মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে আড়াইহাজারে শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ

মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে কয়েক হাজার পাওয়ার লুম শ্রমিক। আজ মঙ্গলবার বিকেল ৪টা থেকে উপজেলার রামচন্দ্রী, কড়ইতলা, বিশনন্দী ফেরিঘাট এলাকার ঢাকা-বিশনন্দী ফেরিঘাট আঞ্চলিক মহাসড়কে শ্রমিকরা অবরোধ করে।
মঙ্গলবার বিকেলে উপজেলার রামচন্দ্রী, কড়ইতলা, বিশনন্দী ফেরিঘাট এলাকার ঢাকা-বিশনন্দী ফেরিঘাট আঞ্চলিক মহাসড়ক অবরোধ করা হয়। ছবি: সংগৃহীত

মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে কয়েক হাজার পাওয়ার লুম শ্রমিক। আজ মঙ্গলবার বিকেল ৪টা থেকে উপজেলার রামচন্দ্রী, কড়ইতলা, বিশনন্দী ফেরিঘাট এলাকার ঢাকা-বিশনন্দী ফেরিঘাট আঞ্চলিক মহাসড়কে শ্রমিকরা অবরোধ করে।

এতে সড়কের দুই পাশে ৫ কিলোমিটার পর্যন্ত যানজট সৃষ্টি হলে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা।

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত রাত সাড়ে ৯টার দিকে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়।

শ্রমিকরা জানান, নরসিংদী ও আড়াইহাজার এলাকায় কয়েক শতাধিক পাওয়ার লুম (সুতা থেকে গ্রে কাপড় তৈরির কারখানা) আছে। এগুলোতে কয়েক হাজার শ্রমিক কাজ করেন। প্রতি গজ গ্রে কাপড় তৈরির জন্য শ্রমিকরা ২ টাকা ২৫ পয়সা মজুরি পেয়ে আসছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যে দাম বৃদ্ধির পর শ্রমিকরা মালিকপক্ষের কাছে গজ প্রতি ১ টাকা মজুরি বৃদ্ধির দাবি জানান।

গত এক মাস ধরে মজুরি বৃদ্ধির দাবি জানিয়ে আসলেও মালিকপক্ষ তাতে রাজি না হওয়ায় গত ২১ মে আন্দোলন শুরু করে শ্রমিকেরা। সেদিন আড়াইহাজার উপজেলার বাজারসহ আশেপাশের রাস্তায় ১ ঘণ্টা করে বিক্ষোভ করে।

পরবর্তীতে ২২ ও ২৩ মে শ্রমিকরা ধারাবাহিক আন্দোলন করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২৪ মে বিকেলে মজুরি বৃদ্ধির বিষয়ে শ্রমিক, পুলিশ, জনপ্রতিনিধি ও মালিকপক্ষ আলোচনা করে সমাধানের আশ্বাস দেওয়া হয়।

কিন্তু আজ বিকেলে এ নিয়ে কোন সভা বা সিদ্ধান্ত না হওয়ায় শ্রমিকরা বিক্ষোভ শুরু করেন।

স্থানীয়রা জানান, শ্রমিকেরা উপজেলার গোপালদি, উলুকান্দি, সদাসদী, রামচন্দ্রদী, দাইরাদী এলাকায় ঢাকা-বিশনন্দী ফেরিঘাট আঞ্চলিক মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। এ সময় মহাসড়কে দুটি লোহার ব্রিজ লোহার স্প্যান দিয়ে অবরোধ করে রাখেন তারা।

এতে ঢাকা থেকে বিশনন্দী ফেরিঘাটগামী ও ফেরিঘাট থেকে ঢাকাগামী সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

শ্রমিক মো. সোহেল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে চলেছে। চাল, ডাল, তেল, চিনি সবকিছুরই দাম বাড়ছে। কিন্তু আমাদের মজুরি বাড়ছে না। একজন শ্রমিক মাসে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা মজুরি পায়। কিন্তু এ টাকা দিয়ে সংসার চালানো খুবই কষ্টকর। তাই মজুরি বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলন করছি। আমাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।'

শ্রমিক মো. রানা বলেন, 'একজন শ্রমিক মাসে ৬ থেকে ৭ হাজার গজের বেশি কাজ করতে পারে না। গজ প্রতি ২ টাকা ১০ পয়সা মজুরিতে মাসে আর কত আসে। এর মধ্যে অসুস্থ হলে কাজ বন্ধ। বাসা ভাড়া, ছেলেমেয়ের পড়ালেখার খরচ, বিদ্যুৎ বিল, গ্যাসের বিল এসব দিয়ে খাবো কি?'

তিনি বলেন, 'আমি ৫ বছর ধরে কাজ করি। এর মধ্যে মজুরি বৃদ্ধি করেনি। তাই ১ টাকা মজুরি বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছি।'

যান চলাচল বন্ধ হওয়ায় বিপাকে পড়া রামচন্দ্রপুরের যাত্রী রিফাত হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছি। কিন্তু সিএনজি থেকে আড়াইহাজার মোড়ে নামিয়ে দিয়েছে। প্রায় ২ কিলোমিটার রাস্তা হেঁটে এসেছি। আরো ৩-৪ কিলোমিটার হেঁটে যেতে হবে। আমার মতো অনেক মানুষ এভাবেই হেঁটে যাচ্ছে।'

জানতে চাইলে আড়াইহাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিজুল হক হাওলাদার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কয়েক হাজার পাওয়ার লুম শ্রমিক ১ টাকা মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে। আমরা তাদের বুঝিয়ে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি।'

তিনি বলেন, 'আমরা চেষ্টা করছি মালিকপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে। কিন্তু তাদের কোনো সংগঠন না থাকায় কথা বলা সম্ভব হচ্ছে না।'

ওসি বলেন, 'সড়কের প্রায় ৫ কিলোমিটার রাস্তায় যানজট সৃষ্টি হয়েছে। যান চলাচল স্বাভাবিক করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।'

গোপালদী পৌরসভার কাউন্সিলর মিনহাজুল আবেদীন মিশু মোবাইলে একাধিকবার চেষ্টা করেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।

আড়াইহাজার উপজেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রফিকুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি বিষয়টি জানতে পেরে পুলিশকে বলেছি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তারা চেষ্টা করছে মালিক পক্ষের সঙ্গে কথা বলে সমাধানের। বিস্তারিত জেনে পরে জানাবো।'

Comments

The Daily Star  | English

Six state banks asked to cancel contractual appointments of MDs

The Financial Institutions Division (FID) of the finance ministry has recommended that the boards of directors of six state-run banks cancel the contractual appointment of their managing directors and CEOs..The six state-run banks are Sonali Bank, Janata Bank, Agrani Bank, Rupali Bank, BAS

1h ago