খন্দকার মোশতাককে শ্রদ্ধা অনিচ্ছাকৃত, ক্ষমা চাই: অধ্যাপক রহমত উল্লাহ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন অধ্যাপক মো. রহমত উল্লাহ। ছবি: স্টার

খন্দকার মোশতাকের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর বিষয়টি 'অনিচ্ছাকৃত' উল্লেখ করে এ ঘটনায় ক্ষমা চেয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. রহমত উল্লাহ।

গতকাল ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবসে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে আলোচনা সভার আয়োজন করেছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সেখানে অধ্যাপক মো. রহমত উল্লাহ মুজিবনগর সরকারের সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে খন্দকার মোশতাক আহমদের প্রতিও শ্রদ্ধা জানিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তিনি আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন নীল দল থেকে নির্বাচিত সভাপতি।

আজ সোমবার সকালে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন অধ্যাপক মো. রহমত উল্লাহ। সেসময় অনিচ্ছাকৃতভাবে খন্দকার মোশতাকের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোয় ক্ষমা প্রার্থনা করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি বলেন, 'গতকালের আলোচনা সভায় বক্তব্য প্রদানকালে আমি যদি অজ্ঞতাবশত কোনো শব্দ-বাক্য উচ্চারণ করে থাকি, তা নিতান্তই আমার অনিচ্ছাকৃত ভুল। এজন্য আমি ব্যক্তিগতভাবে দুঃখ প্রকাশ ও ক্ষমা প্রার্থনা করছি। একইসঙ্গে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির মধ্যে যেন কোনো ধরনের ভুল বুঝাবুঝি সৃষ্টি না হয়, সে বিষয়ে সচেতন থাকার জন্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক-বাহক এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অনুসারী সকলের প্রতি সনির্বন্ধ অনুরোধ জানাচ্ছি।'

'আলোচনাকালে মুজিবনগর সরকারে কে কোন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছিলেন তা উল্লেখ করি এবং মুজিবনগর সরকারের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করি। আমার বক্তব্যের একপর্যায়ে মুজিবনগর সরকারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কুলাঙ্গার এবং মুক্তিযুদ্ধকালীন ও পরবর্তীকালে জাতির সঙ্গে বিশ্বঘাতকতাকারী বঙ্গবন্ধুর খুনি খন্দকার মোস্তাক আহমেদের প্রতি আমি আমার ব্যক্তিগত ঘৃণা ও ক্ষোভ প্রকাশ করি', যোগ করেন তিনি।

অধ্যাপক ড. রহমত উল্লাহ বলেন, 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক আয়োজিত ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় আমি মুজিবনগর সরকার গঠনের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট হিসেবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ, ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু কর্তৃক স্বাধীনতার ঘোষণা, ১০ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠন ও স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র এবং ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকারের শপথ গ্রহণসহ মুক্তিযুদ্ধকালীন এ সরকারের কর্মপরিকল্পনা এবং মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী স্বাধীন বাংলাদেশ বিনির্মাণ বিষয়ে আলোচনা করি।'

তিনি আরও বলেন, 'আমি ব্যক্তিগত ও পারিবারিকভাবে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের প্রতি অবিচল থেকে দেশ ও জাতির স্বার্থে কাজ করে যাচ্ছি। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি নীল দল থেকে প্রথমবারের মতো লেকচারার ক্যাটাগরিতে সিন্ডিকেট সদস্য নির্বাচিত হই। এরপর থেকে অদ্যাবধি আমি বহুবার নীল দল থেকে মনোনীত হয়ে সিনেট, সিন্ডিকেট, ডিন, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এবং সভাপতি নির্বাচিত হয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি তথা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছি।'

'শিক্ষক সমিতির নেতৃত্ব প্রদানকালে সর্বদা সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে সোচ্চার থেকেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির ব্যানারে নিকট অতীতে সুনামগঞ্জের শাল্লা, কুমিল্লা ও নোয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক শক্তির আস্ফালন এবং বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণকে কেন্দ্র করে মৌলবাদী চক্র ও ঘোলা জলে মাছ শিকারি তথাকথিত রাজনৈতিক অপশক্তির অরাজকতা সৃষ্টির অপচেষ্টার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কর্মসূচিসহ জনমত গঠনে আমার ভূমিকা গণমাধ্যমে বহুল প্রচারিত হয়েছে', যোগ করেন তিনি।

এদিকে, খন্দকার মোশতাকের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অধ্যাপক ড. রহমত উল্লাহর বিচারের দাবিতে দুপুর সোয়া ১২টার দিকে ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জমানের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে ঢাবি শাখা ছাত্রলীগ।

Comments

The Daily Star  | English

4 years could be maximum one can go before election: Yunus tells Al Jazeera

Says govt's intention is to hold election as early as possible

44m ago