করেন তিনি।
বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল আলম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গরুর মাংসের দাম বাড়ায় এর সঙ্গে মহিষের মাংস মেশানো হয়। এটা জেনে নিলে তো সমস্যা নেই।'
তিনি আরও বলেন, 'তবে, অনেকে মাংস মিশিয়ে ফ্রিজে রেখে দেন, এটা প্রতারণা। আমরা এর প্রতিবাদ জানাই। এই কাজ চলতে থাকলে টাটকা মাংস বিক্রি বাধাগ্রস্ত হবে।'
'৩ বছর ধরে প্যাকেটের মাংস দেশে আসছে। এই মাংস আসার পরিমাণ বেড়েছে। এভাবে চলতে থাকলে দেশের মাংস ব্যবসায়ীদের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে,' যোগ করেন তিনি।
Comments