‘সোহেল চৌধুরী হত্যার পেছনে আজিজ মোহাম্মদ ভাই ও ট্রাম্পস ক্লাবের ২ মালিক’

সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার আশীষ রায় চৌধুরীকে নিয়ে র‍্যব তাদের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে। ছবি: সংগৃহীত

আজিজ মোহাম্মদ ভাই ও বনানীর ট্রাম্পস ক্লাবের মালিক বান্টি ইসলাম ও আশীষ রায় চৌধুরীর পরিকল্পনায় চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরীকে গুলি করে হত্যা করেন শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন। আশীষ রায় চৌধুরীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এই তথ্য পাওয়ার কথা আজ জানিয়েছে র‍্যাব।

১৯৯৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর ভোরে ট্রাম্পস ক্লাবের নিচে সোহেল চৌধুরীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এই ঘটনায় সোহেলের ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী গুলশান থানায় মামলা করেন। ওই মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি আশীষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরীকে গতকাল মঙ্গলবার গুলশানের একটি ফ্ল্যাট থেকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব।

র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন আজ সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, আশীষকে জিজ্ঞাসাবাদ করে সোহেল হত্যার কারণ এবং তার নিজের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য পাওয়া গেছে।

তিনি জানান, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে আশীষ ৭ এপ্রিল বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে কানাডায় চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন। তাকে গ্রেপ্তারের সময় বিদেশি মদ, ১৬টি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড, নগদ টাকা ও মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদে আশীষ জানান, ১৯৯৬ সালে বনানীর আবেদীন টাওয়ারে আশীষ ও আসাদুল ইসলাম ওরফে বান্টি ইসলামের যৌথ মালিকানায় ট্রাম্পস ক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয়। এই ক্লাবে রাতভর অসামাজিক কার্যকলাপ চলত। ক্লাবটি আন্ডারওয়ার্ল্ড ডন ও গ্যাং লিডারদের আখড়ায় পরিণত হয়। সেখানে যাতায়াত ছিল আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের। তিনি মূলত ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডের চক্রগুলোর সঙ্গে মিটিং করতে এই ক্লাবে নিয়মিত যাতায়াত করতেন। সেই সুবাদে বান্টি ও আশীষের সঙ্গে আজিজ মোহাম্মদের সখ্যতা হয়। শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনেরও এই ক্লাবে যাতায়াত ছিল।

র‍্যাব বলেছে, জিজ্ঞাসাবাদে আশীষ জানান, বনানীর আবেদীন টাওয়ারের অষ্টম তলায় ট্রাম্পস ক্লাবের পাশেই ছিল বনানী জামে মসজিদ। সোহেল চৌধুরী মসজিদ কমিটিকে নিয়ে ট্রাম্পস ক্লাবের অসামাজিক কাজ বন্ধে একাধিকবার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হন। এ কারণে ক্লাবের মালিক বান্টি এবং আশীষের সঙ্গে সোহেল চৌধুরীর শত্রুতা তৈরি হয়। স্বার্থে আঘাত লাগে আজিজ মোহাম্মদ ভাই ও ইমনের। তাদের সবার চক্ষুশূলে পরিণত হন সোহেল চৌধুরী। ১৯৯৮ সালের ২৪ জুলাই ট্রাম্পস ক্লাবে উপস্থিত সবার সামনে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সঙ্গে সোহেল চৌধুরীর হাতাহাতি হয়। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ আজিজ প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য বান্টি ও আশীষকে অনুরোধ জানান। পরে তারা তিন জনই সোহেল চৌধুরীকে হত্যার জন্য সানজিদুল ইসলাম ওরফে ইমনকে প্রস্তাব দেন। ইমন তাদের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করতে সোহেল চৌধুরীকে হত্যা করে।

সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলায় ১৯৯৯ সালের ৩০ জুলাই ৯ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় গোয়েন্দা পুলিশ।

২০০১ সালে ৩০ নভেম্বর এ মামলায় অভিযোগপত্র গঠন করা হয়। পরে মামলাটি বিচারের জন্য দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আসামি আদনান সিদ্দিকী ২০০৩ সালে হাইকোর্টে রিট করেন। হাইকোর্ট ২০০৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে রুলসহ আদেশ দেন। ২০১৫ সালের ৫ আগস্ট হাইকোর্ট রুল খারিজ করেন। আগে দেওয়া স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে রায় দেন। গত ২৮ মার্চ পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন বিচারিক আদালত।

Comments

The Daily Star  | English
Banks income from investment in bonds

Bond boom contributes half of bank income

The 50 banks collectively earned Tk 39,958 crore from treasury bonds in 2024, up from Tk 27,626 crore in the previous year, according to an analysis of their audited financial statements.

15h ago