‘চোখের সামনেই চেনা মানুষগুলো অচেনা হয়ে গেল’

ছবি: সংগৃহীত

'দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে ভাই-বন্ধুর মতো আমরা একসঙ্গে এই এলাকায় বসবাস করে আসছি। সুখে-দুঃখে তারাই ছিলেন পরম আপনজন। কিন্তু হটাৎ করে চেনা মানুষগুলো কেমন অচেনা হয়ে গেল,' বলছিলেন বান্দরবানের লামা বাজারের দোকানদার মধু কান্তি দাশ।

গত বৃহস্পতিবার দুপুরে মধুর দোকানসহ সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রায় ২৫টি দোকান ভাঙচুর ও লুটপাট হয়।

মধু দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রাণ বাঁচাতে আমি দোকানের পেছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে যাই।'

'তারা আমার দোকানের ৩টি কম্পিউটার, ৪টি ফটোকপি মেশিন, ক্যামেরা, আইপিএস ভেঙে ফেলেছে এবং প্রায় এক ট্রাক কাগজ নষ্ট করেছে,' বলেন তিনি।

'যাদের সঙ্গে এত হৃদ্যতা ছিল সেই মানুষগুলো কিভাবে হটাৎ করে পাল্টে গিয়ে আমাদের দোকান ভাঙচুর করল, আমাদের প্রাণে মেরে ফেলতে চাইল,' যোগ করেন তিনি।

কুমিল্লার ঘটনার প্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার লামায় স্থানীয়রা একটি প্রতিবাদ সমাবেশ করে। সমাবেশ শেষে একটি দল লামা কেন্দ্রীয় হরি মন্দিরে হামলা করে। পরে তারা স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দোকান ভাঙচুর ও লুটপাট করে। হামলা ঠেকাতে পুলিশ অবস্থান নিলে, পুলিশের ওপরও হামলা চালায় তারা।

লামা কেন্দ্রীয় হরি মন্দিরের সভাপতি প্রশান্ত ভট্টাচার্য দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'লামা বাজার এলাকায় প্রায় ৪০০ হিন্দু পরিবারের বসবাস। বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে তারা মিছিল করে এবং পরে তারা আমাদের মন্দিরে হামলা শুরু করে এবং প্রায় ৩ ঘণ্টা সেখানে তাণ্ডব চালায়। এ ঘটনার পর আমাদের সম্প্রদায়ের এই পরিবারগুলো আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।'

প্রশান্ত বলেন, 'আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের সামনেই তারা আমাদের মন্দিরে হামলা করে আমাদের লোকজনকে আহত করেছে।'

তিনি বলেন, 'লামায় হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্তত ২০-২৫টি দোকান ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে।'

জানতে চাইলে লামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোস্তফা জাবেদ কায়সার বলেন, 'সমাবেশ করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আমি মৌখিকভাবে অনুমতি দিয়েছিলাম। আমাকে বলা হয়েছিল প্রায় ২০০ মানুষের উপস্থিতিতে একটি প্রতিবাদ সমাবেশ হবে। কিন্তু সেখানে মুহূর্তের মধ্যে কয়েক হাজার মানুষ জড়ো হয়ে গিয়েছিল।'

পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে প্রতিবাদ সমাবেশ শুরু হয়। সমাবেশে লামা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম বক্তব্য রেখেছিলেন।

এই বিষয়ে জানতে জহিরুল ইসলামকে ফোন করলে তার নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।

তবে লামা উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল বলেন, 'পরিকল্পিতভাবে একটা গ্রুপ এই হামলা চালিয়েছে।'

বান্দরবানের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সুরাইয়া আক্তার সুইটি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সভা শেষ করে চলে যাওয়ার সময় হটাৎ করে এত মানুষ চলে এসেছিল যে তখন আর আসলে আমাদের কিছুই করার ছিল না।'

বান্দরবানের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) অশোক কুমার পাল জানান, বৃহস্পতিবারের হামলায় লামা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও পুলিশের প্রায় ১০ জন সদস্যসহ প্রায় ২৫ জন আহত হয়েছেন।

বান্দরবানের পুলিশ সুপার জেরিন আখতার জানান, পুলিশের ওপর হামলা, মন্দিরে ভাঙচুর, দোকান ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি এবং গ্রেপ্তারও নেই।

'কার ইন্ধনে এই হামলা হয়েছে এবং কারা কারা এই হামলায় জড়িত আমরা এখনও তদন্ত করছি', বলেন পুলিশ সুপার।

Comments

The Daily Star  | English

Grim discovery: Five bodies found on vessel in Meghna

The incident had occurred on the Meghna river under Chandpur Sadar upazila in an area adjacent to Shariatpur

2h ago