নাটোরে ম্যাজিস্ট্রেটের ব্যতিক্রমী আদেশ

প্রতীকী ছবি

এবার অ-আমলযোগ্য অপরাধ তদন্তের এক ব্যতিক্রমী আদেশ দিয়েছেন নাটোরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু সাঈদ। ছেলে হারানো মা হামিদা বেগমকে হত্যা মামলা তুলে নিতে হুমকি দেন আসামিরা। তাদের হুমকিতে যেন বিচারাধীন মামলা প্রভাবিত না হয় সেজন্য মামলার সাক্ষী ও হামিদা বেগমকে নিরাপত্তা দিতে পুলিশকে আদেশ দেন আদালত।

নাটোরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের স্টেনোগ্রাফার মো. শহীদুজ্জামান আদেশের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

আসামিরা হলেন—সিংড়া উপজেলার ডাহিয়া ইউনিয়নের বেড়াবাড়ী গ্রামের মো. রেজাউল করিম (৫৫), মো. সাইফুল ইসলাম (৫০), মো. সেন্টু (৩৫), মো. জাহাঙ্গীর মোল্লা (৪০), মো. মান্নান মোল্লা (৫৫), মো. মালেক মোল্লা (৪০), মো. শুভ মোল্লা (২৫) ও মো. মজনু খান সোনা (৫৫)।

মো. শহীদুজ্জামান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'হামিদা বেগমের ছেলে মো. রেজাউল করিমকে ২০১৬ সালে প্রকাশ্যে হত্যার অভিযোগ আছে আসামিদের বিরুদ্ধে। সেই হত্যাকাণ্ডের পর তার স্বামীও শোকাক্রান্ত হয়ে মারা যান। মামলাটি বিচারাধীন আছে।'

তিনি জানান, অভিযোগ ওঠেছে—সেই হত্যা মামলা প্রত্যাহার করতে এবার হামিদা বেগমকে হুমকি-ধামকি দেওয়া হচ্ছে। গত ২৮ জুন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আসামিরা হামিদা বেগমের বাড়ি এসে তাকে হুমকি দিয়ে বলে মামলা না ওঠানো হলে তাকে ও তার নিকট আত্মীয়স্বজনদের হত্যা করা হবে।

শহীদুজ্জামান আরও বলেন, 'গত ২৯ জুন হামিদা বেগম সিংড়া থানায় গিয়ে সাধারণ ডায়েরি করেন। পরে অ-আমলযোগ্য অপরাধ তদন্তের অনুমতির দরখাস্ত করে সিংড়া থানা পুলিশ ৫ জুলাই সাধারণ ডায়েরিটি আদালতে পাঠায়।

আদালতের হাজির হয়ে হামিদা বেগম বিষয়টি সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু সাঈদের আদালতকে জানান, বর্তমানে তিনি ও তার আত্মীয়স্বজনরা আতঙ্কিত।

আদালত পর্যালোচনা শেষে অ-আমলাযোগ্য অপরাধটি পুলিশকে তদন্তের অনুমতি দেন। সেই সঙ্গে অভিযোগের সত্যতা যাচাই করে হামিদা বেগম, তার আত্মীয়স্বজন ও হত্যা মামলার সাক্ষীদের নিরাপত্তা দিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সিংড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন।

অভিযোগের সত্যতা যাচাই সাপেক্ষে কী ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তার লিখিত অগ্রগতি প্রতিবেদনসহ অ-আমলযোগ্য মামলার পুলিশ প্রতিবেদন আগামী ২৭ জুলাইয়ের মধ্যে আদালতে দাখিলের আদেশ দেন আদালত।

হামিদা বেগমের কথা শুনে ও সাধারণ ডায়েরির নথি দেখে আদালত অভিযোগের বিশ্বাসযোগ্যতা রয়েছে আদালতের কাছে তা প্রতীয়মান হয়েছে।

আদেশে আদালত উল্লেখ করেন, 'রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ অপরাধ সংঘটনের অভিযোগ রয়েছে আসামিদের বিরুদ্ধে। সেই সর্বোচ্চ অপরাধের বিচার চলাকালে আসামিরা যদি বিচারকে বাধাগ্রস্ত করতে সাক্ষীদের ভয়ভীতি দিতে থাকেন এবং সেই অভিযোগ যদি সত্য হয় তা তবে আসামিদের ধৃষ্টতার সর্বোচ্চ বহিঃপ্রকাশ।'

নাটোরের সিংড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নূরে আলম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'হামিদা বেগমের সাধারণ ডায়েরি তদন্তের অনুমতি চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। আদালতের আদেশ পেলে আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে এখনো আদেশের কপি হাতে পাইনি।'

ম্যাজিস্ট্রেটের এমন আদেশকে 'যুগান্তকারী ও নজিরবিহীন' বলে উল্লেখ করে নাটোর আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এড. মালেক শেখ বলেন, 'এই আদেশ ন্যায় বিচার নিশ্চিতে সহায়ক হবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Election in first half of April 2026

In his address to the nation, CA says EC will later provide detailed roadmap

1h ago