বই পড়বেন যেভাবে
শিশুকালে বর্ণ পরিচয় দিয়ে শুরু। অক্ষর জ্ঞান শেষ হলেই শুরু হয় আধো আধো পাঠ। সেই পড়া শুরু মানেই জ্ঞান আহরণে যাত্রা শুরু। পড়া এমন এক দক্ষতা যা বিশ্বে প্রায় প্রত্যেকেরই আছে, তবে কীভাবে পড়লে আরও কার্যকরী হবে সে কথা কি কখনো ভেবেছেন!
আক্ষরিকভাবে আমরা পড়তে জানি কিন্তু দার্শনিকভাবে তা আত্মস্থ করার কথা চিন্তা করি ক'জন! যদি বই পড়ার পর সেটি আমাদের উপর প্রভাব না ফেলে বা জীবনে কাজের না লাগাতে পারি তবে সে যে অনেকটা সময় নষ্টের নামান্তর। পড়তে জানা আর শেখার মাঝে তফাৎ রয়েছে। যখন ব্যক্তি বই থেকে শিখতে পারবে তখনই নিজেকে উন্নত করার চেষ্টা করবে আর সেখানেই বই পড়ার মূল উদ্দেশ্য ।
বই কীভাবে আরও ভালোভাবে পড়া যায় এবং সেখান থেকে জ্ঞান, তথ্য গ্রহণ করে জীবনে কাজে লাগানো যায় সেটিই এই লেখার মূল উদ্দেশ্য। যতগুলো ভালো অভ্যাস রয়েছে তার মাঝে অন্যতম হলো বই পড়া। যিনি নিয়মিত বই পড়েন আর যার এ অভ্যাস নেই, কিছুটা হলেও তাদের মাঝে পার্থক্য রয়েছে। জেনে নেই কীভাবে বই পড়লে সেটিকে কার্যকরীভাবে নিজের জীবনে কাজে লাগানো যেতে পারে।
বই নির্বাচন
কী বই পড়বেন সেটি সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত বিষয়। তবে নিজের জন্য সঠিক বই নির্বাচন করতে হবে। নিজেকে প্রশ্ন করুন, আপনার আগ্রহ কিসের উপর। বিশাল জ্ঞানের সমুদ্রে নেমে পড়ার আগে আপনার রুচি, আগ্রহ, প্রয়োজন ও উদ্দেশ্য চিহ্নিত করা উচিত।
বইয়ের পটভূমি পড়ুন
পড়ার জন্য বই নির্বাচন করা হলে বইয়ের লেখক, লেখনীর উদ্দেশ্য, উপাদান সম্পর্কে জানার চেষ্টা করুন। একমাত্র লেখকই শতভাগ সঠিক করে বলতে পারবেন, তিনি তার বইটি কোন প্রসঙ্গে রচিত, কাদের জন্য রচিত এবং রচনার উদ্দেশ্য। তাছাড়া বইয়ের পটভূমিটুকু বইয়ের বিজ্ঞাপন। তাই লেখকের বয়ানের ধরন থেকেও ধারণা করতে পারবেন বইটি আসলেই আপনার উদ্দেশ্য পূরণ করবে কিনা।
লক্ষ্য ঠিক করুন
বিসমার্ক বলেন, 'মূর্খরা অভিজ্ঞতা থেকে শেখে আর জ্ঞানীরা মূর্খদের মূর্খতা দেখে শেখে।' তাই অন্যকে অনুসরণ নয় বরং নিজের লক্ষ্য অনুযায়ী পড়তে হবে। আমরা পড়ি এবং পড়ার কিছুক্ষণ পর যদি ভুলে যাই তাহলে বই পড়ার আসল উদ্দেশ্য অর্জিত হয় কি! আমরা বই পড়ি নিজের আত্মিক সমৃদ্ধির জন্য। তাই বই খুলেই সেদিকেই মনোনিবেশ করা জরুরি। যেন বইটি আপনার জীবনে সামান্যতম হলেও রেখাপাত করে। পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা পড়ে ফেলে চলে যাওয়া নয় বরং সেই জ্ঞানের প্রতিফলনে জীবনে আনাই মূল উদ্দেশ্য।
বই পড়ুন সক্রিয়ভাবে
বই অবসরের সঙ্গী। তবে বই পড়ার ক্ষেত্রে যেটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ তা হল 'একটিভ রিডিং'। এর মানে হলো সমগ্র মনোযোগ আপনার বইয়ের উপরেই থাকবে। টিভি দেখা, গান শোনা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মত মাল্টি টাস্কিং কাজগুলো থেকে নিজেকে দূরে রাখা ভালো। দরকার হলে কম সময় বই পড়ুন, কিন্তু যতটুকু সময় পড়বেন, সমগ্র মনোযোগ থাকবে বইয়ের পাতায়। এটিকেই বলা হয় সক্রিয় রিডিং। এটি মূলত একটি চর্চা, এর জন্য অনুশীলনের প্রয়োজন।
পড়ার গতি
জনপ্রিয় উপস্থাপক উডি এলেন বলেন, 'দ্রুতভাবে ১০টি বই পড়ার চেয়ে একটি বই ভালোভাবে পড়া উত্তম।' কারণ ওই একটি বই থেকেই আপনি মনে রাখবেন ও শিখবেন। বই পড়ার কোন শর্টকাট নেই। বই পড়ার জন্য আপনাকে সময়ের বিনিয়োগ করতেই হবে। দ্রুত ভাবে পড়তে বসলে বইয়ের যে স্বাদ তা সঠিকভাবে নেয়া সম্ভব নয়। তবে বই পড়া একটি দক্ষতা। যত বেশি বই পড়বেন তত দ্রুত মস্তিষ্ক গ্রহণ করতে পারবে এবং ধীরে ধীরে এর দ্রুততা বাড়বে। একই বিষয়ের ক্ষেত্রে একাধিক বই পড়তে থাকলে ভবিষ্যতে সেই জ্ঞান কাজে আসে।
প্রয়োজনে সাহায্য নেন
বই পড়তে গিয়ে অজানা শব্দের সম্মুখীন হলে তা এড়িয়ে যাবেন না। বরং তথ্যসূত্র, উইকিপিডিয়া, গুগোল, অভিধানে সাহায্য নিতে পারেন। এতে করে মনে থাকবে বেশি।
নোট করুন
পড়ার সময় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ হলো নোট লেখা। গুরুত্বপূর্ণ শব্দ, বাক্য, তথ্যগুলো নোটবুকে লিখে রাখতে পারেন। বই যদি বিশাল হয়ে থাকে, তাহলে পেছনে ফিরে দেখতে পারবেন যদি নোট করা থাকে। তাছাড়া ভুলে গেলেও প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো নোট আকারে থাকলে ভবিষ্যতে কাজে আসবে। এছাড়াও সক্রিয়ভাবে পাঠকালীন সময়ে চিন্তা বা প্রশ্ন মনে আসলে সহজেই উত্তরগুলো সংযোগ করতে পারবেন। তবে নোট করলেই হবে না, তা যথাযথভাবে ভবিষ্যতের জন্য সংরক্ষণ করতে হবে।
একটি বই লেখকের জীবনবোধ, জ্ঞান, প্রজ্ঞা, দর্শন থেকে সৃষ্টি। যা পড়ার পর ব্যক্তির মনে যে অন্তর্দৃষ্টি রয়েছে তার বিকাশ ঘটে। জীবনের সঠিক দিক নির্দেশনা পেতে বইয়ের জুড়ি নেই। যিনি নিয়মিত বই পড়ার মত অভ্যাস গড়ে তুলেছেন, তিনি জীবনে কয়েক ধাপ এগিয়ে থাকবেন। তাই বই পড়ুন এবং সেটি অবশ্যই সক্রিয়ভাবে।
Comments