হারিয়ে যাচ্ছে উত্তরের ‘রুপালি’ মাছ বৈরালী

এক কেজিতে প্রায় সাড়ে ৫ থেকে ৬ হাজার বৈরালী পোনা থাকে। ছবি: এস দিলীপ রায়

বৈরালী মাছ রংপুর অঞ্চলে 'রুপালি' মাছ হিসেবে পরিচিত। ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা ও ধরলা নদীর অববাহিকার জেলা কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও গাইবান্ধায় পাওয়া যায় এ মাছ। একসময় বৈরালী মাছ দিয়ে এ অঞ্চলে মাছের চাহিদা অনেকটাই মিটতো। তবে বর্তমানে বিলুপ্তির পথে উত্তরের ঐতিহ্য ও সুস্বাদু এই মাছটি।

বৈরালী মাছ কমে যাওয়ার ৩টি কারণ চিহ্নিত করেছে মৎস্য বিভাগ। সেগুলো হলো মাত্রারিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার, কারেন্ট জাল দিয়ে পোনা মাছ শিকার ও মাছের অভয়াশ্রম থেকে মা মাছ শিকার।

মৎস্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা ও ধরলা নদী থেকে প্রতিদিন প্রায় ৩ থেকে সাড়ে ৩ কেজি বৈরালী পোনা শিকার করছেন জেলেরা। এসব পোনা মিলছে স্থানীয় হাট বাজারে যা প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০-৫০০ টাকায়। এপ্রিল মাস আসলে পোনা বড় মাছ হতো। এক কেজিতে প্রায় সাড়ে ৫ থেকে ৬ হাজার বৈরালী পোনা থাকে। এসব পোনা বড় হলে এপ্রিল-মে মাসে ওজন হতো প্রায় ৪ মণ। জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস বৈরালী মাছের প্রজনন ও বেড়ে উঠার সময়।

ছবি: এস দিলীপ রায়

কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে জোড়গাছ মাঝিপাড়া গ্রামের জেলে প্রফুল্ল চন্দ্র দাস দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, '৬-৭ বছর আগেও তারা কারেন্ট নেট দিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদে মাছ ধরতেন না। স্থানীয় কিছু মৌসুমি মাছ শিকারি এ জালের ব্যবহার শুরু করলে তারাও বাধ্য হয়ে এ জাল ব্যবহার করছেন। আমরাও জানি এক পোয়া (২৫০ গ্রাম) বৈরালী পোনা প্রায় এক মণ মাছের সমান। কিন্তু জীবন জীবিকার জন্য বাধ্য হয়েই বৈরালী পোনা ধরছি।'

তিনি বলেন, 'জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চ এই ৩ মাস ব্রহ্মপুত্রে মাছ ধরা বন্ধ রাখতে হবে। আমরাও এটা চাই। কিন্তু ৩ মাসের জন্য আমাদের ভরণপোষণের দায়িত্ব নিতে হবে সরকারকে।'

লালমনিরহাট সদর উপজেলার তিস্তাপাড়ের কালমাটি মাঝিপাড়া গ্রামের জেলে নেফারু চন্দ্র দাস ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তিস্তায় এখন আর অন্য মাছের দেখা মিলছে না। জাল ফেললে সামান্য কিছু বৈরালী পোনা উঠছে। পোনাগুলো বেড়ে উঠার সুযোগ পেলে এগুলো বড় সাইজে পরিণত হতো এবং বৈরালী মাছের ব্যাপক বৃদ্ধি ঘটতো। এ জন্য দরকার সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় জেলেদের সহায়তা করা। বৈরালী মাছ আমাদের এ অঞ্চলের রুপালি মাছ। কিন্তু এ রুপালী মাছে চোখের সামনেই হারিয়ে যাচ্ছে।'

কুড়িগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তা কালিপদ রায় দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ইলিশ মাছ রক্ষা ও প্রজনন বৃদ্ধিতে সরকারি উদ্যোগ থাকলেও বৈরালী মাছ রক্ষা ও প্রজনন বৃদ্ধিতে এখনো কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। জানুয়ারি থেকে মার্চ এই ৩ মাস জেলেরা বৈরালী মাছের পোনা শিকার থেকে বিরত থাকলে মাছ রক্ষা ও প্রজনন বাড়ানো সম্ভব। সেই সঙ্গে অন্যান্য মাছের প্রজননও বৃদ্ধি পেতো।'

তিনি বলেন, 'জেলেদের ৩ মাসের ভরণপোষণে সহায়তা করা গেলে তাদের বুঝানো যেতো। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।'

লালমনিরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারুকুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কারেন্ট জাল দিয়ে নদীতে পোনা মাছ শিকারের বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় অভিযান চালানো হলেও তাতে কোনো কাজ হচ্ছে না। বৈরালী মাছ রক্ষা ও প্রজনন বৃদ্ধি এখন সময়ের দাবি। এ মাছের চাহিদা ব্যাপক। ইলিশের মতো বৈরালী মাছ রক্ষায় সরকারিভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে তা অবশ্যই বাস্তবায়ন করা হবে।'

   

Comments

The Daily Star  | English
sirens sound in israel after iran missile attack

Sirens sounded after missiles launched from Iran, says Israeli army

Trump to decide within two weeks on possible military involvement

14h ago