সাহিত্যে স্বাধীনতা পদক পাওয়ার মতো লেখক কি দেশে নেই?

১৯৭২ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশের সংবিধান বিলের ওপর সাধারণ আলোচনায় তিনি বলেছিলেন, 'বাঙালির আশা, বাঙালির আকাঙ্ক্ষা, বাঙালির স্বপ্নকে আমরা এই সংবিধানের মাধ্যমে প্রস্ফুটিত করবার চেষ্টা করেছি। তা সত্ত্বেও এই সংবিধানের যদি কারো সমালোচনা করার ইচ্ছা থাকে, তাহলে অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে এ সম্বন্ধে কথা বলা উচিত।' (জালাল ফিরোজ, বঙ্গবন্ধু গণপরিষদ ও সংবিধান, পৃষ্ঠা ৯১)।

তিনি তৎকালীন কুমিল্লা-৪ আসনের সংসদ সদস্য সিরাজুল হক। ব্যক্তিজীবনে আইনজীবী সিরাজুল হক ছিলেন মহান মুক্তিযুদ্ধের একজন সংগঠক। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন ও ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানেও তিনি ভূমিকা রেখেছেন।

১৯৭২ সালে কামাল হোসেনকে সভাপতি করে গঠিত বাংলাদেশের প্রথম সংবিধান প্রণয়ন কমিটিরও সদস্য ছিলেন সিরাজুল হক। এ বছর তিনি স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন। সিরাজুল হকের ছেলে বর্তমান আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

বাস্তবতা হলো, মুক্তিযুদ্ধের আগে-পরে জনাব সিরাজুল হকের যে অবদান, তাতে আরও আগেও তার স্বাধীনতা পুরস্কার পাওয়া উচিত ছিল। সুতরাং, আইনমন্ত্রীর বাবা বলে এ বছর তিনি এই পুরস্কার পেয়েছেন—এ কথা বলার সুযোগ নেই।

এ বছর আরও যে ১০ জনকে স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়েছে, তাদের মধ্যে আছেন জাতীয় স্মৃতিসৌধ ও জাতীয় জাদুঘরের স্থপতি সৈয়দ মাইনুল হোসেন। মাইনুল হোসেনকেও স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া উচিত ছিল আরও অনেক বছর আগে। কিন্তু 'বেটার লেট দ্যান নেভার'। বিলম্বে হলেও ইতিহাসের দায় মোচন হলো।

এ বছর স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য মনোনীতদের মধ্যে রয়েছেন বর্তমান সংসদের ২ প্রভাবশালী এমপি নূর ই আলম চৌধুরী লিটন ও নিক্সন চৌধুরীর বাবা ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী।

এ কথা বলার সুযোগ নেই যে, সন্তানদের প্রভাবে তিনি স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছেন। কারণ তিনিও ৬ দফা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান ও স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্যতম সংগঠক। ছিলেন মুজিব বাহিনীর কোষাধ্যক্ষ।

'দাদাভাই' নামে পরিচিত জনাব ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী গণপরিষদেরও সদস্য ছিলেন। সুতরাং স্বাধীনতা পুরস্কার পাওয়ার জন্য তার এসব পরিচয়ই যথেষ্ট।

এ বছর স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছেন বর্তমান সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি নাহিদ ইজাহার খানের বাবা শহীদ কর্নেল খন্দকার নাজমুল হুদা বীর বিক্রম। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর নভেম্বরের অভ্যুত্থান-পাল্টা অভ্যুত্থানের খেলায় ৭ নভেম্বর খালেদ মোশাররফ মোশাররফ ও এ টি এম হায়দারের সঙ্গে তিনি নিহত হন।

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের বাবা মোহাম্মদ ছহিউদ্দিন বিশ্বাসও এ বছর স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছেন। জনাব বিশ্বাসও একজন মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৬৬ সালে তিনি ৬ দফা আন্দোলনে ভূমিকা রাখেন।

এ বছর অবসরপ্রাপ্ত ফ্লাইট সার্জেন্ট আব্দুল জলিল, যিনি আগরতলা মামলার অন্যতম অভিযুক্ত, বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কারাবন্দী ও মুক্তিযোদ্ধা এবং সাবেক সরকারি কর্মকর্তা, লেখক ও মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ উদদীন আহমেদও রয়েছেন—যাদের নিয়ে কোনো বিতর্ক ওঠেনি; যা হয়েছে এ বছর সাহিত্যে স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য মনোনীত ব্যক্তিকে নিয়ে।

গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক বিতর্কের মুখে অবশেষে সাহিত্যে স্বাধীনতা পদকের জন্য মনোনীত ব্যক্তি আমির হামজার নামটি সরকার বাতিল করেছে। কিন্তু, নাম বাতিল করলেও বেশ কিছু প্রশ্নও জনমনে রয়ে গেছে। বিশেষ করে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ এই সম্মাননার জন্য যে প্রক্রিয়ায়, যে ব্যক্তিদের মাধ্যমে পুরস্কারের জন্য ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান বাছাই ও চূড়ান্ত করা হয়, তাদের নিরপেক্ষতা প্রশ্নাতীত কি না; পুরো প্রক্রিয়াটি অতি মাত্রায় আমলানির্ভর কি না; একজন উপসচিবও তার বাবার নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে দিতে পারেন কি না এবং কমিটি নামটি চূড়ান্ত করার আগে কেন তার ব্যাপারে যাচাই-বাছাই করার প্রয়োজনবোধ করল না; স্বাধীনতা পুরস্কারের মতো একটি অত্যন্ত সম্মানজনক পুরস্কারের জন্য কারো নাম ঘোষণার পরে সমালোচনার মুখে সেই নাম প্রত্যাহার করা পুরস্কারটিকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে কি না ইত্যাদি।

স্মরণ করা যেতে পারে, ২০২০ সালেও সাহিত্যে স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য এস এম রইজ উদ্দিন আহম্মদের নাম ঘোষণা করা হলেও তীব্র সমালোচনার মুখে সরকার সেই নামটিও প্রত্যাহার করেছিল। কারণ তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হলেও সাহিত্যিক হিসেবে পরিচিত নন।

তখনও যেটি আলোচনায় ছিল তা হলো, বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে একজন জীবিত অথবা মৃত ব্যক্তিকে সর্বোচ্চ সম্মান দেওয়া রাষ্ট্রের দায়িত্ব। সেই সম্মান নানাভাবেই দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু, যে শাখায় পুরস্কারটি দেওয়া হচ্ছে, বিশেষ করে সাহিত্য, চিকিৎসা স্থাপত্য—ইত্যাদি বিশেষায়িত শাখায় কাউকে পুরস্কৃত করতে হলে এসব শাখায় তার বিশেষ অবদান থাকতে হয়।

রইজ উদ্দিন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু, সাহিত্যে স্বাধীনতা পুরস্কার পাওয়ার মতো লেখক তিনি নন। তিনি সাহিত্য মহলে একেবারেই পরিচিত কেউ নন। তার কোনো লেখার কথা কেউ বলতে পারে না। সুতরাং আর যাই হোক, তিনি সাহিত্যে স্বাধীনতা পুরস্কার পেতে পারেন না।

কিন্তু দেখা গেল, এক বছর পরে আবার সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি এবং পুরস্কারের একই শাখায়। এবারও আমির হামজা নামে এক বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম ঘোষণা করা হয় সাহিত্যে স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য। কিন্তু নামটি প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে এ নিয়ে গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ায় তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।

কারণ জনাব আমির হামজাও সাহিত্যের দুনিয়ায় কোনো পরিচিত নাম নন। জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিয়ে তার কিছু কবিতা বা গীতিকবিতা থাকলেও সেগুলো সাহিত্য ও শিল্পের মানদণ্ডে উত্তীর্ণ নয়।

তার যেসব লেখা এরইমধ্যে নানাভাবে প্রকাশিত হয়েছে, তাতে এত নিম্নমানের লেখার বিনিময়ে কাউকে স্বাধীনতা পুরস্কারের সাহিত্য শাখায় মনোনীত করাটা খুবই হাস্যকর এবং প্রকৃত সাহিত্যিকদের জন্য অসম্মানের।

প্রশ্ন ওঠতে পারে, সাহিত্যে স্বাধীনতা পুরস্কার পাওয়ার মতো যোগ্য লেখক কি দেশে নেই নাকি সরকার ২০২০ সালের ওই ঘটনা থেকে কোনো শিক্ষা নেয়নি? যদি এবারও শিক্ষা না নিয়ে থাকে, তাহলে ধরে নেওয়া যায় ২০২৩ সালেও সাহিত্যে স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য যার নাম ঘোষণা করা হবে—তাকে নিয়েও হয়তো বিতর্ক হবে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ওয়েবসাইটে দেওয়া তালিকায় অনুযায়ী, ২০১০ সাল থেকে এ পর্যন্ত সাহিত্য শাখায় যাদেরকে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হয়েছে, তাদের নিয়ে কোনো বিতর্ক হয়নি।

যেমন ২০২১ সালে কবি মহাদেব সাহা; ২০১৯ সালে হাসান আজিজুল হক; ২০১৮ সালে সেলিনা হোসেন; ২০১৭ সালে রাবেয়া খাতুন ও গোলাম সামদানি কোরায়শী; ২০১৬ সালে কবি নির্মলেন্দু গুণ; ২০১৫ সালে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান; ২০১২ সালে অধ্যাপক আবুল ফজল; ২০১০ সালে রোমেনা আফাজ ও মুস্তাফা নূরউল ইসলাম।

তবে ২০১১, ২০১৩ ও ২০১৪ সালে সাহিত্য শাখায় স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হয়নি।

তার মানে এ যুগে যাদেরকে সাহিত্যে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে ২০২০ সালে রইজউদ্দিন এবং ২০২২ সালে আমির হামজা ছাড়া আর কাউকে নিয়ে কোনো বিতর্ক হয়নি। কারণ যাদেরকে পুরস্কার দেওয়া হয়েছে, তাদের রাজনৈতিক আদর্শ ও বিশ্বাস যা-ই হোক না কেন, সাহিত্যিক হিসেবে তারা প্রতিষ্ঠিত। অর্থাৎ সাহিত্যে স্বাধীনতা পুরস্কার পাওয়ার জন্য যেটিই প্রথম যোগ্যতা।

অর্থাৎ সাহিত্যে স্বাধীনতা পুরস্কার পাওয়ার মতো যোগ্য লেখক দেশে ছিলেন এবং এখনও আছেন। তাহলে ২০২০ ও ২০২২ সালে এই বিচ্যুতি কেন? কেন একটি শাখার কারণে পুরো পুরস্কারটির সম্মানহানি করা হলো? কেন সাধারণ মানুষের মনে এই পুরস্কার নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হলো? কেউ কি সচেতনভাবেই চাচ্ছে পুরস্কারটিকে বিতর্কিত করতে নাকি এই পুরস্কার প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত কেউ কেউ নিজেদের ক্ষমতা দেখাতে গিয়ে গুবলেট পাকিয়ে ফেলছেন?

যদি তাই হয়, তাহলে ওই গুবলেট পাকানো লোকদের দ্রুত চিহ্নিত করে তাদেরকে প্রক্রিয়া থেকে বের করে দেওয়াই সঙ্গত। যে পুরস্কারের সঙ্গে 'স্বাধীনতা' শব্দটি জড়িত এবং যেটি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সম্মাননা—সেটিকে বিতর্কিত বা প্রশ্নবিদ্ধ করার অর্থ হলো বাংলাদেশকেই অসম্মানিত করা।

ভয়ংকর ব্যাপার হলো, এ বছর সাহিত্যে স্বাধীনতা পুরস্কার পাওয়া আমির হামজা আদৌ কবি বা গীতিকবি কি না; তার লেখা স্বাধীনতা পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য কি না; তিনি যা লিখেছেন, এগুলো কোনো মানসম্মত সাহিত্য কি না—সেসব নিয়ে যখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গরম, তখন জানা যায়, তিনি হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত।

গণমাধ্যম বলছে, ১৯৭৮ সালে খুনের মামলার প্রধান আসামি ছিলেন আমির হামজা। বিচারিক আদালতের রায়ে ওই মামলায় তার যাবজ্জীবন সাজা হলেও পরবর্তীতে 'রাজনৈতিক বিবেচনায়' সাধারণ ক্ষমা পান তিনি।

এ বছর কেন ও কীভাবে তার নামটি সাহিত্যে স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য বিবেচিত হলো, সেই কথাও এরইমধ্যে জানা গেছে। আমির হামজার ছেলে আসাদুজ্জামান সরকারের একজন উপসচিব। মূলত তার প্রচেষ্টায় এবং 'সিস্টেমে' আমির হামজার নামটি চূড়ান্ত হয়।

কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার হলো, পুত্রের এই অতি উৎসাহী কর্মকাণ্ডের জন্য একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে মৃত্যুর পরে অসম্মানিত হতে হলো। এই অসম্মান তার একার নয়; বরং দেশেরও।

সুতরাং আমির হামজার নামটি স্বাধীনতা পুরস্কার থেকে বাতিল করাই সমাধান নয়, বরং তাকে অসম্মানিত করার প্রক্রিয়ায় তার পুত্রসহ আরও যারা জড়িত, তাদের প্রত্যেককে বিচারের আওতায় আনা দরকার।

প্রশ্ন হলো, যেকোনো পদে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের আগেও যেখানে ব্যক্তির চৌদ্দগুষ্ঠির খবর নেওয়া হয়; যাবতীয় আমলনামার অনুসন্ধান করা হয়—সেখানে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সম্মানজনক পুরস্কার দেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সম্পর্কে রাষ্ট্র কেন খোঁজ-খবর নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করল না?

একজন উপসচিব আবেদন করলেন আর একজন সিনিয়র সচিবের সুপারিশে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সম্মানজনক পুরস্কারটি যে কাউকে দিয়ে দেওয়া হবে?

অস্বীকার করা যাবে না, রাজনৈতিক বিবেচনায় অনেককে অনেক জাতীয় পুরস্কার দেওয়া হয়। একুশে পদক এমনকি যারা বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পান—সেখানে রাজনৈতিক ও অন্যান্য আরও কিছু বিশেষ বিবেচনা থাকে। কিন্তু তাই বলে অসাহিত্যিককে পুরস্কার দেওয়া হয় না।

হয়তো ওই পুরস্কার পাওয়ার মতো অনেক লেখক রয়েছেন। কিন্তু, এক বছরে সবাইকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা সম্ভব নয়। ফলে যাদেরকেই পুরস্কার দেওয়া হোক না কেন, তাকে অন্তত সাহিত্যিক হতে হয়। সাহিত্যিক হিসেবে পরিচিতি থাকতে হয়। তিনি কোন মত, পথ ও আদর্শে বিশ্বাসী—সেটি নিশ্চয়ই একমাত্র বিবেচনা নয়।

যে কারণে যখনই কাউকে শিল্প-সাহিত্যের কোনো শাখায় পুরস্কার দেওয়া হয়, তার বই বা শিল্পকর্মের মান যাচাইয়ের জন্য সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া হয়। যিনি নিজে লেখক বা সাহিত্যের সমালোচক অথবা শিক্ষক নন, তিনি আরেকজনের সাহিত্য মূল্যায়ন করতে পারবেন না।

প্রশ্ন হলো, আমির হামজা বা রইজউদ্দিনকে সাহিত্যে স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য মনোনীত করার আগে তাদের সাহিত্যকর্ম সম্পর্কে কোনো বিশেষজ্ঞ মতামত কি নেওয়া হয়েছিল? নিশ্চয়ই হয়নি। এটাই হচ্ছে স্বাধীনতা পুরস্কারের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা।

ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ বা এ রকম জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে একজনকে পুরস্কৃত বা সম্মানিত করা যত সহজ, শিল্প-সাহিত্য বা অর্থনীতির মতো বিশেষায়িত শাখায় পুরস্কার দেওয়া তত সহজ নয়।

কারণ, এসব শাখায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির অবদান সম্পর্কে যদি মানুষ না জানে বা তাদের সৃষ্টির যদি শিল্প ও সাহিত্যমূল্য না থাকে, তাহলে এ রকম কাউকে জাতীয় পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হলে তা নিয়ে বিতর্ক হবেই।

সাধারণ মানুষের কাছে অপরিচিত বা কম পরিচিত একজন লেখকও সাহিত্যে বাংলা একাডেমি, একুশে এমনকি স্বাধীনতা পদকও পেতে পারেন। হতে পারে যে নানা কারণেই তিনি বহুল পঠিত বা পরিচিত নন। কিন্তু তার সাহিত্যকে তো মানসম্মত হতে হবে। নিম্ন মানের দুয়েকটি বই লিখে কেউ যদি জাতীয় পুরস্কার পেয়ে যান, তাহলে যারা ভালো লেখক এবং পাঠকের মেধা ও মনন গঠনে অবদান রাখছেন, তারা অসম্মানিত হন।

আমীন আল রশীদ: কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স এডিটর, নেক্সাস টেলিভিশন

(দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের, দ্য ডেইলি স্টার কর্তৃপক্ষের নয়। লেখকের নিজস্ব মতামতের কোনো প্রকার দায়ভার দ্য ডেইলি স্টার নিবে না।)

Comments

The Daily Star  | English

Violence against women, children: Over 35,000 cases unresolved for over 5 years

More than nine years have passed since a case was filed over the rape of a nine-year-old schoolgirl in Dhaka’s Khilkhet area. The tribunal dealing with the case has framed charges against the lone accused and held 96 hearings but is yet to complete the trial.

11h ago