‘সমাজে ধর্মীয় বিভাজন সংস্কৃতি চর্চায় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে’
সমাজে নতুন করে ধর্মীয় বিভাজন ও পরিচয়ের প্রাধান্য সংস্কৃতি চর্চার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন লেখক, গবেষক, সাংবাদিক আবুল মোমেন। তিনি বলেন, 'আরব বা পাশ্চাত্য, বলিউড বা হলিউড, ইংরেজিয়ানা বা আরবিয়ানার যে প্রাদুর্ভাব সমাজে দেখা যাচ্ছে তা থেকে বোঝা যায় আমাদের ভাষা-সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক ইতিহাস-ঐতিহ্যের প্রতি দরদ কিংবা আনুগত্য তেমন গভীর নয়। এখনো বাংলা না-জানা বা কম জানাতে বাঙালির আভিজাত্য প্রকাশ পায়।'
বাংলা একাডেমির ৬৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে 'একুশে ও মুক্তিযুদ্ধ: চেতনা ও বেদনার কথা'শিরোনামে দেওয়া প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর বক্তৃতায় তিনি আজ মঙ্গলবার এসব কথা বলেন।
আবুল মোমেন বলেন, 'বাংলাদেশে নব প্রজন্ম দ্বিভাষী হবে তা কালের দাবি হিসেবে ঠিক আছে। অতীতেও তাই ছিল, তা বলে ভাষা-বিকারে গা ভাসাবে? ইতিহাসের সঠিক ব্যাখ্যা এবং সংস্কৃতির যথার্থ চর্চা ছাড়া বাইরের প্রভাবে, জোয়ারে ভেসে যাওয়া, গা ভাসিয়ে দেওয়াই স্বাভাবিক।'
আবুল মোমেন বলেন, ক্ষমতার বৃত্তে বাঁধা রাজনীতি নীতি-আদর্শ রিক্ত হয়ে শুধু ক্ষমতারই প্রকাশ ঘটাতে সক্ষম। উন্নতি অবশ্যই হচ্ছে—সে কথা শতমুখেই বলতে হবে, আর্থ সামাজিক বিভিন্ন সূচকে এবং যোগাযোগ, জ্বালানিসহ নানা খাতে অভাবনীয় উন্নতিই হচ্ছে। কিন্তু আজ আমরা একুশের চেতনার প্রেক্ষাপটে আমাদের মানস ও মননের গতিধারা পরিমাপ করলে কি একুশের চেতনা ধারণের সংকট স্পষ্ট হয় না? এ প্রশ্ন আমাদের তাড়িত না করে পারে না।
তিনি আরও বলেন, অনেক উন্নতির মধ্যেও নৈতিক অবক্ষয়, সমাজের চিন্তার জড়তা ও পশ্চাৎগামিতা, অপরাধের প্রতি উপেক্ষা ও ঔদাসীন্য, উদার মানবিক চেতনার পরাভব নিয়ে তর্কের অবকাশ নেই। গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা কমছে, চিন্তামূলক লেখা যেটুকুও হয় তার পাঠক সেভাবে বাড়ছে না।
দেশের বাইরে অবস্থানরত অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, ভবিষ্যতের বাংলা হবে সব সাংস্কৃতিক প্রগতির অপরিহার্য বাহন। মাতৃভাষার মাধ্যমে আমাদের জাতীয় মেধা পাবে নিঃসঙ্কোচ ও সাবলীল অভিব্যক্তির অবারিত সুযোগ। প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানে, কৃষি ও চিকিৎসায় প্রকৌশল ও সমাজ চিন্তায় আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের প্রত্যেক পদক্ষেপ হবে আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান। এবং সেই অন্বিষ্ট অর্জনের জন্যে বাংলা একাডেমিকে আরো যোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে। গ্রহণ করতে হবে আরো অনেক নতুন নতুন উদ্যোগ।
সভাপতির বক্তব্যে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, প্রায় সাত দশকের পরিক্রমায় বাংলা একাডেমি আজ এক আলোকবৃক্ষের নাম। আমরা বাঙালির এই প্রাণের প্রতিষ্ঠানকে জাতির মনন- আকাঙ্ক্ষার উপযুক্ত করে গড়ে তোলার জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় যতদিন বাংলাদেশ স্থিত থাকবে, ততোদিনই বাংলা একাডেমি তার প্রকৃত মহিমায় উজ্জ্বল থাকবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি সচিব আবুল মনসুর এবং স্বাগত বক্তব্য রাখেন একাডেমির সচিব এ এইচ এম লোকমান।
স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন কবি মাহবুব সাদিক, কবি আসাদ মান্নান, কবি মিনার মনসুর, কবি ফারুক মাহমুদ ও কথাসাহিত্যিক ঝর্না রহমান।
সবশেষে ছিল বাংলা একাডেমির কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
Comments