দুর্ঘটনায় আহতের পকেট থেকে টাকা চুরি, সিসিটিভি ফুটেজ দেখে উদ্ধার
বিভিন্ন যানবাহনে যাত্রীর কাছ থেকে পড়ে যাওয়া টাকা বা মূল্যবান সামগ্রী ফেরত দেওয়ার অনেক মহৎ দৃষ্টান্ত থাকলেও, পিরোজপুরে দুর্ঘটনায় আহত এক স্কুলশিক্ষককে হাসপাতালে নেওয়ার পর তার পকেট থেকে টাকা চুরির ঘটনা ঘটেছে।
তবে পকেট থেকে টাকা চুরির দৃশ্য ধরা পড়ে হাসপাতালের সিসিটিভি ক্যামেরায়। ভিডিও ফুটেজটি গতকাল রোববার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ার পর টাকা চুরি করা ওই ব্যক্তিকে শনাক্ত করে পুলিশ।
চুরির ৫০ হাজার টাকা উদ্ধারের পর সোমবার তা ওই শিক্ষকের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
পিরোজপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জাফর মো. মাসুদুজ্জামান গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, গত শুক্রবার দুই মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে আহত হন পিরোজপুর শহরের করিমুন্নেছা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কৃষি বিষয়ের শিক্ষক মিলন কৃষ্ণ মজুমদার (৫৫)। তাকে হাসপাতালে নেওয়ার পর তার পকেট থেকে টাকা চুরি করেন সদর উপজেলার শংকরপাশা গ্রামের অটোরিকশা চালক মিন্টু (৫০)।
শিক্ষক মিলন কৃষ্ণ খুলনার একটি বেসরকারি হাসপাতালে শনিবার সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
করিমুন্নেছা বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. জাহিদুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, শুক্রবার বিকেল সোয়া ৩টার দিকে শিক্ষক মিলন কৃষ্ণ নিজের মোটরসাইকেলে করে একটি জমি কেনার বায়নার ৫০ হাজার টাকা নিয়ে শহরের আফতাবউদ্দিন কলেজের দিকে যাচ্ছিলেন।
পিরোজপুর পৌরসভার সামনে পৌঁছার পর বিপরীত দিক থেকে আসা একটি মোটরসাইকেলের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে মাথায় মারাত্মক আঘাত পান মিলন। সদর উপজেলার হুলারহাট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক গৌতম মালাকার তাকে উদ্ধার করে মিন্টুর অটোরিকশা করে পিরোজপুর জেলা হাসপাতালে নিয়ে যান।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগেই ওই টাকা চুরির ঘটনা ঘটে।
জরুরি বিভাগের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, হাসপাতালে পৌঁছানোর পর হলুদ গেঞ্জি ও লুঙ্গি পরা অটোরিকশা চালক মিন্টু গৌতম ও হাসপাতালের কর্মচারীদের সহযোগিতা করছিলেন। মিলনের পকেট থেকে মানিব্যাগ ও মোবাইল ফোন বের করে গৌতমের কাছে জমা দেন মিন্টু।
তবে এক ফাঁকে আহত শিক্ষক মিলনের ডান পকেট থেকে টাকার একটি বান্ডিল বের করে তা নিজের লুঙ্গির মধ্যে লুকিয়ে সেখান থেকে চলে যান মিন্টু।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. জাহিদুল ইসলাম জানান, পরে হাসপাতালে মিলনের স্ত্রী এসে ৫০ হাজার টাকার খোঁজ করেন। পরে তিনি পুলিশের শরণাপন্ন হলে পুলিশ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে এবং তা দেখে অটোরিকশা চালক মিন্টুকে শনাক্ত করে।
সে সময়ে জরুরি বিভাগে কর্মরত জেলা হাসপাতালের কর্মচারী নজরুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে জানান, ভিড়ের মধ্যে মাঝে মাঝে ছোট চুরির ঘটনা ঘটলেও, এ ধরনের ঘটনা হাসপাতালে প্রথম।
তবে সিসিটিভি ক্যামেরায় বিষয়টি ধরা না পড়লে টাকা চুরির দায় হাসপাতালের কর্মচারীদের ওপর আসত বলে জানান তিনি।
ওসি আবু জাফর মো. মাসুদুজ্জামান জানান, মিন্টুর কাছ থেকে টাকা উদ্ধার করে সোমবার মৃত শিক্ষকের পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
Comments