সবুজ ধানের বুকে ‘মা’
ছোট্ট একটি শব্দ 'মা'। এই ছোট্ট শব্দটিতে লুকিয়ে থাকে পৃথিবীর সমস্ত আবেগ আর ভালোবাসা। সেই আবেগ আর ভালোবাসাকে একসঙ্গে ভিন্নভাবে প্রকাশ করেছেন গাজীপুরের শ্রীপুরের কৃষক এনামুল হক।
শ্রীপুরের তেলিহাটী ইউনিয়নের বেকাসাহরা গ্রামের এনামুল হক তার ফসলি জমিতে ধানের চারা দিয়ে মা'কে ভালবাসার প্রতিচ্ছবি ফুটিয়ে তুলেছেন।
বেকাসাহরা গ্রামের বরমী-সাতখামাইর-মাওনা সড়কের পাশে বেগুনি ও ব্লাক রাইস জাতের সবুজ রঙের ধানের চারায় 'মা' চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন এনামুল। তা যেন শিল্পীর তুলিকেও হার মানাবে। আর সেই ধানের চারার চিত্রকর্ম দেখতে প্রতিদিন শত শত মানুষ সেখানে ভিড় জমাচ্ছেন।
এনামুল হক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বেগুনি ও ব্লাক রাইস জাতের সবুজ ধানের বীজ সংগ্রহ করে বীজতলা তৈরি করি। পরে বীজতলার চারা দিয়ে সুতা টেনে মা লেখার কাঠামো তৈরি করেন। এরপর ব্লাক রাইস জাতের সবুজ রঙের ধান রোপণ করেন। তার চারপাশে বেগুনি রঙের ধানের চারা রোপণ করে। সময়ের সঙ্গে ধানের চারাগুলো বড় হয়ে 'মা' স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠেছে।'
তিনি আরও বলেন, 'স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সারোয়ার হোসেন আমাকে সরাসির পরামর্শ ও দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। এক ফসলের জন্য প্রায় ৫০ শতক জমি ভাড়া নিয়ে এটি করেছি।'
মায়ের প্রতি ভালোবাসার কথা জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, 'অর্ধযুগের বেশি সময় আগে আমার বাবা মারা যান। তারপর মা আমাকে আগলে বেঁচে আছেন। আমি ছোটবেলা থেকেই মা'কে খুব ভালোবাসি। আসলে মা'কে ভালোবাসলে কোনো সন্তান অবাধ্য হতে পারে না, খারাপ পথে যেতে পারে না, মাদক নিতে পারে না। মায়ের কথা শুনলে জীবনে মঙ্গল হয়।'
এনামুলের মা জোহরা বেগম (৬৫) বলেন, 'ধানের চারা দিয়ে জমিতে 'মা' লেখাটি মানুষ দেখতে আসতে শুরু করলে আমি জানতে পারি। এর আগে আমি এ বিষয়ে কিছু জানতাম না।'
তিনি বলেন, 'এই বয়সে স্বাভাবিক চলাফেরা করতে পারি না। আমার সবকিছুতে ছেলে সহযোগিতা করে। পৃথিবীর সকল সন্তান যেন তার মা'কে ভালবাসে। তাহলে পৃথিবী আরও সুন্দর হবে।'
ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা উপজেলার মাস্টারবাড়ী থেকে নটরডেম কলেজের শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ আহমেদ ও তার ২ বন্ধু এনামুল হকের ধান গাছের চিত্রকর্ম দেখতে আসেন। তিনি বলেন, 'সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কারণে এখন আর কোনো কিছুই চাপা থাকে না। তাই এই কথাটিও সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। জানতে পরে আমরাও দেখতে এসেছি।'
ব্যবসায়িক কাজে প্রতিদিন বরমী-সাতখামাইর-মাওনা সড়কে চলাচল করেন আতিক হাসান। তিনি বলেন, 'যতবার মা লেখাটি দেখি ততবারই মায়ের প্রতি ভালোবাসা বাড়তে থাকে। আমার মতো অসংখ্য মানুষ সরাদিন এটি দেখতে আসেন। অনেকে সেলফি তোলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন। এটি এখন আমাদের এলাকার আলোচিত ঘটনা।'
স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সারোয়ার হোসেন বলেন, 'ধানের চারার চিত্রকর্মটির মূল পরিকল্পনাকারী কৃষক এনামুল। তিনি শুধু বাস্তবায়নের জন্য আমাদের সহযোগিতা নিয়েছেন। অসম্ভব এক সৃষ্টিকর্মের প্রতিফলন দেখিয়েছেন তিনি। ভবিষ্যতে এরকম আরও কিছু করার ইচ্ছাও প্রকাশ করেছেন তিনি।'
Comments