শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রক্রিয়া চলছে, কে হবেন বিজয়ী

রনিল বিক্রমাসিংহ (বামে), দুল্লাস আলহাপ্পেরুমা ও অনুরা কুমারা দিসানায়েকে। ছবি: সংগৃহীত

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত দেশ ছিল শ্রীলঙ্কা। সেখানকার বর্তমান পরিস্থিতি যেন অনেক দেশেরই প্রতিচ্ছবি। দ্বীপদেশটির গণআন্দোলন অনেক দেশকে ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে বাধ্য করেছে, বাধ্য করেছে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করতে।

শ্রীলঙ্কায় রাজাপাকসে পরিবারের দাপট বলতে গেলে এখন শূন্যের কোটায়। গোতাবায়ার দেশ পালানো ও প্রেসিডেন্টের পদ ছাড়ার ঘটনাগুলো অন্তত সে কথাই বলছে।

এরপর, স্পিকার সে দেশের প্রেসিডেন্ট পদ শূন্য ঘোষণা করে প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহকে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেন। যদিও বিক্রমাসিংহেরও পদত্যাগ দাবি করছেন বিক্ষোভকারীরা।

শ্রীলঙ্কার সংবিধান মেনে প্রেসিডেন্টের বাকি থাকা মেয়াদ শেষ করতে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেন স্পিকার।

শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্টে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। ছবি: সংগৃহীত

আজ বুধবার স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় পার্লামেন্টে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন শুরু হয়। ৩ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। গতকাল তারা পার্লামেন্টে প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হন। প্রার্থীরা হলেন: ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে, অনুরা কুমারা দিসানায়েকে ও দুল্লাস আলহাপ্পেরুমা।

তাদের মধ্যে ৬ বারের প্রধানমন্ত্রী বিক্রমাসিংহে অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ। তার কূটনৈতিক ও আন্তর্জাতিক বিষয়ে অভিজ্ঞতা আছে এবং তিনি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে অর্থনৈতিক বেইলআউট প্যাকেজের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

সংবাদ সংস্থা এপি বলছে, বিক্রমাসিংহে দেশটির ক্ষমতাসীন জোটের সদস্যদের সমর্থিত প্রার্থী। তবে, সাধারণ ভোটারের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা তুলনামূলক কম। তাকে পূর্ববর্তী সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে বিবেচনা করছেন অনেকে। যে সরকার মূলত শ্রীলঙ্কাকে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিয়েছে।

শ্রীলঙ্কার আন্তর্জাতিক বিশ্বাসযোগ্যতা ফিরিয়ে আনতে সাবেক প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া গত মে মাসে ৭৩ বছর বয়সী বিক্রমাসিংহেকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন।

বিক্রমাসিংহের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক সরকারের মন্ত্রী দুল্লাস আলহাপ্পেরুমা। বিরোধী দলীয় নেতা সাজিথ প্রেমাদাসা প্রেসিডেন্ট নির্বাচন থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ায় ক্ষমতাসীন জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়া একটি দলের মাধ্যমে মনোনীত হন দুল্লাস।

সাজিথ বলেছেন, তিনি তাকে সমর্থন দেবেন। টুইটে বলেন, 'আমার দেশের বৃহত্তর কল্যাণে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছি।'

বিক্রমাসিংহে বা দুল্লাসের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পথে বাধা হচ্ছেন মার্কসবাদী নেতা অনুরা কুমারা দিসানায়েকে। ৫৩ বছর বয়সী এই রাজনীতিক ২০১৯ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও প্রার্থী হয়েছিলেন।

লাগাতার বিক্ষোভের এক পর্যায়ে আন্দোলনকারীরা শ্রীলঙ্কার রাজনীতিতে দীর্ঘদিনের প্রভাবশালী মুখ গোতাবায়ার সরকারি বাসভবনে ঢুকে পড়েন। তারা অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবন দখল করে নেন। পরে ইমেল বার্তায় স্পিকারের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন তিনি।

শ্রীলঙ্কার অনেক রাজনীতিকের আশঙ্কা, রাজাপাকসে শাসনের সম্প্রসারণ ও প্রত্যাখ্যাত রাজনৈতিক পরিবারের সম্ভাব্য প্রত্যাবর্তনের মাধ্যম হতে পারেন বিক্রমাসিংহের। তাই অনেকেই তার বিরুদ্ধে ভোট দিতে পারেন।

সুপ্রিম কোর্ট বিক্রমাসিংহের পার্লামেন্ট সদস্যের মর্যাদার নিয়ে আপত্তি তোলা রিট খারিজ করে দিয়েছেন। তার প্রেসিডেন্ট হওয়ায় আপাতত আইনি বাধা নেই। এই নেতা গোতাবায়ার ছোট ভাই মাহিন্দা রাজাপাকসের স্থলাভিষিক্ত হয়েছিলেন। জনসাধারণের তোপের মুখে মাহিন্দা প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়তে বাধ্য হন।

দেশের অর্থনৈতিক দুরবস্থার প্রকাশ্যে এলে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেন বিক্রমাসিংহে। তিনি পার্লামেন্টে সাপ্তাহিক ভাষণে কর বাড়িয়েছেন এবং সরকারকে ঢেলে সাজানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এসব করতে তার রাজনৈতিক ক্ষমতা ও জনসমর্থনের অভাব আছে।

যদি বিক্রমাসিংহে ভোটে হেরে যান, তবে তিনি সম্ভবত প্রধানমন্ত্রীর পদও হারাবেন। নতুন প্রেসিডেন্ট চাইলে নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দিতে পারবেন। ১৯৯৯ ও ২০০৫ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর এটি বিক্রমাসিংহের সর্বোচ্চ পদে তৃতীয় চেষ্টা।

শ্রীলঙ্কার রাজনীতিতে ৬৩ বছর বয়সী দুল্লাস আলহাপ্পেরুমাকে একজন 'পপুলিস্ট' হিসেবে দেখা হয়। তার ভালো জনসংযোগ ও যোগাযোগ দক্ষতা আছে। যদিও তিনি প্রাক্তন সরকারের মুখপাত্র ছিলেন। তিনি তথ্য ও গণমাধ্যম মন্ত্রী, ক্রীড়ামন্ত্রী ও পূর্ববর্তী সরকারের জ্বালানিমন্ত্রীসহ বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।

আইওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পড়াশোনা করলেও দুল্লাস ডিগ্রি অর্জন করেননি। তিনি জনপ্রিয় গায়িকা প্রদীপ ধর্মদাসাকে বিয়ে করেন।

শ্রীলঙ্কার শিক্ষার্থী ও রাজনৈতিক কর্মীরা বিক্রমাসিংহেকে পদত্যাগ করাতে গতকাল বিক্ষিপ্তভাবে বিক্ষোভ করেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিওতে বিক্ষোভকারীরা পার্লামেন্ট সদস্যদের সতর্ক করে বলেছেন, তারা যদি বিক্রমাসিংহেকে ভোট দেন তাহলে যেন নির্বাচনী এলাকায় আর না যান।

বিক্ষোভকারীরা গত সপ্তাহে সরকারি ভবনগুলো দখল করে নিয়েছিলেন। সতর্কতা হিসেবে গতকাল পার্লামেন্টে শত শত সেনা মোতায়েন ও প্রবেশ পথগুলোয় ব্যারিকেড দেওয়া হয়েছে। পার্লামেন্টের কর্মী ও সাংবাদিকদের ঢোকার অনুমতি দেওয়ার আগে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করা হয়। নৌবাহিনী ভবনের আশপাশের হ্রদে টহল দেয়।

চলতি বছরের শুরু থেকে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি বড় ধরনের ধাক্কা খাচ্ছে। দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়ায় বিদেশি ঋণ পরিশোধ স্থগিত করা হয়। দ্বীপবাসী ওষুধ, জ্বালানি ও খাদ্যসহ অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের ঘাটতিতে রয়েছেন।

দেশটির সরকার আইএমএফ'র সঙ্গে বেইলআউট প্যাকেজ নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। আলোচনার সূচনা হিসেবে ঋণ পুনর্গঠন পরিকল্পনা প্রস্তুত করা হচ্ছে।

গত সপ্তাহে গোতাবায়ার পতনের মাধ্যমে রাজাপাকসে পরিবারের আর কোনো সদস্য দেশটির ক্ষমতায় নেই। এই পরিবার গত ২০ বছরের বেশি শ্রীলঙ্কা শাসন করেছে।

সাম্প্রতিক বিক্ষোভের আগে প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীসহ এই পরিবারের ৬ সদস্য উচ্চ পদে ছিলেন। কিন্তু, মার্চের শেষের দিকে বিক্ষোভ শুরুর পর সবাই পদ হারান।

Comments

The Daily Star  | English

Jatiyo Party's office set on fire in Khulna

Protesters vandalised the Jatiyo Party office in Khulna's Dakbangla area last evening

1h ago