২০ দেশে মাঙ্কিপক্স শনাক্ত, প্রতিরোধে বাংলাদেশ কতটা প্রস্তুত?

ছবি: রয়টার্স

বিশ্বের প্রায় ২০টি দেশে ২০০ জনের বেশি মাঙ্কিপক্স রোগী শনাক্ত হয়েছে। এশিয়ার মধ্যে ইসরায়েল ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে ছড়িয়েছে এই রোগ।

মাঙ্কিপক্স মোকাবিলায় গত রোববার দেশের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরগুলোতে আক্রান্ত দেশ থেকে আসা যাত্রীদের ওপর সজাগ দৃষ্টি রাখা এবং স্ক্রিনিং জোরদার করার নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

মাঙ্কিপক্স প্রতিরোধে বাংলাদেশের নেওয়া উদ্যোগগুলো কি যথেষ্ট তা জানতে দ্য ডেইলি স্টার কথা বলেছে সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক ও আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাবেক আঞ্চলিক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হকের সঙ্গে।

benozir_mozaffor.jpg
ডা. বে-নজির আহমেদ, ডা. মোজাহেরুল হক (বাম থেকে)

তারা দুজনেই বলেছেন বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত যে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে তা যথেষ্ট নয়। এগুলো আরও শক্তিশালী করতে হবে। মাঙ্কিপক্স প্রতিরোধে এই মুহূর্তে বাংলাদেশের করণীয় কী তার কিছু নির্দেশনাও দিয়েছেন তারা।

অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, 'বাংলাদেশে মাঙ্কিপক্স আসার সম্ভাবনা খুব কম। তবে যে প্রস্তুতিগুলো নেওয়া হয়েছে সেগুলো আরেকটু শক্তিশালী করলে মাঙ্কিপক্স প্রতিরোধে যথেষ্ট হবে।'

আপদকালীন কর্মপরিকল্পনা তৈরি করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, 'মাঙ্কিপক্স মোকাবিলায় প্রতিরোধমূলক অ্যাপ্রোচ থাকা উচিত। রোগটি নির্ণয়ের জন্য ৩ থেকে ৪টি এলাকা নির্ধারণ করা উচিত। সেখানে সরকারি বিভিন্ন নির্দেশনা থাকতে হবে। বিমান ও নৌবন্দরে থাকা মেডিকেল কর্মীদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দিতে হবে। মাঙ্কিপক্স শনাক্তের জন্য পর্যাপ্ত ল্যাব প্রস্তুত করা প্রয়োজন। কিছু হাসপাতাল প্রস্তুত রাখতে হবে। সেসব হাসপাতালের ডাক্তার, নার্সসহ অন্যদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে।'

মাঙ্কিপক্স করোনার মতো ছড়ায় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'এটি এশিয়ার ২টি দেশে পাওয়া গেলেও সেই ২টি মূলত বাইর থেকে আসা কেস। কমিউনিটি ট্রান্সমিশন না হওয়া পর্যন্ত এটি নিয়ে তেমন একটা উদ্বেগের কারণ নেই। এশিয়ার দেশগুলোতে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হচ্ছে কি না সেটি খেয়াল রাখতে হবে। আমাদের এখন সতর্কতার জায়গা হলো ইউরোপের বিভিন্ন দেশ। মাঙ্কিপক্স ১৯৫৮ সালেই পাওয়া গেছে। এই সংক্রমণ থেকে বলা যায় এটি বড় আকারে মহামারি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে কিছু দেশ আক্রান্ত হতে পারে।'

তিনি বলেন, 'বিদেশে থেকে কোনো প্রাণী বিশেষ করে বানর, ইঁদুর, কাঠবিড়ালী এমন প্রাণী আনলে একটু সতর্ক থাকেতে হবে। তবে আমরা সাধারণত এসব প্রাণী আমদানি করি না।'

মাঙ্কিপক্স বাতাসের মাধ্যমে ছড়ানোর সম্ভাবনা নেই জানিয়ে তিনি বলেন, 'চিকেনপক্স যেভাবে ছড়ায় মাঙ্কিপক্সও একইভাবে ছড়ায়। গায়ে ফোসকা পড়ে। এই ফোসকার মধ্যে যে পানি থাকে সেখানে ভাইরাস থাকে। ফোসকা শুকিয়ে গেলে তার ভেতরে ভাইরাসটি তৈরি হয়। এটি কোনোভাবে নাক দিয়ে ঢুকলে সংক্রমণ হয়। যিনি আক্রান্ত হবেন তাকে একটু আলাদা রাখা গেলে, মশারির মধ্যে রাখা গেলে, তার কাপড়, বিছানার চাদর ভালোভাবে পরিষ্কার করা গেলে সংক্রমণ প্রতিরোধ করা সম্ভব। যারা আক্রান্ত ব্যক্তির কাছে যাবে তারা মাস্ক পরে থাকলে এবং মাঝে মাঝে সাবান দিয়ে হাত ধুলে সংক্রমণ বন্ধ করা যাবে। ভাইরাসটি বাতাসে ভাসতে পারে না।'

অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক বলেন, 'আমাদের দেশে মাঙ্কিপক্স প্রতিরোধে যে প্রস্তুতি নিয়েছে তা পর্যাপ্ত বলা যাবে না। তবে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে এটা শুভ লক্ষণ। আমাদের পাবলিক হেলথ অ্যাপ্রোচ নিতে হবে; এটা হলো প্রতিরোধে ও আশু প্রতিকারের ব্যবস্থা নেওয়া। প্রতিরোধের জন্য জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হবে, সচেতন করতে হবে। গুরুত্বটা বেশি দিতে হবে সম্পৃক্ততার উপর। মনে রাখতে হবে এটি একটি ট্রান্সবর্ডার সংক্রামক রোগ। দেশের বাইরে থেকে কেউ সংক্রমিত হয়ে আসতে পারে, আবার দেশে এসেও সংক্রমণ ঘটাতে পারে। তাই সংক্রমিত দেশগুলোতে যতটা সম্ভব ভ্রমণ এড়াতে হবে।'

মাঙ্কিপক্স মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় আরও কিছু ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়ে ডব্লিউএইচও'র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাবেক এই আঞ্চলিক উপদেষ্টা বলেন, 'ভাইরাসটি যেহেতু পশুর মধ্যে বাস করে বা থাকে বিশেষ করে অসুস্থ প্রাণীর শরীরে তাই তাদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে। অসুস্থ প্রাণীর বসবাসের স্থান, তার ঘর ও আসবাব থেকে দূরে থাকতে হবে। অসুস্থ মানুষ ও প্রাণীকে আলাদা করে রাখতে হবে। সব সময় বা ঘন ঘন সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কারের অভ্যাস করতে হবে। অসুস্থ প্রাণী, রোগীর সেবা বা পরিচর্যাকারীকে পিপিই (ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী) পরে দায়িত্ব পালন করতে হবে। মাঙ্কিপক্স সীমিত আকারে ছড়ায়। উপসর্গ ও অনুসর্গগুলো ২ থেকে ৪ সপ্তাহ থাকে। আইসোলেশন ও চিকিৎসার জন্য এ সময়টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।'

মাঙ্কিপক্স শরীরের কাটা-ছেঁড়া বা যে কোনো ক্ষতস্থান দিয়ে প্রবেশ করতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, 'পশু প্রাণীর কামড়ে এটি পশু থেকে অন্য পশু বা পশু থেকে মানুষের মধ্যে ছড়াতে পারে। কাছাকাছি থাকা মানুষের হাঁচি-কাশির মাধ্যমে করোনাভাইরাসের মতো এটি ছড়াতে পারে। এটি যেহেতু রোগীর সংস্পর্শে এলে সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাই অনেক সময় নিকট সাহচর্যে বা সমকামীদের মধ্যে সংক্রমণ ঘটায়।'

'মাঙ্কিপক্স প্রতিরোধে উপজেলা হাসপাতালগুলোতে শনাক্তকরণ ও আইসোলেশনের ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। যাতে প্রাথমিকভাবে সেখানেই চিকিৎসা দেওয়া যায়। পাশাপাশি অবশ্যই জনগণকে সম্পৃক্ত করে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে,' তিনি যোগ করেন।

Comments

The Daily Star  | English
Tariffs

Economic lessons from the tariff war

Our understanding of tariffs might not be complete.

9h ago