আমদানিতে কমছে চালের দাম

ছবি: সংগৃহীত

সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানির অনুমোদন দেওয়ার পর থেকেই বাজারে কমছে চালের দাম।

সর্বশেষ বোরো মৌসুমে বাম্পার ফলন হওয়া সত্ত্বেও চালের দাম বেড়েই যাচ্ছিল। মহামারির কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক মন্দায় যা বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে সাধারণ মানুষের ওপর। চালের দামে ঊর্ধ্বগতির ওপর লাগাম টানতে সরকার আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়।

দিনাজপুরের একটি পাইকারি বাজারে গত সপ্তাহে প্রতি কেজি মোটা চালের দাম ছিল ৪৪ টাকা। গত বৃহস্পতিবারে একই বাজারে একই চাল বিক্রি হয়েছে ৩৮ টাকা কেজি দরে।

তবে রাজধানীতে একই জাতের চালের দাম এখন ৪২ থেকে ৪৪ টাকা কেজি। এক সপ্তাহ আগে যা ছিল ৪৮ টাকা।

বাজারগুলোতে চিকন চালের দামও প্রতি কেজিতে এক থেকে দুই টাকা পর্যন্ত কমেছে।

খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্র এ সম্পর্কিত নথির বরাত দিয়ে জানান, এ পর্যন্ত সরকার ৩৪৯টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে ১৫ দশমিক ৯২ লাখ টন চাল আমদানি করার অনুমতি দিয়েছে।

এই আমদানিকারকদের ২৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে চাল আমদানি করে তা বাজারে বিক্রি করতে হবে।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা আশাবাদী যে, দাম আরও কমে আসবে। আমরা আমন মৌসুমে ধান কাটার আগেই আমদানি প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেব, যাতে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।'

এ বছর বোরো মৌসুমে ধানের বাম্পার ফলন পেয়েছেন কৃষক। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী আনুমানিক প্রায় দুই কোটি টনেরও বেশি ধান কাটা হয়েছে বোরো মৌসুমে। তবুও চালের দাম কমেনি।

বোরো মৌসুমের আগে সরকারের মজুত সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছানোর নতুন রেকর্ড তৈরি হয়। এর ফলশ্রুতিতে প্রতি কেজি মোটা চালের দাম বেড়ে ৫২ টাকা হয়ে যায়।

সরকার স্থানীয় বাজার থেকে নয় দশমিক ৩২ টন বোরো ও তিন দশমিক ৫০ লাখ টন অন্যান্য জাতের চাল সংগ্রহ করে মজুত বাড়ালেও বাজারে দাম আর কমেনি।

গত ২৪ আগস্ট পর্যন্ত সরকারের হাতে সর্বমোট খাদ্য মজুত ছিল ১৭ দশমিক ২৫ লাখ টন। এর মধ্যে ১৪ দশমিক নয় লাখ টন চাল এবং বাকিটা ধান, গম ও আটা।

গত বছর আগস্টের শেষ নাগাদ সর্বমোট খাদ্য মজুত ছিল ১৩ দশমিক ১৪ লাখ টন, যার মধ্যে নয় দশমিক ৮৫ লাখ টন চাল ছিল।

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে অবস্থিত বরিশাল রাইস এজেন্সির মালিক আনোয়ার হোসেন জানান, গুটি স্বর্ণা চাল তার দোকানে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছিল। গত বৃহস্পতিবারে এর দাম কমে ৪৬ টাকা কেজি হয়েছে।

দিনাজপুরের জুয়েল রাইস ট্রেডার্সের মালিক আনিসুর রহমান জুয়েল জানান, স্থানীয় বাজারে ৫০ কেজি ওজনের এক বস্তা চালের দাম এক হাজার ৯০০ টাকা।

তিনি বলেন, 'অর্থাৎ এক কেজি চালের দাম পড়ছে ৩৮ টাকা। একই জাতের চাল এক মাস আগে ৪৪ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছিল।'

তিনি জানান, পাইকারি বাজারে উন্নতমানের চাল নাজিরশাইল প্রতি কেজি ৫৪ টাকা থেকে ৫৬ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, চালের দাম প্রতি কেজিতে এক থেকে দুই টাকা করে কমেছে।

বিশেষজ্ঞরা জানান, সরকারের হাতে ইতোমধ্যে মাঝারি আকারের মজুত আছে এবং মিল মালিক ও ব্যবসায়ীদের কাছেও চালের ভালো মজুত আছে। বেসরকারি আমদানিকারকরা চালের দাম আরও কমিয়ে আনবেন।

বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) সাবেক গবেষণা পরিচালক ড. এম আসাদুজ্জামান বলেন, 'আমরা ইতোমধ্যে বাজারে চাল আমদানির প্রভাব দেখতে পেয়েছি। বাজারে আমদানিকৃত চাল আসলে দাম আরও কমবে।'

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, 'যদি বর্তমানে অনুমোদিত আমদানিকারকরা অনুমতি পাওয়া সত্ত্বেও চাল আমদানি করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে আমরা অন্যান্যদের আমদানি করার অনুমতি দেব।'

মন্ত্রণালয়ের সূত্ররা জানিয়েছে, ভারত ও থাইল্যান্ড থেকে চাল আমদানি করা হলে দাম পড়ে যথাক্রমে ৩২ দশমিক ৪৯ টাকা ও ৩৮ দশমিক ১০ টাকা।

তত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম শওকত আলী জানান, দেখা যাচ্ছে আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দাম স্থানীয় বাজারের চেয়ে কম।

চাল আমদানি করা হলে তা ব্যবসায়ীদের জন্য সুবিধাজনক হবে। এতে কৃষকের কোনো উপকার হবে না। সরকারকে এই বিষয়টির ওপর নজর দিতে হবে বলে জানান তিনি।

শওকত আলী বলেন, 'আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে দেশে চাল উৎপাদনের খরচ অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশি। এ কারণে সরকারের উচিত কৃষকদের ভর্তুকি দেওয়া। এ ধরণের উদ্যোগ না নেওয়া হলে স্থানীয় কৃষক ও ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষা হবে না।'

 

অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments

The Daily Star  | English
British Bangladeshi Labour Party lawmaker and  minister Tulip Siddiq

Tulip seeks meeting with Yunus over corruption allegations, The Guardian reports

Tulip, in a letter to the chief adviser, asked for a chance to discuss the ongoing controversy during his trip to London

9m ago