বাংলাদেশে এখনো মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়নি: বিএসএমএমইউ

BSMMU logo
ছবি: সংগৃহীত

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত কোনো মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়নি। আজ মঙ্গলবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশে এখনো এই রোগের কোনো রোগী শনাক্ত হয়নি। করোনা মহামারিকে আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যেভাবে মোকাবিলা করেছি, ব্ল্যাক ফাঙ্গাসকে যেমনভাবে বাংলাদেশে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে দেইনি, সে রকমভাবে আমরা মাঙ্কিপক্স ভাইরাসের জন্যও প্রস্তুত আছি। দেশের মানুষকে যে কোনো ধরনের গুজব বা আতঙ্ক এড়িয়ে চলে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মতো এই রোগ থেকেও আমরা জাতিকে নিরাপদ রাখতে পারবো।

তিনি বলেন, গতকাল বিকেলের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঙ্কিপক্সের প্রথম রোগী শনাক্ত হয়েছে এমন একটি পোস্ট ভাইরাল হয়। যা ছিল নিছক একটি গুজব। বিষয়টি প্রথমে আমাদের নজরে আনেন গণমাধ্যমের দায়িত্বশীল কিছু সংবাদকর্মী। এ ঘটনার পরপরই আমরা খোঁজ নেওয়া শুরু করি আসলে কী ঘটেছে। গুজব রোধ এবং গুজব রটনাকারীকে খুঁজে পেতে গণমাধ্যমের কর্মীদের পাশাপাশি ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশনের কাছে মৌখিকভাবে সহযোগিতা চাওয়া হয়। তাদের সহযোগিতায় আমরা জানতে পারি নোয়াখালীর সেনবাগ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সহকারী সার্জন ডা. আসিফ ওয়াহিদ অর্কের বরাতে সংশ্লিষ্ট গুজব পোস্ট হয়। যোগাযোগ করা হলে ডা. আসিফ জানান, এমন কোনো ঘটনা তিনি জানেন না। তিনি এমন পোস্টও করেনি। ডা. আসিফ ওয়াহিদ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউরোলজি বিভাগের নতুন ভর্তিকৃত রেসিডেন্ট হলেও কোনো ক্লাস করেননি। ফলে তাৎক্ষণিকভাবে আমরা তাকে ট্রেস করতে পারিনি। তিনি ৩৯তম বিসিএসের স্বাস্থ্য ক্যাডার। তিনি পরে নিজ ফেসবুকে মাঙ্কিপক্স নিয়ে কোনো স্ট্যাটাস পোস্ট দেননি বলে জানান।

শারফুদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, করোনা মহামারি বিশ্ব থেকে এখনো শেষ হয়নি। এর মধ্যেই বিশ্বে আরও একটি ভাইরাস জেঁকে বসার উপক্রম হয়েছে। সম্প্রতি যুক্তরাজ্য, ইতালি, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, কানাডাসহ ১৪টি দেশে একটি ফুসকুড়িসহ জ্বরের ঘটনা ঘটেছে যা মাঙ্কিপক্স হিসেবে নির্ণয় করা হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মাঙ্কিপক্সকে শনাক্তযোগ্য ও বর্ধনশীল ব্যাধি হিসেবে বর্ণনা করেছে। ইতোমধ্যে সংক্রামক রোগ 'মাঙ্কিপক্স' ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে দেশের প্রতিটি স্থলবন্দর, নৌ-বন্দর এবং বিমানবন্দরে বাড়তি সতর্কতা নিতে বলেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। করেনা মহামারির রেশ কাটার মধ্যে মাঙ্কিপক্স যখন উদ্বেগের নতুন কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে, তখন ভবিষ্যৎ যে কোনো মহামারি মোকাবিলায় বিশ্ববাসীকে একসঙ্গে কাজ করার ওপর জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মাঙ্কিপক্স সংক্রান্ত তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, মাঙ্কিপক্স একটি ডিএনএ ভাইরাস। কাউপক্স, ভ্যাক্সিনিয়া এবং ভ্যারিওলা (স্ম্যালপক্স) এই গ্রুপের ভাইরাস। এটি একটি জুনোটিক ভাইরাস যায় প্রাথমিক সংক্রমণ সংক্রমিত প্রাণীর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে বা সম্ভবত তাদের অপর্যাপ্তভাবে রান্না করা মাংস খাওয়ার মাধ্যমে ঘটে বলে বিশ্বাস করা হয়। জংলী কুকুর, ইঁদুর, খরগোশ, কাঠবিড়ালী, বানর, সজারু। ১৯৫৮ সালে ল্যাবরেটরিতে প্রথম বানরের দেহে এই ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দিয়েছিল বলে ১৯৭০ সালে এর নামকরণ হয় মাঙ্কিপক্স। এই ভাইরাসের দুটি স্ট্রেইন আছে। কঙ্গো বেসিন স্ট্রেন পশ্চিম আফ্রিকার স্ট্রেইনের চেয়ে বেশি মারাত্মক। এই ভাইরাস পশু থেকে প্রাণী এবং পশু থেকে মানুষে সংক্রমিত হয়। মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমণই সবচেয়ে ভয়ঙ্কর মাধ্যম বলে বিবেচিত। ৯০ শতাংশ রোগী ১৫ বছরের কম বয়সী শিশু। গুটি বসন্তের টিকা বন্ধ করা এর একটি কারণ হতে পারে। আফ্রিকাতে ১ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত মৃত্যু হার রিপোর্ট করা হয়েছে। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২০০৩ সালে প্রাদুর্ভাবে কোনো প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। জটিলতার মধ্যে রয়েছে স্থায়ী ক্ষত, বিকৃত দাগ, সেকেন্ডারি ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ, ব্রঙ্কোপনিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, কেরাটাইটিস, কর্নিয়ার আলসারেশন, অন্ধত্ব, সেপ্টিসেমিয়া এবং এনসেফালাইটিস। গুটিবসন্তের টিকা মাঙ্কিপক্স থেকে ৮৫ শতাংশ সুরক্ষা দেয়। ২ সপ্তাহের মধ্যে, সম্ভব হলে ৪ দিনের মধ্যে এটি ব্যবহার করতে হবে। ইনকিউবেশন পিরিয়ড গড়ে ১২ দিন, ৪ থেকে ২১ দিন পর্যন্ত। প্রড্রোম ১ থেকে ১০ দিন স্থায়ী হয়। জ্বরজনিত অসুখের সঙ্গে ঠান্ডা লাগা, ঘাম, প্রচণ্ড মাথাব্যথা, পিঠে ব্যথা, ক্ষুধামন্দা, ফ্যারিঞ্জাইটিস, শ্বাসকষ্ট এবং কাশি হয়ে থাকে।

লিফ্যাডেনোপ্যাথি জ্বরের পরে ২ থেকে ৩ দিনের মধ্যে ঘাড়ের চারদিকে দেখা যায়। ১ থেকে ১০ দিনের মধ্যে ফুসকুড়ি তৈরি হয়। ফুসকুড়ি প্রায়ই মুখে শুরু হয় এবং তারপর শরীরের বাকি অংশে ছড়িয়ে পড়ে। এটি ২ থেকে ৪ সপ্তাহ ধরে চলতে থাকে। এগুলো মুখমণ্ডল, শরীর, হাত-পা এবং মাথার ত্বক জড়িত। হাতের তালু এবং পায়ের পাতায় ক্ষত দেখা যেতে পারে। এগুলো ব্যথাহীন হয়। যদি ব্যথা থাকে তাহলে এটি সেকেন্ডারি ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের কারণে হতে পারে। চুলকানি থাকতে পারে। হেমোরেজিক এবং ফ্ল্যাট ফর্ম, যা গুটিবসন্তের সঙ্গে দেখা যায়। মাঙ্কিপক্সের রোগীদের ক্ষেত্রে এটা দেখা যায় না। এই রোগ সাধারণত সেল্ফ লিমিটেড। আক্রান্ত বা সন্দেহযুক্ত প্রাণীর সংস্পর্শে যাওয়া বন্ধ রাখতে হবে। প্রাণীর কামড়, আঁচড় এবং লালা বা প্রস্রাবের স্পর্শ থেকে বেঁচে থাকা অপরিহার্য। আর আক্রান্ত রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করে সব ক্ষত শুকানো পর্যন্ত আইসোলেশন আর কোয়ারেন্টিন করে চিকিৎসা করা আবশ্যক, বলেন তিনি।

বিএসএমএমইউ উপাচার্য জানান, ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে এফডিএ গুটিবসন্ত বা মাঙ্কিপক্স সংক্রমণের জন্য উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা প্রাপ্ত বয়স্কদের টিকা দেওয়ার জন্য একটি লাইভ, নন-রিপ্লিকেটিং স্মলপক্স এবং মাঙ্কিপক্স ভ্যাকসিন অনুমোদন দিয়েছে। সিডোফোভির মাঙ্কিপক্সের জন্য অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ স্মলপক্স ভ্যাকসিন, মাঙ্কিপক্স ভ্যাকসিন উভয়ই লাইড অ্যাটেনুয়েটেড ভ্যাক্সিনিয়া স্ট্রেন থেকে উদ্ভূত।

Comments

The Daily Star  | English

Teknaf customs in limbo as 19 mt of rice, authorised by AA, reaches port

The consignment of rice weighing 19 metric tonnes arrived at Teknaf land port on Tuesday evening with the documents sealed and signed by the Arakan Army

2h ago