শ্রীলঙ্কায় অবকাঠামো প্রকল্পের তহবিল ত্রাণ প্রকল্পে

শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী
'আসন্ন কঠিন দিনগুলোর প্রেক্ষাপটে বলা যায়, মানুষ আবারও বিক্ষোভ করবে। যখন মানুষ দুর্ভোগ পোহায়, তখন স্বভাবতই তারা প্রতিবাদ করে'- রনিল বিক্রমাসিংহে, শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী। ছবি: রয়টার্স

শ্রীলঙ্কার অবকাঠামো প্রকল্পের তহবিল ত্রাণ প্রকল্পে স্থানান্তর করা হবে বলে জানিয়েছেন দেশটির নবনিযুক্ত প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে।

গতকাল মঙ্গলবার বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ তথ্য জানিয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী রনিল আগামী ৬ সপ্তাহের মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন বাজেট পেশ করবেন। সেখানে অবকাঠামোগত প্রকল্পের অর্থ একটি ২ বছর মেয়াদী ত্রাণ প্রকল্পে ব্যবহার করা হবে।

দ্বীপ রাষ্ট্রটিকে চলমান অর্থনৈতিক সংকট থেকে বের করে আনাতে এই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।

প্রায় ২ সপ্তাহ আগে শপথ নেওয়া রনিল গতকাল সতর্ক করে বলেন, সরকার সংকট মোকাবিলায় বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছে। তবুও, আগামীতে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়তে পারে। ফলে, আরও বিক্ষোভ হতে পারে।

তিনি আশা করেন, বিক্ষোভগুলো নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকবে। দেশের ২ কোটি ২০ লাখ মানুষের মধ্যে সবচেয়ে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সহায়তায় জরুরি তহবিলের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, 'আসন্ন কঠিন দিনগুলোর প্রেক্ষাপটে বলা যায়, মানুষ আবারও বিক্ষোভ করবে। যখন মানুষ দুর্ভোগ পোহায়, তখন স্বভাবতই তারা প্রতিবাদ করে।'

'কিন্তু আমরা নিশ্চিত করতে চাই যে, এতে রাজনৈতিক ব্যবস্থা যেন অস্থিতিশীল হয়ে না পড়ে', যোগ করেন তিনি।

রনিল জানান, অন্তর্বর্তীকালীন বাজেটের মূল উদ্দেশ্য হবে বিভিন্ন ধরনের ব্যয় ছেঁটে ফেলা এবং বেঁচে যাওয়া তহবিলকে জনকল্যাণে ব্যবহার করা।

'এখন আমাদেরকে আরও (এক) ট্রিলিয়ন রুপির নোট ছাপাতে হবে', উল্লেখ করে তিনি জানান, আগামীতে বার্ষিক মূল্যস্ফীতি ৪০ শতাংশ ছাড়িয়ে যেতে পারে। ইতোমধ্যে চরম আর্থিক চাপে থাকা শ্রীলঙ্কার বাসিন্দারা আরও চাপের মুখে পড়বেন।

গত সোমবার সরকারি তথ্যে বলা হয়, শ্রীলঙ্কায় এপ্রিলে রেকর্ড ৩৩ দশমিক ৮ শতাংশ মূল্যস্ফীতি দেখা দেয়। মার্চে এই হার ছিল ২১ দশমিক ৫ শতাংশ।

গত মঙ্গলবার শ্রীলঙ্কা সরকারি অর্থায়ন পরিস্থিতির উন্নয়নের জন্য পেট্রোল ও ডিজেলের দাম সর্বোচ্চ ৩৮ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে পরিকল্পনার পর অবশেষে এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

অর্থনীতিবিদদের মতে, দাম বাড়ানোর দরকার ছিল। কিন্তু, এতে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে। তারা নতুন নোট ছাপানোর সিদ্ধান্ত নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা মনে করছেন, এই উদ্যোগেও মূল্যস্ফীতি বাড়তে পারে।

রনিল জানান, ত্রাণ উদ্যোগে সহায়তার জন্য এখন প্রশাসন সব ধরনের সরকারি খরচের খাত খতিয়ে দেখছে।

তিনি বলেন, 'উদাহরণস্বরূপ, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের খরচ আমরা হঠাৎ কমিয়ে আনতে পারব না। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ক্ষেত্রে সীমিত আকারে ব্যয় কমানো যেতে পারে। তবে অন্য আরও মন্ত্রণালয় আছে, যেখানে আমরা অনেক বড় আকারে ব্যয় কমাতে পারি।'

সরকারি ব্যয় কমিয়ে অর্থনীতির চাকাকে সচল করার পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা বিশ্ব মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে ঋণ প্যাকেজের আলোচনায় আবশ্যক হতে পারে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা।

রনিল নিশ্চিত করেন, আজ বুধবারের মধ্যে নতুন অর্থমন্ত্রীর নিয়োগ দেওয়া হবে।

আইএমএফ'র ঋণ প্যাকেজ বিষয়ে জানান, তিনি আশা করছেন আইএমএফ একটি 'টেকসই ঋণ প্যাকেজ' দেবে এবং কাঠামোগত সংস্কারের মাধ্যমে সরকার দেশে আরও নতুন বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে পারবে।

শ্রীলঙ্কায় আগামী আগস্টের পর খাদ্য ঘাটতি দেখা দেওয়ার আশংকা রয়েছে। এর পেছনে দায়ী মূলত কৃষিখাতে রাসায়নিক সারের ব্যবহার বন্ধের সিদ্ধান্ত। এ কারণে সার্বিকভাবে দেশটিতে কৃষি উৎপাদন কমে গেছে।

প্রধানমন্ত্রীর মতে, খাদ্য মজুদ বাড়াতে শ্রীলঙ্কা মিত্র দেশগুলোর কাছ থেকে আসা বিদেশি ত্রাণ ও বিভিন্ন বহুজাতিক সংস্থার ওপর নির্ভর করবে।

'আমাদেরকে যথেষ্ট পরিমাণ খাবারের মজুদ নিশ্চিত করতে বন্ধু রাষ্ট্রদের কাছ থেকে কিছু সাহায্য চাইতে হবে। আমাদের আরও চাল প্রয়োজন,' যোগ করেন তিনি।

সম্প্রতি, ভারত শ্রীলঙ্কাকে খাদ্য, জ্বালানি, ওষুধ ও আর্থিক সহায়তা দিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে ভারত কৌশলগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ এই দ্বীপরাষ্ট্রের ওপর প্রভাব বিস্তারে প্রতিবেশী চীনের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় আছে।

রনিল জানান, তিনি খুব সম্ভবত আগামী সপ্তাহে শ্রীলঙ্কায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে দেখা হবে। বৈঠকে বেইজিং থেকে সহায়তা হিসেবে সার ও ওষুধ পাওয়ার বিষয়ে কথা বলবেন তিনি।

'আমি জানতে চাইব, কোন ধরনের সহায়তা পাওয়া যেতে পারে। আমাদের সারের প্রয়োজন,' যোগ করেন তিনি।

 

Comments

The Daily Star  | English
Yunus speech at Earthna Summit 2025 in Doha

No one too poor to dream, no dream too big to achieve: Yunus

He says in his keynote speech at Earthna Summit 2025 in Doha

55m ago