রেমাক্রীতে ডায়রিয়ার প্রকোপ, ২ জনের মৃত্যু
বান্দরবানের থানচি উপজেলার দুর্গম পাহাড়ি এলাকা রেমাক্রীতে ডায়রিয়ার প্রকোপে এ পর্যন্ত ২ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং অন্তত ৬০ জন আক্রান্ত বলে জানিয়েছেন থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা।
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, 'আমরা খবর পেয়েছি ৪ জন মারা গেছেন। তবে থানচি স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে তাদের মধ্যে দুই জনের নাম জানা গেছে। এ ছাড়া কয়েকটি পাড়া মিলে ৬০ জনের মতো ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী আছে বলে জেনেছি। এলাকাটি মোবাইল নেটওয়ার্কের বাইরে এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত খারাপ হওয়ায় সেখানকার স্থানীয়দের দ্রুত স্বাস্থ্যসেবা থেকে শুরু করে কোনো দুর্ঘটনা হলে সঠিক তথ্য পাওয়া মুশকিল। তবুও আমরা নিয়মিত তথ্য সংগ্রহ করছি বিভিন্ন উপায়ে।'
নিহতরা হলেন-- মেনথাং পাড়ার বাসিন্দা কারবারি মেনথাং ম্রো (৪৮) ও লংঙান পাড়ার বাসিন্দা লংগ্রি ম্রো (৫০)। বাকি দুই জনের নাম পরিচয় পাওয়া যায়নি বলে জানান তিনি।
ওয়াহিদুজ্জামান আরও বলেন, 'মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকা এবং খুবই দুর্গম এলাকা হওয়ায় ঠিকমতো খবর পাওয়া যাচ্ছে না। তারপরও স্বাস্থ্য বিভাগ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বিজিবি সদস্যরা ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণে সমন্বয় করে কাজ করে যাচ্ছেন। প্রয়োজনীয় ওষুধ দিয়ে শনিবার স্বাস্থ্য বিভাগের একটি দল দুর্গত এলাকায় পাঠানো হয়েছে।'
থানচি উপজেলার ১নং রেমাক্রী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়্যারম্যান মুই শৈ থুই মারমা বলেন,'থানচি উপজেলার সবচেয়ে দুর্গম এলাকা রেমাক্রী ইউনিয়ন। একমাত্র নৌপথেই উপজেলা সদর থেকে সেখানে যাওয়া যায়। ইঞ্জিনচালিত ছোট নৌকায় মিয়ানমার সীমান্তবতী এলাকা বড়মদক বাজারে পৌঁছাতে সময় লাগে ৪ থেকে ৬ ঘণ্টা। নৌকায় বড়মদক থেকে আরও এক ঘণ্টার দূরত্বে ডায়রিয়া আক্রান্তদের পাড়ায় যেতে হয়। তাছাড়া বর্ষা মৌসুমে ওই এলাকা অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় আক্রান্তদের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।'
রেমাক্রী ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মাংচং ম্রোর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'ইউনিয়নের কয়েকটি পাড়ায় ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়েছে। এর মধ্যে তার ওয়ার্ডের ৬টি ম্রো জনগোষ্ঠীর পাড়া আছে। পাড়াগুলো হল য়ংনং পাড়া, সিংচং পাড়া, পাকতোয়া পাড়া, নারেশা লংঙান পাড়া, মেনথাং পাড়া ও নেপিউ পাড়া। ডায়রিয়া আক্রান্ত অন্য আরেকটি পাড়া হলো ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ক্রাহ্লাঅং মারমা পাড়া।'
তিনি আরও বলেন, 'আক্রান্তদের মধ্যে ৪ জন মারা গেছেন। তাদের মধ্যে ৩ জন হলেন- মেনথাং পাড়ার বাসিন্দা কারবারি মেনথাং ম্রো (৪৮), লংঙান পাড়ার বাসিন্দা লংগ্রি ম্রো (৫০), য়ংনং পাড়ার বাসিন্দা ক্রায়ং ম্রো (৬০)। আরেক জনের নাম জানা যায়নি।
তবে জেলা সিভিল সার্জন নীহাররঞ্জন নন্দী সাংবাদিকদের বলেন, 'আক্রান্তদের মধ্যে দুই জন মারা গেছেন। যেহেতু আমরা দুই জনের নাম পেয়েছি। পর্যাপ্ত ওষুধপত্র, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও খাবার স্যালাইন নিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের তিন-চারটি দল দুর্গত এলাকায় পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া সেখানকার বিজিবির সদস্যরাও কাজ করে যাচ্ছেন। এসব এলাকায় মূলত দুর্গমতার কারণে কাজ করতে একটু কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। তাছাড়া এখন আবার বৃষ্টিও শুরু হচ্ছে।'
সিভিল সার্জন আরও বলেন, 'ডায়রিয়া আক্রান্ত পাড়াগুলো এমন দুর্গম এলাকায় যে সেখানকার খবর পেতেও অনেক দেরি হয়। কোনো কোনো পাড়ায় খুব বেশি পরিবারও থাকে না। এক পাড়া থেকে আরেক পাড়ায় গিয়ে সেবা দিতেও অনেক সময় চলে যায়। তারপরও জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।'
ডায়রিয়ায় আক্রান্তদের এলাকা থেকে ফিরে রেমাক্রী ইউপি চেয়ারম্যান মুইশৈথুই মারমা বলেন, 'সেখানকার বাসিন্দারা ডায়রিয়ার পাশপাশি ম্যালেরিয়ায়ও ভুগছেন। বিষয়টি উপজেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগকে জানানো হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগেও ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণে আনতে সাধ্যমতো চেষ্টা করা হচ্ছে।'
একটি পাড়া নিয়ন্ত্রণে আসার পর অন্য আরেকটি পাড়ার মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে বলেও জানান চেয়ারম্যান।
তিনি আরও বলেন, 'পাহাড়ে বড় বড় গাছ নিধনের ফলে সেখানকার ছোট ছোট ঝিড়ি-ঝর্ণা গুলো মারা যাচ্ছে এবং গাছের ডাল-পাতা, বাকল পচে বৃষ্টির পানির সাথে ভেসে আসছে, সে কারণে বর্ষার শুরুতে সেই পানি পান করতেই ডায়েরিয়ার মতো পানিবাহিত রোগগুলো ছড়িয়ে পড়ছে দূর্গম পাহাড়ের বিভিন্ন গ্রামগুলোতে।'
এই বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ওয়াহিদুজ্জামানের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনিও রেমাক্রী চেয়ারম্যানের সাথে একমত পোষণ করে বলেন, 'এই উপজেলায় দুর্গম এলাকার বাসিন্দারা মূলত খাবার পানির সংকটে ভোগেন এবং ময়লা পানি পান করায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন।'
Comments