করোনার চতুর্থ ঢেউ, মাস্ক অপরিহার্য

বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ বেড়েই চলছে। গতকাল বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২৪ ঘণ্টায় ১ হাজার ১৩৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে এবং শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৩০ শতাংশ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে করোনার নতুন ঢেউ শুরু হয়েছে।

স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে এই সংক্রমণ আরও ব্যাপক আকার ধারণ করবে বলে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

তারা বলেছেন, পদ্মা সেতুর উদ্বোধনীতে বড় ধরনের জনসমাগম হবে। তাছাড়া ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে বহু মানুষ বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করবেন। এ সময় স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে না মানলে করোনার নতুন ঢেউয়ের সংক্রমণ অনেক ভয়াবহ হতে পারে।

সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক বে-নজির আহমেদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা চতুর্থ ঢেউয়ের মধ্যে প্রবেশ করেছি। ওমিক্রনের নতুন এক সাব-ভ্যারিয়েন্ট দেখা দিয়েছে। এই ভ্যারিয়েন্ট অনেক বেশি সংক্রামক। রাজধানীতে রোগী বেশি। এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। ঈদে অনেকেই বাড়িতে যাবে। তখন সংক্রমণ বাড়তে পারে।'

তিনি বলেন, 'যারা টিকা নেননি বা এক ডোজ নিয়েছেন তারা বেশি ঝুঁকিতে থাকবেন। যারা ২ ডোজ  এবং বুস্টার ডোজ নিয়েছেন তাদের ঝুঁকি কিছুটা কম। শিশুদের মধ্যে সংক্রমণ ছড়ালে ঝুঁকি অনেক বেড়ে যাবে।'

দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করলে সংক্রমণ প্রতিরোধ করা যাবে জানিয়ে তিনি বলেন, 'সরকারের উচিত এই ভাইরাসের রোগতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ করা। ক্রাশ প্রোগ্রাম চালিয়ে সবার মধ্যে টিকা নিশ্চিত করা। জিনোম সিকোয়েন্সিং করে ভাইরাসটি কোথা থেকে আসছে তা বের করতে হবে। বাইরে থেকে আসলে বিমানবন্দরগুলোতে নিরাপত্তা আরও জোরালো করতে হবে। আর দেশেই ছড়ালে ভিন্ন ব্যবস্থা নিতে হবে। আইসোলেশনের ব্যবস্থা করতে হবে। আগামী ১৪ দিন ব্যাপক কর্মসূচি নিলে ১৪ দিন পর ভাইরাসটি স্থিতিস্থাপকতা পর্যায়ে থাকবে এবং পরের ১৪ দিনে কমে যাবে।'

হঠাৎ করে করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে সবার মধ্যে এক ধরনের উদাসীনতাকে দায়ী করছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও করোনা মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম।

তিনি বলেন, 'এখন আর কেউ স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। রাস্তায় অনেকেই আর মাস্ক পড়ছে না। সরকারের মধ্যেও কিছুটা উদাসীনতা দেখা গেছে। আমাদের জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির মিটিং নিয়মিত হচ্ছে না। কয়েক মাস আগে সবশেষ মিটিং হয়েছে।'

ভাইরাস ইন্টারফেয়ারেন্সের কারণেও এতদিন সংক্রমণ কম থাকতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'একই সঙ্গে শরীরে সাধারণত ২টি ভাইরাস প্রবেশ করতে পারে না। একটি ভাইরাস আরেকটি ভাইরাসকে প্রবেশে বাধা দেয়। এতদিন হয়তো আমাদের দেশীয় ভাইরাসগুলোর প্রভাব বেশি ছিল বলে করোনাভাইরাসের প্রভাব কম ছিল। আবহাওয়া পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ভাইরাসের প্রভাবেরও পরিবর্তন হয়। দেশীয় ভাইরাসগুলোর প্রভাব এখন হয়তো কমে গেছে, তাই করোনার প্রভাব বেড়েছে।'

এই মুহূর্তে কারা উচ্চ ঝুঁকিতে আছে জানতে চাইলে তিনির বলেন, 'যারা টিকা নেননি তারা এবং শিশুরা উচ্চ ঝুঁকিতে থাকবে। সবার দ্রুত টিকা নিশ্চিত করতে হবে। স্কুলগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি জোরালো করতে হবে। সবার জন্য মাস্ক বাধ্যতামূলক করতে হবে। মাস্ক পড়লে শুধু করোনা নয়, অন্যান্য রোগের ঝুঁকিও কম থাকে। তাছাড়া মাঙ্কিপক্স প্রতিরোধেও মাস্ক অনেক বেশি কার্যকর।'

নতুন এই ঢেউ কতদিন থাকতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'যতদিন ঝুঁকিতে থাকা জনসংখ্যা থাকবে ততদিন সংক্রমণ বাড়বে। সবাই আক্রান্তের পর এই জনসংখ্যা কমে গেলে সংক্রমণ কমতে থাকবে।'

তিনি বলেন, 'সামনে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বড় ধরনের জমায়েত হবে। তাছাড়া ঈদ আছে। এই ২ সময়ে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি না মনে চললে করোনার সংক্রমণ কয়েকগুণ বেড়ে যেতে পারে।'

Comments

The Daily Star  | English

People will have to take to the streets for voting rights: Fakhrul

People will have to take to the streets like they did on August 5 to realise their voting rights, said BNP Secretary General Mirza Fakhrul Islam Alamgir today

2h ago