আইন লঙ্ঘন করে সাজা: মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ৫ সদস্যকে আদালতে তলব

নাটোর
স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

আইন লঙ্ঘন করে সাজা দেওয়ার অভিযোগে নাটোরের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ৫ সদস্যকে তলব করেছেন আদালত। নাটোরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মেহেদি হাসান গতকাল শনিবার এ আদেশ দেন।

তারা হলেন-মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর জেলা কার্যালয় নাটোরের উপপরিদর্শক মো. তাইজুল ইসলাম, সহকারী উপপরিদর্শক মো. আশরাফুজ্জামান, সিপাই মো. বিপ্লব হোসেন, সিপাই আশরাফুল ইসলাম হিমেল ও সিপাই মিনহাজুল ইসলাম।

শনিবার দ্য ডেইলি স্টারের অনলাইন বাংলা সংস্করণে 'আইন লঙ্ঘন করে সাজা দেওয়ার অভিযোগ ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিরুদ্ধে' শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত ওই আদেশ দেন।  

এর আগে মাদক রাখার অভিযোগে গত সোমবার ৩ ছাত্রলীগ নেতাকে সাজা দিয়েছিলেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক। তবে অভিযোগ ছিল, ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ঘটনাস্থলে উপস্থিত না থেকেই ৩ জনকে সাজা দিয়েছেন।

আদেশে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ৫ কর্মকর্তাকে সংবিধান ও হাইকোর্টের রায় অমান্য করে আদালত অবমাননার জন্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া এবং সুপ্রিম কোর্টকে বিষয়টি কেন অবহিত করা হবে না, তা সশরীরে আদালতে হাজির হয়ে লিখিতভাবে ব্যাখ্যা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

নাটোরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো. সোহেল রানা রোববার দ্য ডেইলি স্টারকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, 'আদালত মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একজন এসআই, একজন এএসআই ও ৩ জন সিপাইকে সশরীরে হাজির হয়ে লিখিতভাবে কারণ দর্শানোর আদেশ দিয়েছেন।'

তিনি আরো বলেন, 'আদালত তার আদেশে উল্লেখ করেছেন যে বাংলাদেশ সংবিধানের ৩৩ (২) ধারায় বলা হয়েছে, গ্রেপ্তারকৃত ও প্রহরায় আটক প্রত্যেক ব্যক্তিকে নিকটতম ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে গ্রেপ্তারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের স্থান থেকে ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে আনার জন্য প্রয়োজনীয় সময় ব্যতিরেকে হাজির করতে হবে।'

ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী ম্যাজিস্ট্রেট বলতে অবশ্যই একজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে বোঝানো হয়েছে।

আদালতের আদেশে বলা হয়, 'উচ্চ আদালতের রায় অনুসারে কোনো ব্যক্তিকে আগেই গ্রেপ্তার বা আটক করে ভ্রাম্যমাণ আদালতে উপস্থাপনের মাধ্যমে ২০০৯ সালের মোবাইল কোর্ট আইনে সাজা দেওয়া সুযোগ নেই। যদি কাউকে এই পদ্ধতিতে সাজা দেওয়া হয়, তাহলে সেই বিচারের পুরো প্রক্রিয়া বাতিল হবে এবং সেই সাজার আদেশ হবে অবৈধ ও এখতিয়ার বহির্ভূত।'

আদেশে আরও বলা হয়, এই প্রক্রিয়ার মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করায় ২০১৬ সালের রাষ্ট্র বনাম টাঙ্গাইলের সখিপুরের উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রফিকুল ইসলামের মামলার রায়ের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল।

আদেশ অনুযায়ী, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর জেলা কার্যালয় নাটোরের রেইডিং পার্টির সদস্যরা আসামীদের আটক করে সংশ্লিষ্ট আমলি আদালতের ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে উপস্থাপন না করে ঘটনাস্থলে অনুপস্থিত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ভ্রাম্যমাণ আদালতে সোপর্দ করে বাংলাদেশের সংবিধান, ফৌজদারি কার্যবিধি ও হাইকোর্টের রায় অমান্য করেছেন বলে আদালতের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে।

এ কারণে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর নাটোর জেলা কার্যালয়ের ওই ৫ জনকে লিখিতভাবে ব্যাখ্যা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

আদালত সূত্র জানায়, ১৮ জুন দ্য ডেইলি স্টারের বাংলা অনলাইন সংস্করণে সাজা দেওয়ার সংবাদ প্রকাশ করা হলে তা সংশ্লিষ্ট আদালতের নজরে আসে।

জানতে চাইলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর নাটোরের উপপরিচালক মো. লুৎফর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আদালতের আদেশের কপি হাতে পেয়েছি। যেহেতু আদালতের আদেশ গোপনীয় বিষয়, সে কারণে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করব না।'

'আদালত চিঠি দিয়েছে, আমরা তার জবাব দেবো,' বলেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Economic expectations: Did govt fall short?

When an interim government was sworn into office following the ouster of the Awami League regime just 100 days ago, there was an air of expectation that the Prof Muhammad Yunus-led administration would take steps to salvage a scam-ridden financial sector and rescue an ailing economy.

6h ago