লামায় জুম বাগান পুড়িয়ে দেওয়ায় ১৬ নাগরিকের নিন্দা
বান্দরবানের লামা উপজেলায় লাংকমপাড়া, রেংয়েনপাড়া ও জয়চন্দ্রপাড়ার জুমের বাগান পুড়িয়ে দেওয়ার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন দেশের ১৬ জন নাগরিক।
তারা বলেন, লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামের একটি কোম্পানির লোকজন পরিকল্পিতভাবে আগুন লাগিয়ে পাহাড়িদের জুমের বাগান পুড়িয়ে দেয়। আগুনে প্রায় সাড়ে তিনশ একর জুমের ধান, বাঁশ, আম, কলা, আনারসসহ বিভিন্ন ফলদ ও বনজ গাছ পুড়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত পাহাড়িরা এখন উচ্ছেদ আতঙ্কে ভুগছেন।
বিবৃতি প্রদানকারীরা হলেন মানবাধিকার কর্মী ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, নারী নেত্রী ও নিজেরা করির সমন্বয়কারী খুশী কবির, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জমান, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সভাপতি ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সদস্য অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট রাণা দাশগুপ্ত, সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, বাংলাদেশ পরিষদের উপদেষ্টা কাজল দেবনাথ, সামাজিক আন্দোলনের সাবেক সহ-সভাপতি ও সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট তবারক হোসাইন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, নাগরিক উদ্যোগ-এর প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, ব্লাস্টের অনারারি নির্বাহী পরিচালক ব্যারিস্টার সারা হোসেন, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং এবং তথ্য ও প্রচার সম্পাদক দীপায়ন খীসা এবং এএলআরডি'র নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা।
তারা লামার তিনটি পাড়ার জুমের বাগান পুড়িয়ে দেওয়ার সঙ্গে জড়িতদের একটি স্বাধীন, দ্রুত ও কার্যকর তদন্তের মাধ্যমে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানোর পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত ৪০টি পরিবারকে পর্যাপ্ত আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানান।
ক্ষতিগ্রস্তদের খাবার ও পানীয় জল সরবরাহের দাবি জানিয়ে তারা বলেন, 'অধিকাংশ পাড়াবাসী খাবার সংকটে ভুগছেন, আগুনে তাদের বাগান পুড়ে যাওয়ায় তাদের ঘরে খাবার নেই। তারা পানীয় জলের সঙ্কটেও আছেন। জঙ্গলের লতাপাতা সেদ্ধ করে খেয়ে না খেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।'
অন্যদিকে গত ২৯ এপ্রিল চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলায় জিতেন কান্তি গুহ নামের এক আওয়ামী লীগ নেতাকে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা তাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর অভিযুক্ত ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বি কে জসিম ও তার ছেলেকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে।
বিবৃতিতে বলা হয়, এই দুই ঘটনাই সারা দেশে প্রভাবশালী মহলের আশীর্বাদপুষ্ট একশ্রেণির সামাজিক অপরাধী, ছদ্মবেশী সাম্প্রদায়িক দুর্বৃত্ত এবং ভূমিদস্যু একের পর এক আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর মানুষ, ধর্মীয় সংখ্যালঘু এবং প্রান্তিক অবস্থানে থাকা অন্যান্য নারী-পুরুষদের উপর দিনের পর দিন, বছরের পর বছর যে নিপীড়ন, উচ্ছেদ, অত্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে তারই সাম্প্রতিক ধারাবাহিকতার সাক্ষ্য বহন করে।
তারা বলেন, 'গত দুই দশক ধরে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর ঘটে যাওয়া হামলা-নির্যাতনের ঘটনাগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত বা বিচার না হওয়ায় এবং ক্ষমতাসীন দল ও প্রশাসনের একাংশের প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকার কারণে একটির পর একটি সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটে চলেছে। পূর্বের ঘটনাগুলোর বিচারহীনতা বজায় থাকলে এরকম ঘটনা ভবিষ্যতে ঘটতেই থাকবে।'
Comments