লঞ্চে আগুন: দিয়াকুল গ্রামই যেন হয়ে উঠেছিল আশ্রয়কেন্দ্র

লঞ্চের যাত্রীদের অনেকেই দিয়াকুল গ্রামের আকন বাড়িতে আশ্রয় নেন। ছবি: স্টার

'ভোরের দিকে নদী থেকে মানুষের চিৎকারের আওয়াজ পাই। বুঝতে পারি যে কোনো যাত্রীবাহী লঞ্চের যাত্রীরা সমস্যায় পড়েছেন। পরে বিছানা ছেড়ে বাইরে আসি। বাইরে এসেই দেখি একটি যাত্রীবাহী লঞ্চ আগুনে পুড়ছে।'

দ্য ডেইলি স্টারকে কথাগুলো বলছিলেন ঝালকাঠি সদর উপজেলার দিয়াকুল গ্রামের বাসিন্দা মো. অলিউল ইসলাম আকন।

তিনি বলেন, 'আওয়াজ পেয়ে গ্রামের আরও অনেকে বাইরে আসে। পরে এ ঘটনা দেখে গ্রামের সবাই কাপড়চোপড় নিয়ে নদীর পাড়ে চলে আসে।'

অলিউল ইসলাম জানান, প্রথমে তারা লঞ্চ থেকে যাত্রীদের উদ্ধার করেন। পরে শীত থেকে বাঁচতে যাত্রীদের ভেজা কাপড় বদলাতে সাহায্য করেন।

শুক্রবার ভোরে ঝালকাঠি সদর উপজেলার সুগন্ধা নদীর গাবখান চ্যানেলে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ যাত্রীবাহী লঞ্চে আগুন লাগে। পরে লঞ্চটি ঝালকাঠি সদরের দিয়াকুল গ্রামে সুগন্ধা নদীতে নোঙর করে।

খবর পেয়ে গ্রামবাসীরা নদীর পাড়ে ছুটে এসে উদ্ধার কাজে যোগ দেন। ছবি: স্টার

আর এ দুর্ঘটনার খবর পেয়ে গ্রামবাসীরা নদীর পাড়ে ছুটে এসে উদ্ধার কাজে যোগ দেন। যাত্রীদের উদ্ধার করে তারা গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে নিয়ে যান। পরে সকাল থেকে যাত্রীদের আত্মীয়-স্বজনেরা ওই গ্রামে আসার পর দুপুরের দিকে তারা নিজেদের বাড়ির দিকে চলে যেতে থাকেন।

লঞ্চের যাত্রী সোনিয়া আক্তার (২৫) বরগুনার তালতলী উপজেলার গাবতলী গ্রামে ফিরছিলেন। তিনি আশ্রয় নিয়েছিলেন দিয়াকুল গ্রামের আকন বাড়িতে। 

দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'দিয়াকুল গ্রামে নোঙর করার সঙ্গে সঙ্গে লঞ্চ থেকে নামার চেষ্টা করি। লঞ্চের ভেতরে অনেক ধোঁয়া থাকায় আমার মা আর ছোট ছেলেকে খুঁজে পাইনি।'

তিনি জানান, লঞ্চ থেকে নামার পর স্থানীয়রা তাকে দিয়াকুল গ্রামের আকন বাড়িতে নিয়ে যায়।

দিয়াকুল গ্রামের বাসিন্দা মো. শামীম হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ভোর ৩টা থেকে আগুন না নেভা পর্যন্ত আমরা যাত্রীদের বাঁচাতে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি।'

গ্রামের আরেক বাসিন্দা রিপন আকন বলেন, 'লঞ্চে আগুন লাগার পর ৮০০ জনেরও বেশি যাত্রী নদী থেকে গ্রামের ভেতরে চলে আসেন।'

'আমরা আমাদের বাড়িতে অন্তত ১৫০ জন যাত্রীকে আশ্রয় দিয়েছিলাম,' বলেন তিনি।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় ঢাকার সদরঘাট থেকে লঞ্চটি বরগুনার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার দপদপিয়া এলাকায় পৌঁছানোর পর এর ইঞ্জিনে সমস্যা দেখা দেয়। কিন্তু পথে ৩-৪টি ঘাটে লঞ্চটি নোঙর করেননি চালক।

লঞ্চটি ঝালকাঠি সদর উপজেলার চরকাঠি গ্রামের বিষখাঁলী নদীতে পৌঁছানোর পর ইঞ্জিনে আগুন ধরে যায় এবং আগুন পুরো লঞ্চে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর জোয়ারে লঞ্চটি ভেসে দিয়াকুল গ্রামে সুগন্ধা নদীর পাড়ে এসে নোঙর করে।

আগুন লাগার ঘটনায় শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত লঞ্চ ও নদী থেকে ৩৫ জনের দগ্ধ মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

Cumilla rape: Main accused among two more arrested

Three others were arrested in the same case early today

1h ago