এক্সেল লোড নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র: ২ বছরেও শুরু হয়নি নির্মাণকাজ

মহাসড়কের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে ২৮টি এক্সেল লোড নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র স্থাপনের জন্যে দুই বছর আগে প্রকল্পের হাতে নেয় সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তর (সওজ)। তবে, অতিরিক্ত পণ্যবাহী পরিবহন চলাচল বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্যে সওজের একটি বিভাগ থেকে আহ্বান জানানো সত্ত্বেও এখনো কাজই শুরু করতে পারেনি প্রকল্প কর্তৃপক্ষ।

আগামী বছরের জুনে মেয়াদ শেষ হতে যাওয়া এক হাজার ৬৩০ কোটি ২৮ লাখ টাকার প্রকল্পটির জন্যে এখন পর্যন্ত বেশিরভাগ কেন্দ্রের জমি অধিগ্রহণও শেষ করতে পারেনি সংশ্লিষ্টরা।

সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি গত মাসে প্রকল্পের জন্যে ঠিকাদার ও পরামর্শদাতা নিয়োগের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। সওজ দুই জন ঠিকাদারকে ঠিক করলেও এখন পর্যন্ত কার্যাদেশ দিতে পারেনি।

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঠিকাদাররা আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করার পর তারা এটি শেষ করতে ১২ মাস সময় পাবেন। সুতরাং, প্রকল্প কর্তৃপক্ষকে শেষ পর্যন্ত সময়সীমা বাড়াতে হবে।

প্রকল্প পরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন স্বীকার করেছেন যে ভূমি অধিগ্রহণে বিলম্ব ও কোভিড-১৯ মহামারির কারণে তারা সময়সীমা অনুযায়ী পিছিয়ে রয়েছেন।

আবদুল্লাহ আল মামুন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘তবে, আমরা ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছি এবং “লকডাউন” উঠে গেলে ঠিকাদার ও পরামর্শকদের সঙ্গে চুক্তি করব। তারপর তারা কাজ শুরু করবেন।’

তিনি জানান, তারা প্রকল্পটিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছেন।

এক প্রশ্নের জবাবে প্রকল্প পরিচালক জানান, প্রয়োজনে তারা সময়সীমা বাড়ানোর আবেদন করবেন।

হাইওয়েতে ওভারলোডেড যানবাহন চলাচল বন্ধ করার জন্যে বিভিন্ন মহাসড়কের প্রবেশপথে এই ২৮টি এক্সেল লোড নিয়ন্ত্রণ সেন্টার স্থাপন করা হবে।

সওজের তথ্য অনুসারে, সারাদেশে তাদের অধীনে ২২ হাজার ৪২৮ কিলোমিটার জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়ক ও জেলা সড়ক রয়েছে।

গত মাসে প্রকাশিত সওজের নিজস্ব জরিপে দেখা গেছে, প্রায় তিন হাজার কিলোমিটারের সড়ক ‘নিম্নমানের, খারাপ বা খুব খারাপ’ অবস্থায় রয়েছে।

মেইনটেনস অ্যান্ড রিহেবিলাইজেশন নিডস প্রতিবেদন ২০২১-২২ অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো সংস্কারে সওজের প্রায় ১৫ হাজার ৬০৬ কোটি টাকা প্রয়োজন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরে সওজকে এক হাজার ২৮৭ দশমিক ১৩ কিলোমিটার সড়ক পুরোপুরি এবং এক হাজার ৪৯৩ দশমিক আট আট কিলোমিটার সড়ক আংশিকভাবে পুনঃর্নির্মাণ করতে হবে। তাদেরকে ১১ হাজার ৯৭০ কিলোমিটার সড়ক পর্যায়ক্রমে রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে।

নথিপত্রে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের পুরো ও আংশিকভাবে পুনরায় নির্মাণ করতে হবে, এমন সড়কের দৈর্ঘ্য বিদায়ী বছরের তুলনায় অনেক বেশি।

প্রতিবেদন প্রস্তুতকারী সওজের হাইওয়ে ডেভলপমেন্ট অ্যান্ড মেইনটেনেন্স (এইচডিএম) সার্কেল বলছে, আংশিক পুনঃর্নির্মাণ কাজের চাহিদা বৃদ্ধি থেকে ধারণা করা যায় যে, সড়কের স্থায়ীত্ব শক্তি কমে গেছে অথবা ট্রাফিক লোড বেড়েছে।

‘সুতরাং, সেই সড়কগুলো এক্সেল লোড জরুরি ভিত্তিতে নিয়ন্ত্রণ করা উচিত’, প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়।

এর আগের বছরের প্রতিবেদনে, সওজ সার্কেল ৬৯৫ কিলোমিটার সড়কটি পুরোপুরি ও ৭২২ দশমিক ৬৫ কিলোমিটার সড়ক আংশিকভাবে পুনঃর্নির্মাণের সুপারিশ করেছিল।

সার্কেলটি জানিয়েছে, আংশিক পুনঃর্নির্মাণের জন্যে চলতি অর্থবছরে দুই হাজার ৮১ কোটি টাকা প্রয়োজন হবে। যা গত অর্থবছরে এক হাজার ৮৫১ দশমিক ৭৯ কোটি টাকা ছিল।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সড়কের দ্রুত ক্ষয়ক্ষতির অন্যতম বড় কারণ হলো ট্রাকের ওভারলোড।

পরিবহন বিশেষজ্ঞ বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক শামসুল হক জানান, সরকার অনেক আগে থেকেই ওভারলোডেড ট্রাকগুলোকে সড়কে চলার অনুমোদন দিচ্ছে, যেগুলো সড়কগুলোর স্থায়ীত্বকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। 
তিনি এটিকে সরকারের একটি ‘আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত’ বলে অভিহিত করেছেন।

তিনি বলেন, একটি দুই এক্সেল ট্রাকের ১৬ টন পণ্য বহন করার কথা থাকলেও সরকার ২২ টন বহন করার অনুমতি দিচ্ছে। একইভাবে, বড় ট্রাকগুলো প্রস্তুতকারকদের দ্বারা অনুমোদিত ক্ষমতার বিপরীতে অনেক বেশি পণ্য বহন করছে।

কর্মকর্তারা জানান, দেশে এখন মাত্র দুটি এক্সেল লোড নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র চালু রয়েছে। এগুলো ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে রয়েছে।

কেন এই প্রকল্প?

কর্তৃপক্ষ ২০১৬ সালের আগস্টে প্রথম ওভারলোডিংয়ের জন্যে জরিমানা আদায় শুরু করে।

কিন্তু, একই দিনে, পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা মানিকগঞ্জ ও চট্টগ্রামে ওজনব্রিজ ক্ষতিগ্রস্ত করে। যা পরবর্তীতে সরকার পণ্যবাহী যানবাহনের ওজন সীমা বাড়াতে বাধ্য করেছিল।

২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে জাতীয় অর্থনৈতিক কাউন্সিলের নির্বাহী কমিটি (একনেক) সারাদেশে ২১টি পয়েন্টে ২৮টি এক্সেল লোড নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র স্থাপনের প্রকল্পটিকে অনুমোদন দেয়।

দরপত্র প্রক্রিয়া শেষে ঠিকাদার ও পরামর্শদাতা নিয়োগের জন্য সওজ সরকারের ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির কাছে তিনটি প্রস্তাব পাঠিয়েছে। প্রকল্পটি নিয়ে কাজ করা সওজের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কমিটি গত মাসে তাদের অনুমোদন দিয়েছে।

কিন্তু, প্রকল্প কর্তৃপক্ষ কার্যাদেশ ইস্যুর নিষেধাজ্ঞার কারণে ঠিকাদার ও পরামর্শদাতাদের কাছে কাজটি দিতে পারেনি।

গত এপ্রিলে অর্থ মন্ত্রণালয় মহামারির পরিস্থিতিতে মিতব্যয়ী উদ্যোগের জন্যে জুন পর্যন্ত স্বাস্থ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয় ছাড়া সব মন্ত্রণালয়কে দৃশ্যমান কাজের জন্যে কার্যাদেশে ইস্যু করতে নিষেধ করেছিল।

জমি অধিগ্রহণে জটিলতা

প্রায় ৮০০ কোটি টাকা ব্যয়ে জমি অধিগ্রহণ প্রকল্পের অন্যতম কাজ। সওজ সূত্র জানায়, বেশিরভাগ কেন্দ্রের জন্য সওজকে ব্যক্তিগত জমি সংগ্রহ করতে হয়েছে।

সওজ এখন পর্যন্ত তিনটি এক্সেল লোড নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের জন্যে জমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন করেছে। এ ছাড়াও, নিজস্ব জমিতে আরও সাতটি স্থাপন করা হবে। বেশ কয়েকটি কেন্দ্রের জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

তবে, কর্তৃপক্ষ চার জেলায় জমি অধিগ্রহণ নিয়ে জটিলতার মুখোমুখি হচ্ছে।

কুমিল্লায় একজন স্থানীয় সংসদ সদস্য বাছাইকৃত স্থানে জমি অধিগ্রহণের বিরোধিতা করছেন। অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরির প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়ায় নীলফামারীতে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করা জায়গায় জমি অধিগ্রহণ করতে পারেনি।

কুড়িগ্রামে স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ সব স্টেকহোল্ডাররা কেন্দ্রের জন্য নির্বাচিত সাইটটি পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে আসছেন।

চট্টগ্রামে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ বন্দর কানেকটিভিটি রোডের পাশের নিজস্ব জমিতে একটি কেন্দ্রের জন্যে জায়গা নির্ধারণ করেছিল। কিন্তু, সেখানকার অবৈধ দখলদাররা এই উদ্যোগের বিরোধিতা করছেন।

প্রকল্প পরিচালক মামুন জানান, তারা এসব জটিলতা কাটিয়ে উঠতে কাজ করছেন।

ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন সুমন আলী

Comments

The Daily Star  | English

Teknaf customs in limbo as 19 mt of rice, authorised by AA, reaches port

The consignment of rice weighing 19 metric tonnes arrived at Teknaf land port on Tuesday evening with the documents sealed and signed by the Arakan Army

5h ago