‘বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করল, কিন্তু লোডশেডিংয়ে তো ডিজেলের ব্যবহার বাড়বে’

দেশের জ্বালানি সংকট মোকাবিলায় সরকার ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধের ঘোষণা দিলেও ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়া বন্ধ থাকছে না। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) তথ্য অনুযায়ী, ৬টি বেসরকারি ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রকে বছরে ১ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হয়।

চলমান সংকট মোকাবিলায় সরকারের নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো কতটা কার্যকর? দ্য ডেইলি স্টার কথা বলেছে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক বদরূল ইমামের সঙ্গে। তার মতে, সামগ্রিক দৃশ্যপট বিবেচনা করে এই সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া হয়নি। এসব সাময়িক সিদ্ধান্ত না নিয়ে সুনির্দিষ্ট ও যথাযথ পরিকল্পনা হাতে নিতে হবে।

অধ্যাপক বদরূল ইমাম বলেন, 'সরকার যে সিদ্ধান্তগুলো নিয়েছে, সেটা কি সামগ্রিক দৃশ্যপট বিবেচনা করে নিয়েছে? নাকি তাৎক্ষণিক একটা শো-ডাউন করা যে ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দিলাম? ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করার আগে হিসাব করে দেখানো উচিত ছিল যে, এগুলো বন্ধ করলে আসলেই কীভাবে সাশ্রয় হবে। কিন্তু, তা দেখানো হয়নি। এখন ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করা হলো। কিন্তু ডিজেলের ব্যবহার অন্যদিকে তো বেড়ে যাবে। আমাদের কল-কারখানাসহ বাসাবাড়িতে যে জেনারেটর ব্যবহার করা হয়, সেগুলোতে ডিজেল ব্যবহৃত হয়। ফলে লোডশেডিং হলে সেগুলোতে তো ডিজেলের ব্যবহার বাড়বে। কর্তৃপক্ষকে তো এর জবাব দিতে হবে।'

'গতকাল যেসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো, এগুলো আসলে পিসমিল ডিসিশন। এই পিসমিল ব্যবস্থাপনায় আমাদের সমস্যার সমাধান হবে না। সমস্যাটা যে পর্যায়ে গেছে, সরকার হয়তো সমাধানের চেষ্টা করছে। কিন্তু, যে পদ্ধতিতে গেল তারা, সেভাবে সমস্যার সমাধানের সম্ভাবনা অতি অল্প। কিন্তু, আমাদের মূল যে সমস্যা, জ্বালানির অভাব, সেটা নিয়ে যদি কোনো পরিকল্পনা না নেওয়া হয়, তাহলে এই পিসমিল ব্যবস্থাপনা দিয়ে কিছু হবে না। এতে সামান্য কিছু সাশ্রয় হলেও বিষয়টি হবে লোকদেখানো', বলেন তিনি।

বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশীয় উৎস থেকে জ্বালানির জোগান দেওয়া মূল ফোকাস হওয়া উচিত বলে মনে করেন এই জ্বালানি বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন, 'বাইরের তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) কিনতে গিয়ে আজকে আমাদের এই অবস্থা হয়েছে। বিশ্ববাজারে এলএনজির দাম এখন ৪০ ডলার। অথচ লোকাল গ্যাস আমরা ১ থেকে বড়জোর ৩ ডলারের মধ্যেই পাই। সুতরাং আমাদের নিজস্ব যে গ্যাস সম্পদ আছে, ভূবিজ্ঞানীরা যেটার কথা বলছেন, সেটার দিকে নজর দিতে হবে। সুনির্দিষ্ট ও যথাযথ পরিকল্পনা হাতে নিতে হবে। আন্তর্জাতিক ভূবিজ্ঞানীরাও বলেন যে, "বেঙ্গল ডেল্টা ইজ অ্যা ভেরি প্রসপেক্টিভ গ্যাস রিচ প্রভিন্স"। এটা একেবারে টেক্সটবুক স্টেটমেন্ট। এখন গ্যাসে আমরা সমৃদ্ধ না হওয়ার তো কোনো কারণ নেই। সেটাতে আমরা ফোকাস করছি না কেন?'

'এটি শতসিদ্ধ বিষয় যে আমরা প্রচুর গ্যাসের ওপর দাঁড়িয়ে আছি। আমাদের যথেষ্ট পরিমাণ গ্যাস আছে। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে আমরা ১৮ থেকে ২০ ট্রিলিয়ন কিউবিক ফিটের (টিসিএফ) মতো গ্যাস ব্যবহার করেছি। কিন্তু, তার চেয়েও দ্বিগুণ গ্যাস আমাদের আছে বলে ভূবিজ্ঞানীরা মনে করেন। ইউএসজিএস-পেট্রোবাংলা পরিচালিত সমীক্ষায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে অনাবিষ্কৃত গ্যাসের পরিমাণ ৩২ টিসিএফ। আবার নরওয়েজিয়ান পেট্রোলিয়াম ডিরেক্টরেটের (এনপিডি) ও বাংলাদেশ জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সমীক্ষা বলছে, বাংলাদেশে ৪২ টিসিএফ গ্যাস অনাবিষ্কৃত রয়ে গেছে। এরপরও আমরা বলছি, দেশে গ্যাসের সংকট। তাহলে সেটা আমরা কীভাবে বলছি? এটা তো বোকার মতো কথা। আমাদেরকে বাস্তববাদী হতে হবে। আমাদেরকে ব্যাপক অনুসন্ধানে যেতে হবে। তাহলেই আমরা এই সমস্যা থেকে সমাধান পাব', বলেন অধ্যাপক বদরূল ইমাম।

পেট্রল পাম্প সপ্তাহে একদিন বন্ধের পরিকল্পনা বিষয়ে তিনি বলেন, 'পিসমিল ব্যবস্থাপনায় চলমান সমস্যার সমাধান হবে না। এতে জনসাধারণের দুর্ভোগ বাড়বে। মানুষ পেট্রল পাবে না, লাইনে দাঁড়িয়ে থাকবে।'

'বর্তমানের এই পরিস্থিতির জন্য আমরা নিজেরাই দায়ী। এটা মানবসৃষ্ট সমস্যা। আমরা নিজেরাই এটা সৃষ্টি করেছি। এর থেকে আমাদেরকে বের হয়ে আসতে হবে। এর থেকে বের হওয়ার উপায় আমাদের আছে। যত দ্রুত সম্ভব অনাবিষ্কৃত গ্যাসের অনুসন্ধান চালিয়ে তা উত্তোলন করলেই এই সমস্যা থেকে উত্তরণ পাওয়া যাবে', যোগ করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Govt to review media outlets owned by AL ministers, MPs

The adviser made these remarks during a stakeholders' meeting of the Department of Films and Publications

2h ago