'এতো বছর বাঁচবো আশা করিনি'
আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম জনপ্রিয় কবি নির্মলেন্দু গুণের আজ ৭৭তম জন্মদিন। এখনো লিখে চলেছেন সমানতালে। তিনি ১৯৪৫ সালের আজকের দিনে নেত্রকোণা জেলার বারহাট্টা থানার কাশবন গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন।
জন্মদিন উপলক্ষে কবির সঙ্গে কথা হয় দ্য ডেইলি স্টারের। বৃষ্টির দিনে কেমন আছেন কোথায় আছেন? উত্তরে বলেন 'ভালো আছি, বাসায় আছি'। এবার কত তম জন্মদিন প্রশ্ন করতেই বলেন, '৭৭তম জন্মদিন। কিন্তু আমি জন্মদিন পালন করি না।' এতোগুলো বছর বাঁচবেন, ভেবেছিলেন কখনো? 'না, এতো বছর বাঁচবো আশা করিনি।'
আসলে মানুষ কখনো কখনো আশার চেয়ে বেশি কিছু পায়। কবিরা আরও ব্যতিক্রম। তার একটি কবিতা আছে এমন- 'আকাশে বন্দুক যুদ্ধ, মেঘের গর্জন।/ এখনও কদম্ব-ডালে দু'একটা কদম-,/ সুমিষ্ট সুগন্ধি আম, কৃষ্ণকালো জাম,/ হলুদ কাঁঠাল, লটকা, লাল কৃষ্ণচূড়া,/ এঁরা সবই জন্মসূত্রে আমার অর্জন'।
নির্মলেন্দু গুণের মা বীণাপাণি ও বাবা সুখেন্দু প্রকাশ গুণ। নেত্রকোণার বারহাট্টার করোনেশন কৃষ্ণপ্রসাদ ইন্সটিটিউট থেকে ১৯৬২ সালে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন তিনি। এর আগেই নেত্রকোণা থেকে প্রকাশিত 'উত্তর আকাশ' পত্রিকায় প্রকাশিত হয় তার প্রথম কবিতা 'নতুন কাণ্ডারী'।
১৯৬৪ সালে আনন্দ মোহন কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে আইএসসি পাস করেন তিনি। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসি বিভাগে ভর্তির জন্য মনোনীত হলেও ঢাকায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হওয়ায় তিনি গ্রামে চলে যান। পরে ফিরে এসে দেখেন, তার নাম তালিকা থেকে লাল কালি দিয়ে কেটে দেওয়া হয়েছে। ১৯৬৯ সালে তিনি প্রাইভেটে বিএ পাস করলেও সার্টিফিকেট তোলেননি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা, শ্রেণিসংগ্রাম, প্রেম-বিরহ, জীবন-প্রকৃতি আর স্বপ্ন দেখার তীব্র ঘোর তার কবিতার প্রাণশক্তি। কবিতার পাশাপাশি গল্প, আত্মজৈবনিক গ্রন্থ ও ভ্রমণসাহিত্যও রচনা করেছেন নির্মলেন্দু গুণ।
প্রথম কবিতার বই 'প্রেমাংশুর রক্ত চাই' লিখেই কাব্যজগতে নিজের আসন স্থায়ী করে নেন তিনি। এ ছাড়া তার 'স্বাধীনতা, এই শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো' কবিতাটি বাংলাদেশের মাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠ্যপুস্তকে পাঠ্য।
সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য নির্মলেন্দু গুণ ১৯৮২ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, ২০১১ সালে একুশে পদক, ২০১৬ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার ও ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন।
Comments