ওয়াসার পানি ড্রিংকেবল ওয়াটার, ড্রিংকিং ওয়াটার নয়: এমডি

তাকসিম এ খান। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান ২০১৯ সাল থেকে দাবি করে আসছেন, ওয়াসার পানি শতভাগ সুপেয়। যদিও এর আগে থেকেই রাজধানীবাসী অভিযোগ তুলছে, ওয়াসার পানি ব্যবহার অযোগ্য।

আজ মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে তাকসিম এ খান পানি ফুটিয়ে খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

এ বিষয়ে দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'আমরা ওয়াসার জন্ম থেকেই বলে আসছি পানি ফুটিয়ে খেতে। আমিই গত ১২-১৪ বছর ধরে বলে আসছি, পানি অন্তত ১০ মিনিট ফুটিয়ে খাবেন।'

ওয়াসার পানির শতভাগ সুপেয়তার কথা স্মরণ করিয়ে দিলে তিনি বলেন, 'আমরা যে পানি দেই সেটা ড্রিংকেবল ওয়াটার, ড্রিংকিং ওয়াটার না।'

তিনি আরও বলেন, 'আমাদের পানি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মান অনুযায়ী ড্রিংকেবল ওয়াটার। পানি লাইনে যাওয়ার পর অনেক সময় বিপত্তি ঘটে, সেটা হয় লাইন ফাটা থাকার কারণে বা ভাঙা থাকার কারণে।'

তিনি দাবি করেন, '৫ থেকে ৭ শতাংশ এলাকায় আমাদের পানিতে কন্টামিনেশন (দূষণ) থাকে। এই কন্টামিনেশনটাও আমরা সঙ্গে সঙ্গে রিপেয়ার করে ফেলি। আজ যদি গেণ্ডারিয়ায় অভিযোগ থাকে, তো কাল মিরপুরে থাকবে। এভাবে সব সময়ই ৫ থেকে ৭ শতাংশ জায়গায় এই সমস্যা থাকে। বাকি ৯৫ শতাংশ এলাকায় ঠিক থাকে।'

'সুপেয় পানির সরবতে'র বিষয়টিতে রাজনৈতিক দাবি করে তাকসিম বলেন, 'আমাদের কাছে যখন অভিযোগ জমা দেয় তখন সেখানে বলা থাকে ৫ দিন বা ৭ দিন আগে থেকে এই তাদের এলাকায় সমস্যার শুরু। এর কারণও খুব পরিষ্কার থাকে। কোনো না কোনো ভাবে ওই এলাকায় পানি সরবরাহ লাইন ভেঙে গেছে বা ফুটো হয়ে গেছে। সেটা রিপেয়ার করে দিলেই ঠিক হয়ে যায়। আবার দেখা যায় অন্য কোনো এলাকা থেকে এমন অভিযোগ আসে।'

ঢাকায় চলমান উন্নয়ন কাজের সময় বিভিন্ন সংস্থা যখন মাটির নিচে কাজ করতে যায় তখন লাইন ফুটো হয়ে যাওয়া বা ভেঙে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটে বলে জানান তিনি।

সম্প্রতি ঢাকায় বেড়ে গেছে ডায়রিয়ার প্রকোপ। ফলে হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি) মহাখালী হাসপাতালে রোগীর চাপ এতই বেশি যে, অতিরিক্ত রোগীর চাপ সামলাতে ৩৫০ শয্যার হাসপাতালটির প্রাঙ্গণে তাঁবু টানিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হচ্ছে। প্রতিদিন হাসপাতালটিতে আসা রোগীর সংখ্যা প্রায় ১ হাজার ২০০ জন।

ঢাকায় ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধিতে ওয়াসার কোনো দায় নেই জানিয়ে তাকসিম এ খান বলেন, 'আইসিডিডিআর,বির সঙ্গে আমাদের সব সময় যোগাযোগ আছে। তারা আমাদের বিভিন্ন এলাকার পানি পরীক্ষা করতে বলেছিল। আমরা সঙ্গে সঙ্গে পরীক্ষা করেছি ১০টি জায়গায়। এর মধ্যে ৯০ শতাংশ জায়গাতেই কোনো রকমের কলিফর্ম বা ইকোলাই পাওয়া যায়নি। কাজেই ডায়রিয়ার সঙ্গে ওয়াসার কোনো সম্পর্ক নেই।'

তিনি আরও বলেন, 'তারপরও প্রিভেন্টিভ মেজার হিসেবে পানিতে যদি জীবাণু থাকে সেটা ধ্বংস করতে আমরা যে ক্লোরিন ব্যবহার করি সেটার মাত্রা একটু বাড়িয়ে দিয়েছি। যাতে করে কোনোভাবে যদি লাইনে ব্যাকটেরিয়ার জন্মও হয় সেটা যেন ধ্বংস হয়ে যায়।'

বাংলাদেশে কলেরা নেই দাবি করে তিনি আরও বলেন, 'আমরা ঢাকায় পানি পরীক্ষা করে কোথাও ভিব্রিও কলেরার জীবাণু পাইনি। যেহেতু দেশে কলেরা নেই তাই এটা আমাদের রুটিন পরীক্ষা নয়। অভিযোগ ওঠার প্রেক্ষিতে আমরা এই পরীক্ষা করেছিলাম।'

'আইসিডিডিআর,বি যে সমস্যাগুলোর কারণে ডায়রিয়া হয় বলে জানিয়েছে তার মধ্যে একটি হচ্ছে পানিবাহিত। অবশ্যই এটা পানিবাহিত রোগ। রাস্তা থেকে যে পানি খাচ্ছেন সেটা থেকে হতেই পারে,' যোগ করেন তিনি।

ঢাকার পানির সমস্যার স্থায়ী সমাধানে ডিএমএ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। ২০২১ সালে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের ঋণে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়।

ঢাকায় এখন একটি সরবরাহ চেইনের অধীনে পানি সরবরাহ করা হয়। ডিএমএ প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকাকে ১৫০টি ভাগে ভাগ করা হবে। যার প্রতিটি ভাগে আলাদা সরবরাহ ব্যবস্থা থাকবে।

ঢাকা ওয়াসার এমডি বলেন, 'এটার কাজ শেষ হলে আমাদের দিক থেকে পানি ১০০ শতাংশ ঠিক থাকবে। তখন শুধু বাড়িতে পানির হাউজগুলোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।'

কবে নাগাদ এই কাজ শেষ হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, '৬৪ থেকে ৭০টির মতো কাজ শেষ হয়েছে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে এর কাজ শেষ হতে পারে।'

তিনি আরও বলেন, 'ঢাকা বাড়ছে, তাই আমাদের কাজের পরিধিও বাড়ছে। নতুন এলাকা বাড়লে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হতে বাড়তি সময় লাগবে।'

Comments

The Daily Star  | English

$14b lost to capital flight a year during AL years

Bangladesh has lost around $14 billion a year on average to capital flight during the Awami League’s 15-year tenure, according to the draft report of the committee preparing a white paper on the economy.

9h ago