‘প্রচণ্ড স্রোতে পদ্মা সেতুর পিলারে ড্রেজারের ধাক্কা লাগার আশঙ্কা আছে’

স্টার ফাইল ছবি

বিআইডব্লিউটিএ'র প্রধান প্রকৌশলী (ড্রেজিং) মো. আবদুল মতিন জানিয়েছেন, তীব্র স্রোতের কারণে পদ্মায় খনন কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। কারণ, এতে পদ্মা সেতুর পিলারে ড্রেজারের ধাক্কা লাগার আশঙ্কা আছে।

আজ রোববার বিকেলে দ্য ডেইলি স্টারকে এ কথা বলেন প্রকৌশলী (ড্রেজিং) মো. আবদুল মতিন।

তিনি বলেন, 'মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাট থেকে শরীয়তপুরের জাজিরার সাত্তার মাদবর ও মঙ্গল মাঝির ঘাট পর্যন্ত ফেরি চলাচল করতে হলে প্রায় ছয় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ড্রেজিং করতে হবে। পদ্মা নদীতে ঘূর্ণায়মান তীব্র স্রোতের কারণে ড্রেজারগুলোও নির্ধারিত স্থানে আনা যাচ্ছে না। ড্রেজারের কাজ শুরু করাটা চ্যালেঞ্জিং। পদ্মার চরের মধ্যে সেগুলো আটকে যায়। সেখানে প্রতিনিয়ত চর ভাঙছে। ঘূর্ণায়মান স্রোতের মধ্যে খনন কাজ শুরু করলে সেতুর পিলারে খনন যন্ত্রের ধাক্কা লাগতে পারে।'

তিনি আরও বলেন, 'কী পরিমাণ পলি অপসারণ করতে হবে, তা এখনো নির্ধারণ করা যায়নি। কারণ, খনন কাজ শুরু হয়নি।'

তিনি বলেন, 'যে কারণে নতুন নৌপথে ফেরি চলাচল করছে না, তীব্র স্রোতের জন্য একই কারণে ড্রেজারও সেখানে ঠিকমতো কাজ শুরু করতে পারছে না। এ নৌপথে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক রাখতে বর্ষা মৌসুমে অনবরত ড্রেজিং কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে। এখানে নভেম্বর-ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় ছয় কিলোমিটার খনন করতে হবে। বেশি নাব্যতা সংকট আছে পদ্মা সেতুর ৩৮-৩৯ নম্বর পিলারের কাছে। পানি কমতে শুরু করলে সেখানে চর তৈরি হবে। খনন করে ১০ ফুট পর্যন্ত গভীরতা রাখতে হবে, যাতে ফেরিগুলো স্বাভাবিকভাবে চলতে পারে। অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি করে ফেরির পাশাপাশি ড্রেজিংও চালিয়ে যেতে হবে।'

বিআইডব্লিউটিএ'র এই কর্মকর্তা বলেন, 'ঘাট সরানোর আগে এ নৌপথের একটি পয়েন্টে পানির গভীরতা ছিল ১২ ফুট। কিন্তু, সেখানে ঘাট স্থাপনের পর ফেরি চালু করার দিন দেখা যায় গভীরতা পাঁচ থেকে ছয় ফুট। সেতুর ২৩, ২৪, ২৫ ও ২৬ নম্বর পিলারের কাছে ঘূর্ণায়মান স্রোত অনেক বেশি। এজন্য খননকাজ চালানো অনেক চ্যালেঞ্জিং। ড্রেজার সরাসরি না এনে পালেরচর দিয়ে মাঝিকান্দি হয়ে ৩৯ নম্বর পিলারের কাছে আনা হয়েছে। এছাড়া, আরেকটি উচ্চ ক্ষমতার ড্রেজার শিমুলিয়াঘাট থেকে আনার পরিকল্পনা আছে। নৌপথ সচল রাখার জন্য এখানে দু'তিনটি খননযন্ত্র দিয়ে পলি অপসারণ করা হবে।'

বিআইডব্লিউটিএ'র ড্রেজিং বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ এনামুল বলেন, 'আজ রোববার দুপুরে একটি ড্রেজার আনা হয়েছে। আরেকটি ড্রেজার আগামীকাল আনা হবে। প্রায় এক কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করতে ড্রেজারের সময় লেগেছে সাড়ে চার ঘণ্টা। এর কারণ পদ্মা নদীতে প্রচণ্ড স্রোত। প্রাথমিকভাবে এক হাজার ২০০ ফুট লম্বা ও ৩০০ ফুট চওড়ায় খননকাজ করার টার্গেট আছে। দু'তিনটি ড্রেজার পুরোদমে কাজ করলে নাব্যতা সংকট নিরসন করতে সাত দিনের কম সময় লাগবে।'

তিনি আরও বলেন, 'পদ্মা নদীতে প্রতিদিন পানির গভীরতা ওঠা-নামা করে। আগে থেকে সার্ভে করে পরিবর্তন করতে হয় কাজের পরিকল্পনা।'

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) কারিগরি সহকারী প্রকৌশলী মো. ফয়সাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নতুন এ নৌপথে ফেরি কবে চালু হবে তা বলা যাচ্ছে না। কারণ ফেরি চলাচলের পথে নাব্যতা সংকট দেখা দিয়েছে। চর ভেঙে নদীতে পড়ছে।'

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন বলেন, 'জাজিরায় সাময়িকভাবে নতুন একটি ঘাট নির্মাণ করা হয়েছে। পরীক্ষামূলকভাবে দেখা হচ্ছে, এ নৌপথে ফেরি চলাচল উপযোগী হবে কিনা। যা একটি অস্থায়ী ব্যবস্থা। চলতি বছরের মে মাসে বিকল্প নৌরুটের জন্য এ ঘাট নির্মাণের কথা আলোচনা করা হয়েছিল।'

তিনি বলেন, 'আগে থেকে এ নৌপথের নাব্যতা সংকট সম্পর্কে ধারণা করা যাচ্ছিল না। আগামী ৫ সেপ্টেম্বর একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হবে। সেখান থেকে এ নৌপথের ব্যাপারে যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।'

বারবার পদ্মা সেতুর পিলারে ধাক্কার ঘটনায় গত ১৮ আগস্ট থেকে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌপথে অনির্দিষ্টকালের জন্য ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর ২৫ আগস্ট শরীয়তপুরের জাজিরায় নতুন ঘাট নির্মাণ করা হয়। এ নৌপথে বর্তমানে শুধু লঞ্চ চলাচল করছে। ১২ দিন ধরে ফেরি চলাচল বন্ধ আছে।

Comments

The Daily Star  | English

Govt forms 11-member media reform commission

Senior journalist Kamal Ahmed to lead the commission

14m ago