মানিকগঞ্জে নির্মাণের ২ বছরেই সড়কে ধস

মানিকগঞ্জ পৌরসভার নবগ্রাম সড়ক। ছবি: জাহাঙ্গীর শাহ/স্টার

নির্মাণের ২ বছরের মধ্যেই ধসে গেছে মানিকগঞ্জ পৌরসভার নবগ্রাম থেকে নওখন্ডা পর্যন্ত ৭৫০ মিটার দীর্ঘ আরসিসিসি সড়কের কয়েকটি স্থান।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কাজের অনিয়ম নিয়ে কথা বলার সাহস নেই এলাকাবাসীর।

পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালে বাংলাদেশ মিউনিসিপাল ডেভেলপমেন্ট ফান্ড (বিএমডিএফ) এর ১ নং প্যাকেজের আওতায় ১০টি সড়ক ও একটি বক্স কালভার্ট নির্মাণের কাজ পায় যৌথভাবে মা ইঞ্জিনিয়ারিং ও হোসেন কন্সট্রাকশন।

ওই প্যাকেজের আওতায় পৌর এলাকার ৩ নং ওয়ার্ডে নবগ্রাম মসজিদ থেকে নওখন্ডা কালিখোলা পর্যন্ত ৭৫০ মিটার ও নবগ্রামের মন্টু ঘোষের বাড়ি থেকে বড়াই বাবর আলীর বাড়ি পর্যন্ত ৪৫০ মিটারের সড়ক ২টি নির্মাণ করে ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

সড়ক ২টির মোট বাজেট ছিল ২ কোটি ৬ লাখ ৫৮ হাজার টাকা। কাজ সম্পন্ন হয় ২০২০ সালে জুলাইয়ে।

সরেজমিন দেখা যায়, পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ডের নবগ্রাম মসজিদ থেকে নওখন্ডা কালিখোলা পর্যন্ত নির্মিত ৭৫০ মিটারের আরসিসি রাস্তার বেশ কিছু অংশ ভেঙে গেছে। রাস্তার দক্ষিণ পাশের মাটি সরে গিয়ে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ঝুঁকিতে আছে রাস্তার অন্তত ১০টি অংশ।

এ ছাড়া রাস্তাটির গাইডওয়ালের পাশে বেশকিছু স্থানে ধসে গেছে।

ছবি: জাহাঙ্গীর শাহ/স্টার

অপরদিকে, নবগ্রামের মন্টু ঘোষের বাড়ি থেকে বড়াই বাবর আলীর বাড়ি পর্যন্ত ৪৫০ মিটারের কার্পেটিং রাস্তার চওড়া ৪ মিটার হওয়ার কথা থাকলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান করেছে ৩ মিটারের রাস্তা। মাটি দিয়ে রাস্তা উঁচু করার কথা থাকলেও তা যথাযথভাবে করা হয়নি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয়রা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, অন্য স্থান থেকে মাটি এনে এই ৭৫০ মিটার রাস্তাটি কাজ করার কথা ছিল। কিন্তু, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকেরা তা না করে, রাস্তার পাশের খাদ থেকে মাটি কেটে কাজ করেছেন। যার কারণেই রাস্তাটি ধসে যাচ্ছে।

রাস্তা হওয়ার পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ২ বার মাটি দিয়ে ভরাট করার পরও রাস্তার ধস ঠেকানো যাচ্ছে না। এভাবে ধসে যেতে যেতে এক সময় রাস্তাটি খাদে চলে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।

একই এলাকার আরও কয়েকজন জানান, রাস্তাটি যখন তৈরি করা হয়েছিল তখন নতুন মাটি ব্যবহার করা হয়। যারা এখানে কাজ করেছিলেন তারা মাটিকে রোলার দিয়ে ঠিকমত প্রস্তুত করেন নাই। রাস্তায় যেখান থেকে কাজ শুরু হয়েছে তার কিছুদূর পরে এসেই বেশ কিছু অংশ দেবে গেছে। গাড়ি চলাচলে অনেক সমস্যা হচ্ছে। ধস ঠেকাতে রাস্তার অনেক জায়গায় বালু ভর্তি বস্তাও ফেলা হয়েছে।

অনেকের মত, এই রাস্তার চওড়া হওয়ার কথা ছিল ৪ মিটার। ঠিকাদাররা করেছেন ৩ মিটারের রাস্তা। রাস্তাটা অনেক চাপা হয়ে গেছে। মাটি ফেলে রাস্তাটি উঁচু করার কথা থাকলেও সেখানে নিয়ম মেনে মাটি ফেলা হয়নি।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি শহিদুল ইসলাম পুলক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নিয়ম হলো ঠিকাদারের অধীনে এক বছরের মধ্যে রাস্তায় যদি কোনো ক্ষতি হয় তাহলে ঠিকাদার তা ঠিক করে দিবে। কিন্তু এক বছর পর যদি কোনো সমস্যা হয় তাহলে তার সমাধান করবে পৌর কর্তৃপক্ষ। ওই এক বছরে সেই রাস্তায় ক্ষতি হওয়ার পর আমরা তা ঠিক করে দিয়েছি।'

তার অভিযোগ, 'আমাদের জামানতের টাকা ফেরত দেওয়ার অনুমোদন দিয়েছে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ২ বছর পরও টাকা ফেরত পাইনি।'

ছবি: জাহাঙ্গীর শাহ/স্টার

মানিকগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মো. রমজান আলী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের জামানতের টাকা আটকে দেওয়া হয়েছে। এই রাস্তার কাজ করা হয়েছিল সাবেক মেয়রের সময়কালে। এক বছর পর ঠিকাদাররা তাদের টাকা নেয়নি। যেহেতু রাস্তাটি হয়ে গিয়েছিল তাই আমি সেই টাকা দেওয়ার অনুমোদন করেছিলাম।'

তিনি আরও বলেন, 'পরে ওই এলাকার অনেক মানুষ আমার কাছে রাস্তার কাজে অনিয়মের অভিযোগ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমি সেখানে গিয়ে রাস্তার বেহাল অবস্থা দেখি।'

'পরে, পৌরসভার টিএলসিসি কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সড়ক ২টির কাজ তদন্ত করতে ৯ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

তদন্ত কমিটির প্রধান ও পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলার তসলিম মিয়া ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তদন্ত দলের সদস্যদের নিয়ে সরেজমিনে রাস্তার অবস্থা দেখে এসেছি। খুব শিগগির তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেব।'

এ দিকে, জামানতের টাকা ফেরত পেতে দুদক ও স্থানীয় সরকার বিভাগের কাছে অভিযোগ করেছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা।

Comments

The Daily Star  | English

Teknaf customs in limbo as 19 mt of rice, authorised by AA, reaches port

The consignment of rice weighing 19 metric tonnes arrived at Teknaf land port on Tuesday evening with the documents sealed and signed by the Arakan Army

2h ago