উত্তরাঞ্চলে ডিজেল সরবরাহ বিঘ্নিত
সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ায় রংপুর বিভাগের আট জেলায় জ্বালানি তেলের ডিপোগুলোতে ডিজেল ঘাটতি দেখা দিয়েছে। সেচের ভরা মৌসুমে ডিজেল ঘাটতি দেখা দেওয়ায় চাপের মধ্যে রয়েছে জ্বালানি তেল কোম্পানিগুলো।
এদিকে, লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) জটিলতার কারণে ভারত-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইনেও ডিজেল সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।
তবে এসব জেলায় ডিজেল ঘাটতি সামাল দিতে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্তৃপক্ষ (বিপিসি) বিকল্প ব্যবস্থায় জ্বালানি সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছে।
জানা গেছে, রংপুর বিভাগের আট জেলায় (দিনাজপুর, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী ও লালমনিরহাট) গত রোববার থেকে রেল ওয়াগনযোগে ডিজেল সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।
রেলওয়ের লোকোমাস্টারদর ধর্মঘটের কারণে জ্বালানি তেলবাহী রেল ওয়াগন পরিচালনা করা যাচ্ছে না বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
জ্বালানি তেলের পার্বতীপুর ডিপোর কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, রংপুর বিভাগের আট জেলায় দুটি মাধ্যমে জ্বালানি তেল সরবরাহ করা হয়। প্রথমটি- ভারতের নুমালিগড় রিফাইনারি লিমিটেড থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে পরিশোধিত ডিজেল আমদানি হয় বাংলাদেশ। তা সরাসরি রিসিভ করা হয় পার্বতীপুরের পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা অয়েল কোম্পানির ডিপোতে। দ্বিতীয়টি- দৌলতপুর ডিপো থেকে রেল ওয়াগনে করে সরবরাহ করা হয়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, পার্বতীপুরের পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা অয়েল কোম্পানির ডিপো থেকেই রংপুর বিভাগের সকল জেলায় জ্বালানি তেল সরবরাহ করা হয়।
এখন সেচের মৌসুম হওয়ায় পার্বতীপুরের তিনটি ডিপোতে প্রতিদিন প্রায় সাত লাখ লিটার করে, মোট ২১ লাখ লিটার ডিজেলের চাহিদা রয়েছে।
বিপিসির কর্মকর্তারা জানান, উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে জ্বালানি সরবরাহের জন্য রেলওয়ের চারটি ট্রেন যাতায়াত করে। প্রতিটিতে ৩০টি করে ওয়াগন থাকে। নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে ডিজেল নিয়ে রেল ওয়াগন গিয়েছিল পার্বতীপুর।
এই চারটি ট্রেনের মধ্যে দুটি খালি অবস্থায় অপেক্ষা করছে পার্বতীপুর এবং দৌলতপুরে। এ ছাড়াও, জ্বালানি তেল নিয়ে লোড অবস্থায় জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে একটি এবং দৌলতপুরে একটি রেল ওয়াগন অলস বসে আছে লোকোমাস্টারদের ধর্মঘটের কারণে।
রেলওয়ের সিজিপিওয়াই এর মাস্টার আব্দুল মালেক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিভিন্ন দাবিতে লোকোমাস্টাররা আট ঘণ্টার বেশি দায়িত্ব পালন করতে চাইছেন না। এতে বিভিন্ন ইয়ার্ড এবং ডিপোতে পণ্যবাহী ট্রেন আটকে আছে। বিলম্বিত হচ্ছে ট্রেন চলাচল।'
মেঘনা পেট্রোলিয়ামের কর্মকর্তারা জানান, ভারত থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে সর্বশেষ গত ১২ নভেম্বর বাংলাদেশে চার হাজার মেট্রিক টন ডিজেল সরবরাহ করা হয়েছে। এরপর ২৫ নভেম্বর আরও সাত হাজার মেট্রিক টন ডিজেল সরবরাহ করার কথা থাকলেও তা হয়নি।
পার্বতীপুরের বিভিন্ন ডিপোর কর্মকর্তারা জানান, ডিপোতে এখন ডিজেল নেই। দৌলতপুর থেকে রেল ওয়াগন আসলে পুনরায় ডিজেল সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
জ্বালানি তেলের রংপুর অঞ্চলের ডিলার আকবর অ্যান্ড সন্সের স্বত্বাধিকারী আতিকুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রংপুর বিভাগের সব জেলাতেই ডিজেলের ঘাটতি রয়েছে। ডিপোগুলো থেকে চাহিদা মতো ডিজেল পাচ্ছি না। ঘাটতি সামাল দেওয়ার জন্য বাঘাবাড়ী থেকে লরির মাধ্যমে ডিজেল এনে সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে আমাদের খরচ বেড়ে গেছে।'
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের পরিচালক (অপারেশন ও বাণিজ্য) অনুপম বড়ুয়া ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এলসি জটিলতার কারণে ভারত থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে ডিজেল আমদানি বিঘ্নিত হচ্ছে। বিপিসির পক্ষ থেকে ভারতীয় তেল কোম্পানির কাছে বেশ কয়েকটি ব্যাংকের নাম পাঠানো হয়েছে। এই তালিকা থেকে তারা যেকোনো ব্যাংকের সঙ্গে লেনদেন করতে পারে।'
এদিকে, বৃহত্তর সিলেটের চার জেলাতেও ডিজেল সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে। বিপিসির কর্মকর্তারা বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে ভৈরব এবং বাঘাবাড়ী থেকে সিলেট অঞ্চলে জ্বালানি তেল সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছেন।
জানতে চাইলে বিপিসি চেয়ারম্যান মো. আমিন উল আহসান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রেলের লোকোমাস্টারদের আন্দোলনের কারণে জ্বালানি তেল পরিবহন বিঘ্নিত হচ্ছে। বিষয়টি রেল সচিবের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধানের চেষ্টা চলছে। ইতোমধ্যেই ডিজেল নিয়ে রংপুর এবং সিলেটের উদ্দেশ্যে দুটি রেল ওয়াগন রওনা হয়েছে।'
তিনি আরও বলেন, 'পাইপলাইনের মাধ্যমে ভারত থেকে ডিজেল আমদানির ক্ষেত্রে এলসি জটিলতা দ্রুত সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আশা করা হচ্ছে অল্প কিছুদিনের মধ্যে ভারত থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে ডিজেল রংপুর অঞ্চলে পৌঁছে যাবে।'
Comments