৩৮ কোটি টাকার সেতু পারের ভরসা বাঁশের মই
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া-পৃথিমপাশা-হাজীপুর-শরীফপুর সড়কে মনু নদীর ওপর রাজাপুর সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে প্রায় এক বছর আগে। তবে সংযোগ সড়কের কাজ এখনো শেষ হয়নি।
স্থানীয়রা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উঁচু সেতুর ২ পাশে বাঁশের মই দিয়ে সেতু পার হচ্ছেন।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের (আরএইচডি) কর্মকর্তারা দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন, জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়ার কারণে সংযোগ সড়ক তৈরিতে দেরি হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা সৈয়দ আশফাক তানভীর ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পৃথিমপাশা ইউনিয়নের রাজাপুর এলাকায় মনু নদীর তীরে ফেরি ছিল, যা হাজীপুর ও শরীফপুর ইউনিয়নের বাসিন্দারা ব্যবহার করতেন। কিন্তু, তা ছিল বিশাল ঝামেলার।'
'স্থানীয়দের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আরএইচডি সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। ২০১৮ সালের দিকে ৯৯ কোটি টাকার বাজেটে রাজাপুর সেতু প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছিল,' যোগ করেন তিনি।
স্থানীয় সূত্র জানায়, এলাকাবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ কুলাউড়া উপজেলার রাজাপুর এলাকায় মনু নদের ওপর সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। ওই উদ্যোগের অংশ হিসেবে ২০১৮ সালের দিকে ২৩২ মিটার দীর্ঘ পিসি গার্ডার সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। এর নাম দেওয়া হয় রাজাপুর সেতু। সেতুর দুই পাশে কুলাউড়া-রবিরবাজার-শরীফপুর সড়ক। প্রায় ৩৮ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতুটি নির্মাণের কাচ পায় 'জন্মভূমি নির্মাতা-ওয়াহিদুজ্জামান চৌধুরী, দি নির্মিতি' নামের সিলেটের যৌথ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ২০২১ সালের জুনের দিকে সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হয়ে যায়।
যাতায়াতের সুবিধার জন্য সেতুর দুই পাশে সাড়ে ৭ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সওজ। প্রায় ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়ক নির্মাণের কাজ পায় 'মোজাহার এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড, মো. জামিল ইকবাল' নামের সিলেটের আরেকটি যৌথ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ২০২০ সালে কাজ শুরুর জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। চলতি বছরের এপ্রিলে এই কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ না হওয়ায় সংযোগ সড়কের নির্মাণকাজ এখনো বাকি।
সরেজমিনে দেখা যায়, স্থানীয়রা পূর্ব ও পশ্চিম দিকে যথাক্রমে ৫০ ফুট ও ৩০ ফুট উঁচু নড়বড়ে মই ব্যবহার করে কষ্ট ও সতর্কতার সঙ্গে সেতুটি পার হচ্ছেন। মইয়ের কয়েকটি বাঁশ পচে গেছে।
স্থানীয়রা জানান, সেতু পার হওয়ার সময় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। যেখানে সংযোগ সড়ক হওয়ার কথা ছিল, সেখানে বিস্তীর্ণ জলাভূমি।
শরীফপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা সেতু নির্মাণে খুশি। কিন্তু, সংযোগের অভাবে দুর্ভোগ কমেনি, বরং বেড়েছে।'
আরএইচডির কুলাউড়া কার্যালয়ের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী পার্থ সরকার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সংযোগ সড়কের জন্য ৪৬ একর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। দীর্ঘ প্রক্রিয়ার কারণে সড়কের কাজ শুরু করা যাচ্ছে না।'
মৌলভীবাজার জেলা ভূমি অধিগ্রহণ শাখার সহকারী কমিশনার বেলায়েত হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জমি অধিগ্রহণের প্রাথমিক কাজ শেষ হয়েছে।'
'জেলা জমি অধিগ্রহণ কমিটির সভা আগামী কয়েকদিনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে অধিগ্রহণ অনুমোদন হলে পরবর্তী প্রক্রিয়া শুরু হবে', বলেন তিনি।
মৌলভীবাজার সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জিয়া উদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নদীশাসন ও জমি অধিগ্রহণসহ পুরো প্রকল্পটিতে মোট ব্যয় হচ্ছে ৯৯ কোটি ১৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে শুধু সেতুটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৩৮ কোটি টাকা। সেতুটি সচল করতে জমি অধিগ্রহণের বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।'
মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সেতু বানানোর আগেই জমি অধিগ্রহণের কথা। কিন্তু, এই সেতুর ক্ষেত্রে আগে না হওয়ায় জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। জমি সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনে উদ্যোগ নিয়েছি। আশাকরি দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে।'
Comments