‘ঈদের দিনটাত হামরাগুলা ডাইল-ভাত খাইছোং’

হাতিয়া ইউনিয়নে বাঁধের ওপর বসবাসকারী বানভাসি মানুষ। ছবিটি আজ রোববার দুপুরে তোলা। ছবি: এস দিলীপ রায়

ঈদের দিন দুপুর ২টা, মাথার ওপর প্রচণ্ড রোদ। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধের ওপর পলিথিন মোড়ানো ঝুপড়ি ঘরে বসে কাঁদছিলেন কল্পনা বেগম (২৬)। দ্য ডেইলি স্টারকে কল্পনা বেগম বলেন, 'হামার ছওয়া দুইটা আগ করি চলি গ্যাইছে। মনে হয় কোন সাগাইর বাড়িত গ্যাইছে। ওমার জইন্যে গোশতো কিনি আইনবার পাং নাই এইজইন্যে আগ করছে।'

বন্যাকবলিত কল্পনা বেগম কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের হাতিয়ামেলা গ্রামের বাসিন্দা। ২ সন্তান ও স্বামীকে নিয়ে পলিথিনি মোড়ানো ঝুপড়ি ঘরে আশ্রয় নিয়েছেন।

তিনি জানান, একমাস ধরে বাঁধের ওপর পলিথিন মোড়ানো ঝুপড়িতে বসবাস করছেন। বসতভিটা থেকে বন্যার পানি নেমে গেছে, কিন্তু বাড়িতে ফিরছেন না। কারণ আবার বন্যা হবে। তার স্বামী একমাস ধরে কর্মহীন। ঈদে পরিবারের কেউ নতুন জামা-কাপড় পায়নি। মাংস কেনার সামর্থ্য নেই তার। ঈদের দিন ডাল-ভাতের ব্যবস্থা করায় ২ সন্তান মন খারাপ করে।

কল্পনার স্বামী নুরুল হক জানান, অনেক চেষ্টা করেও তিনি আধা কেজি মাংস কেনার টাকা যোগাড় করতে পারেননি। বন্যার কারণে গ্রামে এখন কোনো কাজ নেই। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ঘর-বাড়ি এখনো মেরামত করতে পারেননি।

তিনি বলেন, 'ঈদ হামারগুলার জইন্যে নোয়া। বান আর নদী ভাঙন হামাকগুলাক গরিক থাকি আরও বেশি গরিক করি ফ্যালাইছে।'

একই বাঁধে পলিথিন মোড়ানো ঝুপড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন আজগর আলী (৫০)। আজগর আলী জানান, বাঁধের ওপরই নিরানন্দে কেটে গেল ঈদের দিনটি। ঈদের দিনেও পুরান জামা কাপড় পরতে হয়েছে তাদের। স্ত্রী, ৪ সন্তান ও বৃদ্ধা মায়ের মুখে ভালো খাবারও তুলে দিতে পারেননি। আবার বন্যা হওয়ার আশঙ্কায় তার পরিবারসহ অনেক পরিবারে এখনো বাঁধের বসবাস করছেন।

তিনি বলেন, 'গেল বছর হামরা একটা ছাগল কুরবানি দিছিলোং। এ বছর হামার কপালোত এক টুকরা গোশতও জুটিল না। ঈদের দিনটাত হামরাগুলা ডাইল-ভাত খাইছোং।'

হাতিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শায়খুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে জানান, তার ইউনিয়নে ৬ হাজার ৮৯১টি পরিবারের প্রত্যেককে ১০ কেজি করে চাল বিতরণে ৬৮ হাজার ৯১০ কেজি চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু, ঈদের আগে মাত্র অর্ধেক চাল সরবরাহ পান স্থানীয় খাদ্য গুদাম থেকে। এ কারণে ঈদের আগে সবাইকে ভিজিএফের চাল বিতরণ সম্ভব হয়নি। আগামী মঙ্গলবার ও বুধবার বাকিদের মাঝে চাল বিতরণ করা হবে।

তিনি বলেন, 'অবশ্যই ভিজিএফের চাল না পাওয়ায় অনেক বানভাসিকে কষ্টে ঈদ উদযাপন করতে হয়েছে।'

উলিপুর উপজেলা খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা শাহিনুর রহমান বলেন, 'কাগজপত্রের জটিলতার কারণে উপজেলার কিছু ইউনিয়নে বরাদ্দ করা ভিজিএফের চাল সরবরাহে বিলম্ব হয়েছে।'

 

Comments

The Daily Star  | English

US welcomes Bangladesh election plan

The US yesterday welcomed plans by Bangladesh's interim leader to hold elections next year or in early 2026

23m ago