খ্রিষ্টান-বৌদ্ধ: সরকারি ব্যবস্থাপনায় ঢাকায় নেই কবরস্থান-শ্মশান

প্রায় ২ কোটি মানুষের শহর ঢাকা। এখানে প্রায় ২ লাখ মানুষ খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের এবং প্রায় ৩০ হাজার মানুষ বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের। মৃত্যুর পর রাজধানীতে বসবাসকারী এই মানুষগুলোর সৎকারে নেই সরকারি কোনো ব্যবস্থা।

নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের মানুষ মরদেহ সমাহিত করেন। আর বৌদ্ধদের মরদেহ দাহ করা হয় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শ্মশানে।

সরকারিভাবে তাদের জন্য কবরস্থান ও শ্মশান নির্মাণের দাবি তাদের দীর্ঘদিনের। কিন্তু এ দাবি বাস্তবায়নের নেই কোনো উদ্যোগ।

এ বিষয়ে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সারাদেশেই খ্রিষ্টান ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষের জন্য কবরস্থান ও শ্মশান করার পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। যার জন্য ইতোমধ্যে আলোচনা শুরু করেছি। এর জন্য জেলা প্রশাসকদের সরকারি খাস জমি খোঁজারও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।'

ঢাকা শহরের বিষয়ে তিনি বলেন, 'ঢাকার ক্ষেত্রেও আমাদের একই পরিকল্পনা রয়েছে। যদি সরকারি খাস জমি পাওয়া যায়, তাহলে আমরা কবরস্থান ও শ্মশান করবো।'

নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় মরদেহ সমাহিত করেন খ্রিষ্টানরা

ঢাকার ২ সিটি করপোরেশনের কোনোটিতেই খ্রিষ্টানদের সমাহিত করার জন্য নির্ধারিত স্থান নেই। নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ঢাকার ৩টি স্থানে খ্রিষ্টানদের মরদেহ সমাহিত করা হয়।

এর মধ্যে আয়তনের দিক থেকে সবচেয়ে বড় ওয়ারী খ্রিষ্টান কবরস্থান। ১৬ বিঘা আয়তনের এই কবরস্থানটি তালিকাভুক্ত ঐতিহাসিক স্থাপনা। এখানে ক্যাথলিক ও প্রটেস্ট্যান্ট—২ মতাদর্শের খ্রিষ্টানদেরই সমাহিত করা হয়। দীর্ঘদিনের পুরোনো কবর থাকায় এখানে এখন স্থান সংকট। বর্তমানে ক্যাথলিক ও প্রটেস্ট্যান্ট মতাদর্শের খ্রিষ্টানদের সমন্বয়ে একটি কমিটি তৈরি করে এর রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়।

বাকি ২টি হলো—তেজগাঁও খ্রিষ্টান কবরস্থান এবং মোহাম্মদপুরের সেন্ট জোসেফ খ্রিষ্টান কবরস্থান। ২টি কবরস্থানেরই আয়তন ২ বিঘা করে। তবে এখানে শুধুমাত্র ক্যাথলিকদের সমাহিত করার ব্যবস্থা রয়েছে।

এ বিষয়ে খ্রিষ্টান ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের সচিব এবং বাংলাদেশ খ্রিষ্টান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নির্মল রোজারিও ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সরকারিভাবে খ্রিষ্টানদের সমাহিত করার ব্যবস্থা ঢাকা শহরে নেই। ৩টি কবরস্থানের প্রতিটিই নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হচ্ছে। আমাদের জন্য একটি বড় আয়তনের কবরস্থানের জন্য দীর্ঘদিন ধরেই দাবি জানিয়ে আসছি।'

হিন্দুদের শ্মশানে বৌদ্ধদের সৎকার

ঢাকায় বৌদ্ধদের মরদেহ দাহ করার জন্য আলাদা কোনো শ্মশান নেই। পূর্ব বাসাবোর রাজারবাগ কালী মন্দির সংলগ্ন হিন্দু শ্মশানে নিজ সম্প্রদায়ের মানুষদের দাহ করেন বৌদ্ধরা। তবে ঢাকার বাইরে আশুলিয়া বৌদ্ধ বিহার এবং চট্টগ্রামে সিটি করপোরেশনের পরিচালনায় একটি করে শ্মশান রয়েছে।

ঢাকায় বসবাসরত বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের নিপু বড়ুয়া ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা দীর্ঘদিন ধরেই বৌদ্ধদের জন্য আলাদা একটি শ্মশানের দাবি জানিয়ে আসছি। সবাই রাজারবাগ শ্মশানে দাহ করতে পারেন না। যার কারণে বেশিরভাগ বৌদ্ধরাই নিজ নিজ এলাকায় নিয়ে মরদেহ দাহ করেন। এটি সময় এবং খরচসাপেক্ষ।'

এ বিষয়ে বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের সচিব জয় দত্ত বড়ুয়া ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বৌদ্ধদের জন্য পৃথক শ্মশানের বিষয়ে সরকারের পক্ষে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু উপযুক্ত জায়গার অভাবে এটি হচ্ছে না।'

তিনি আরও বলেন, 'আমরা রাজারবাগ কালি মন্দির সংলগ্ন শ্মশানের পাশে একটি স্থান দেওয়ার জন্য প্রস্তাব করেছিলাম। কিন্তু সেখানে জায়গা না পাওয়ায় এখনও সেটি হয়নি। এর বাইরে আমরা বাসাবো বৌদ্ধ বিহারের ভেতরে একটি শ্মশান করা যায় কিনা, সে বিষয়েও ভাবছি।'

Comments

The Daily Star  | English

Trump says US carried out 'very successful attack' on three Iran nuclear sites

"A full payload of BOMBS was dropped on the primary site, Fordow."

Now