নির্বাচন কমিশন সংলাপের নামে প্রহসন করছে: এমপি হারুনুর রশীদ

হারুন
ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপি কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত সমাবেশে বক্তব্য দিচ্ছেন সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ। ছবি: কামরুল ইসলাম রুবাইয়াত/স্টার

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ বলেছেন, 'এই সরকারের নিয়োগপ্রাপ্ত তল্পিবাহক নির্বাচন কমিশন আগামী জাতীয় নির্বাচনের জন্য সংলাপের নামে প্রহসন করছে।'

তিনি বলেন, 'দেশে যে কয়েকটি জায়গায় স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে, তার পরিবেশ বজায় রাখতেও তারা ব্যর্থ হচ্ছে।'

রোববার বিকেলে ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপি কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত এক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈলে গত বুধবার ইউপি নির্বাচনে সহিংসতায় আট মাস বয়সী শিশু নিহতের ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'বাংলাদেশে এভাবে শত শত মায়ের কোল শেখ হাসিনা খালি করেছে।'

'ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে, ভোটারদের নিরাপত্তা দিতে প্রশাসনকে রাষ্ট্র দায়িত্ব দিয়েছে। কিন্তু তারা তা না করে নিজেরাই ব্যালটে সিল মেরে বাক্সে ভরছে,' বলেন তিনি।

জনগণের নির্বাচিত সরকার নয় বলেই সারাদেশে এই সরকার অন্যায় আর জুলুমের শাসন কায়েম করেছে দাবি করে তিনি বলেন, 'জনগণের নির্বাচিত সরকার নয় বলেই আজ জনগণের ওপরে জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসে আছে।'  

সারা দেশে লোডশেডিং, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং জ্বালানি খাতের অরাজকতার প্রতিবাদে দেশব্যাপী কর্মসূচীর অংশ হিসেবে বিকেলে ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপি একটি কর্মসূচি আয়োজন করে।

এতে অংশ নিয়ে সংসদ সদস্য হারুন বলেন, 'কিছুদিন আগেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারাদেশে ঢাকঢোল পিটিয়ে শতভাগ বিদ্যুতায়নের উৎসব করলেন। কিন্তু হঠাৎ করে আমাদের লোডশেডিংয়ের মধ্যে ফেলে দেওয়া হলো। সরকারের নীতি, কৌশল ও লুটপাটই এর জন্য দায়ী।'

গত ১৫ বছরে দেশে বিদ্যুতের উৎপাদন বেড়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'বিদেশ থেকে লাখ লাখ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে এসে দেশে বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়িয়েছে। কিন্তু সে সবের কোনো জবাবদিহিতা নেই।'

'২০০৯ সালে সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিদ্যুৎ বিভাগে ইমডেমনিটি দিয়ে রেখেছে। দায় মুক্তি আইন করে রেখেছে। গত সংসদ অধিবেশনে সেটার মেয়াদ আরো ৫ বছরের জন্য বাড়িয়েছে। এই সরকার বিদ্যুৎখাতে যে উন্নয়ন করেছে, তার বিরুদ্ধে কোনো সমালোচনা করা যাবে না, কোনো আইনের আশ্রয় নেওয়া যাবে না,' যোগ করেন তিনি।

হারুনুর রশীদ বলেন, 'বাংলাদেশে রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে। এর জন্য ১৩ বিলিয়ন ডলার খরচ করে রাশিয়ার একটি কোম্পানি সেটা নির্মাণ করছে। ঠিক একই কোম্পানি ভারতে নির্মাণ করছে সাড়ে ৩ বিলিয়ন ডলারে। তারাই আবার তুরস্কে নির্মাণ করছে ৩ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারে। তাহলে বাংলাদেশে কোনো এত বেশি টাকা লাগছে এর জবাব সরকারকে দিতে হবে।'

তিনি বলেন, 'বিদেশে পাচারের জন্য এসব প্রকল্প নির্মাণ করে টাকা লুটপাট করা হচ্ছে। যার ফলে দেশ আজ দেউলিয়ার দিকে চলে যাচ্ছে।'

তিনি আরও বলেন, 'বিশেষজ্ঞরা বলছেন বাংলাদেশে ৪২ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস মজুদ আছে। গত ১৫ বছরে গ্যাস উত্তোলনের দিকে নজর দেওয়া হয়নি। যদি গ্যাস উত্তোলন করে বিদ্যুৎ প্লান্টগুলো চালানো হতো, তাহলে আজ লোডশেডিং হতো না। কম খরচে মানুষকে বিদ্যুৎ দেওয়া যেত।'

'আজ বিদেশ থেকে ঋণ নিয়ে যে প্লান্টগুলো বানানো হয়েছে, সেগুলো বসিয়ে রাখতে হবে আর ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হবে,' বলেন তিনি।

বর্তমানে বাংলাদেশে ঋণের পরিমাণ ৯ লাখ কোটি টাকা উল্লেখ করে এই সংসদ সদস্য বলেন, 'ডলারের তুলনায় টাকার অবমূল্যায়নের কারণে ১ মাসে সেই ঋণের পরিমাণ ১০ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। আজ বিদেশ থেকে লাখ লাখ কোটি টাকা নিয়ে এসে লুটপাট করছে। এই টাকা জনগণকেই পরিশোধ করতে হবে।'

হারুনুর রশীদ আরো বলেন, 'সরকারের মুখে শুধু উন্নয়ন আর উন্নয়ন। আপনারা এত উন্নয়ন করেছেন, মেট্রোরেল বানাচ্ছেন, পদ্মা সেতু বানাচ্ছেন, এত বিদ্যুৎ উৎপাদন করছেন, তারপরও ভোটটা সুষ্ঠুভাবে করেন না কেন?'

তিনি বলেন, 'দেশ আজ ভয়াবহ সংকটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। দাতারা সে সব ঋণের টাকা টান দিলে যে কোনো সময় দেশ শ্রীলঙ্কার চেয়েও ভয়াবহ পরিস্থিতিতে পড়বে।'

বিএনপির রংপুর বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল খালেক বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন আমরা ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দেবো। কিন্তু সারা দেশ আজকে বিদ্যুৎ শূন্য। শুধু শেখ হাসিনার গণভবনে বিদ্যুৎ আছে। আজ দেশের মানুষ গণভবন ঘেরাও করবে। সেখানের বিদ্যুতের লাইন বিচ্ছিন্ন করে দেবে।'

জেলা বিএনপির সভাপতি মো. তৈমুর রহমানের সভাপতিত্বে বিক্ষোভ সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সল আমীন, সহসভাপতি ওবায়দুল্লাহ মাসুদ, পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক তারেক আদনান।

Comments

The Daily Star  | English

S Alam threatens int'l legal action against govt over asset freezing: FT

Alam says his family's bank accounts were frozen, they were subjected to travel bans, and they lost control of their companies, all while facing investigations for alleged money laundering without formal notification.

2h ago