নাটোরে পাটচাষিদের কান্না!

পানির অভাবে জমিতেই শুকিয়ে নষ্ট হচ্ছে কৃষকদের মূল্যবান পাট। ছবি: স্টার

কৃষকের কাছে ফসল সন্তানের মতই। চোখের সামনে সেই সন্তানের মৃত্যু দেখছে নাটোরের কৃষকরা। খরায় পানির অভাবে জমিতেই শুকিয়ে নষ্ট হচ্ছে কৃষকদের মূল্যবান পাট। দেশের রপ্তানি আয় বাড়াতে ভূমিকা রাখা কৃষকের পাট নষ্ট হয়ে যাওয়া নিয়ে কারো যেন মাথা নেই।

এমন পরিস্থিতিতে মানব বন্ধন প্রতিবাদ সমাবেশ করেও কোনো ফল পাচ্ছেন না নাটোরের কৃষকরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, খরায় পানির অভাবে রোটিং করতে না পেরে জমির পাট নষ্ট হয়ে গেছে। পাটকাঠিগুলো কেটে খড়ি বানাচ্ছেন আর চোখের পানি মুছছেন নাটোরের বড়াইগ্রামের জামিলা বেগম। শুধু জামিলা বেগম নয় এই এলাকার অনেক কৃষকের একই অবস্থা।

ছবি: স্টার

বড়াইগ্রাম উপজেলার নগর গ্রামের কিষাণী জমিলা বেগম (৫৬) । অন্যের ২ বিঘা জমি লিজ নিয়ে করেছেন পাট চাষ। স্বামী শারীরিকভাবে অসুস্থ হওয়ায় জমিতে শ্রমিক দিয়ে কাজ করিয়ে পাট আবাদে বাড়তি খরচ হয়েছে তার। কিন্তু এখন সেই পাট শেকড়সহ উপড়ে নিয়ে এসে জ্বালানি খড়ি বানাতে হচ্ছে তাকে। এর চাইতে কষ্টের আর কিছু নেই বলে মন্তব্য করতে গিয়েই কেঁদে ফেলেন অসহায় এই কিষাণী।

বড়াইগ্রাম উপজেলার নাজিরপুর গ্রামের কৃষক রহেদ আলী (৭২) বলেন, তার বয়সে এমন খরা দেখেননি। শ্রাবণ মাসে এই সময়ে চলনবিলের সাতইল বিল পানিতে ডুবে থাকে। কিন্তু জীবনে এই প্রথমবার তিনি দেখলেন সাতইল বিলের কৃষকরা পানির অভাবে পাট রোটিং করতে পারছেন না।

তিনি বলেন, যমুনা এবং পদ্মা নদীর স্লুইসগেট খুলে দিলে এই পানির সংকট থাকবে না।

চৌমহন গ্রামের আরেক কৃষক লাল সরদার বলেন, পাটজাগ দেওয়ার জন্য একটু পানির সন্ধানে ছুটছেন তারা। কোথাও বা একটু পানি মিললেও হাঁটু সমান কালো নোংরা পানিতে পাট জাগ দেওয়ায় নষ্ট হচ্ছে পাটের রং। যাতে করে আশানুরূপ দাম মিলবে না। এতে বড় ধরনের লোকসানের আশঙ্কা করছেন তারা।

নাটোরের শুকিয়ে গেছে নদী-নালা। ছবি: স্টার

নাটোর সদর উপজেলার বাঙ্গাবাড়িয়া গ্রামের পাটচাষি ছমির উদ্দিন বলেন, পাট আবাদ করতে জমি চাষ, নিড়ানি, বীজ, সার, সেচসহ নানা খাতে এবছর বিঘা প্রতি ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এখন পাট কাটতেও শ্রমিক খরচ হবে। কিন্তু পাট কেটে রেখে দিলে হয়না। সঙ্গে সঙ্গে ডোবাতে হয়। পানি না থাকলে কোথায় কৃষকরা পাট ডোবাবে সেই চিন্তায় বেশিরভাগ কৃষক না কেটে পাট জমিতেই রেখে দিচ্ছে। তাতেও পাট মরে শুকিয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশের কৃষক সমিতির সংগঠক মোহম্মদ আলফুজ্জামান বলেন, পানির অভাবে পাট জাগ দিতে পারছেন না নাটোরের কৃষক। পাট নিয়ে দূর দূরান্তে ছুটছেন পানির সন্ধানে। এতে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধিতে লোকসানে কৃষক। এমন পরিস্থিতিতে রাজশাহীর চারঘাটে পদ্মা নদীর স্লুইসগেট এবং সিরাজগঞ্জের ডেমরায় যমুনা নদীর স্লুইসগেট খুলে দেওয়ার দাবিতে কৃষকদের নিয়ে মানববন্ধন করছে নাটোরের কৃষক সমিতি। কিন্তু তাতেও কোনো ফল হচ্ছে না। কর্তৃপক্ষ কৃষকদের কথা ভাবছে না।  কৃষকদের পানি সংকট থেকে বাঁচানোর জন্য নদীনালা, খাল-বিল দখল মুক্ত এবং সচল করার দাবি জানান তারা।

কৃষক নেতা নির্মল চৌধুরী বলেন, দেশের একদিকে বন্যায় ডুবছে আর উত্তরাঞ্চলের কৃষকরা পানির জন্য হাহাকার করছে। এখন কৃষকের জন্য দ্রুত পানির ব্যবস্থা করতে স্লুইসগেট, নদীর অবৈধ বাঁধ ভেঙ্গে দিতে হবে। কৃষকদের জন্য শস্য বীমা চালু থাকলে এমন পরিস্থিতিতে কৃষকরা সহায়তা পেত। কৃষকরা যদি ফসল উৎপাদন করে লোকসানে পড়ে তাহলে দেশের উৎপাদন ব্যহত হবে। কৃষি বিভাগের দেয়া রিবন রোটিং পদ্ধতি কখনই কাজে আসেনি। এতে কৃষকদের আরও ভোগান্তি বাড়বে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, চলতি মৌসুমে ৩২ হাজার হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে যা লক্ষ্যমাত্রার চাইতে ৭ হাজার হেক্টর বেশি। বৃষ্টিপাত না হওয়ায় পাট জাগ নিয়ে কৃষকদের বিপদের কথা চিন্তা করে কৃষি বিভাগের রিবন রোটিং পদ্ধতির ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

Comments

The Daily Star  | English

Drug sales growth slows amid high inflation

Sales growth of drugs slowed down in fiscal year 2023-24 ending last June, which could be an effect of high inflationary pressure prevailing in the country over the last two years.

17h ago