একটি ভয়ঙ্কর 'হন্টনময়' দিন

হন্টন ম্যারাথন
আজকে যে হন্টনের সম্মুখীন হতে হয়েছে, এতে করে আমাদের অনেকের 'হন্টন ম্যারাথনের' মোটামুটি প্র্যাকটিস হয়ে গেছে | ছবি: শেখ এনাম

আজকে যে হন্টনের সম্মুখীন হতে হয়েছে, এতে করে আমাদের অনেকের 'হন্টন ম্যারাথনের' মোটামুটি প্র্যাকটিস হয়ে গেছে | যারা আজকের সংকটের সম্মুখীন হননি, আপনারা রাজ-কপাল নিয়ে এসেছেন | কিন্তু যারা আমার মতো, তাদের জন্য সমবেদনা আর পেইনকিলার ছাড়া, আমার কাছে কিছু নেই | 

আজকের পরিস্থিতি দেখে মনে হলো মোটামুটি জিলাপির প্যাচ লেগে আছে | ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি বাজে দুপুর পৌঁনে ১টা | আমি মোবাইল বের করে ট্রাফিক আপডেট দেখলাম, অন্যদের স্ট্যাটাস দেখলাম - বুঝলাম হাঁটা ছাড়া উপায় নাই - আমি ঢাকা দায়রা জজ আদালত থেকে হন্টন আরাম্ভ করলাম | হাঁটতে গিয়ে বুঝলাম - ঢাকায় হাঁটার পরিস্থিতেও নেই | রিক্সা নিয়ে আরেক বিপত্তি - চিপা গলির ভেতর আধ-ঘণ্টা বসে রইলাম, ট্রাফিক পুলিশের দয়া হলো না - সিগন্যাল ছাড়লো না - সে কোনায় দাঁড়িয়ে বিরসমুখে দাঁত খোঁচাতে লাগলো | এদিকে আমার রিক্সাওয়ালা কোনো কারণ ছাড়া ৭০ টাকা ভাড়া আদায় করলো আমার থেকে, আমার আবার হাঁটা শুরু |

গুলিস্তানের কাছাকাছি পর্যন্ত আমি বেশ কষ্টে আসলাম, এমনিতেই হাঁটার জায়গা নেই - তারপরে রাস্তার মানুষের ধাক্কাধাক্কি - সব মিলে যাচ্ছেতাই | গুলিস্তান এসে টের পেলাম ক্ষুধা লেগেছে, আমি গোলাপ শাহের মাজারের উল্টা পাশে দাঁড়িয়ে একটা রোল এবং একটা ডাব খেলাম | কাজের মধ্যে কাজ হলো, আমার কিছুটা বিশ্রাম হলো - এবার যাত্রা আবার শুরু |  ভাবলাম রিক্সা নেব, তারপর আবার সেই পরিকল্পনা বাতিল করতে হলো - রাস্তার পরিস্থিতি শোচনীয় |

আরেকবার ট্রাফিক আপডেট চেক করে দেখি অবস্থা একই - হেঁটেই যেতে হবে | এর মধ্যে মোটামুটি সুদর্শন এক যুবক আমার পাশে হাঁটা শুরু করলেন, এবং তার সাথে আমার টুকটাক কথাও হলো - হাঁটাটা একদম খারাপ ছিলো বলা যাবে না | তিনি জানালেন গুলিস্তান থেকে হাঁটছেন, এবং গন্তব্য ফার্মগেট | রাস্তার থেমে থাকা গাড়ির সারি দেখতে দেখতে আমরা এগুচ্ছি - হেঁটে হেঁটে এখন আমরা হাইকোর্টের সামনে | ভাবলাম এবার রিক্সা নিয়ে কাঁটাবন হয়ে ফার্মগেট যাবো, কিন্তু আজকে হয়তো রাস্তায় সব নির্দয় রিকশাওয়ালারা নেমেছে | কেউ ফার্মগেট যাবে না - অনেক রিকোয়েস্ট করার পরও তারা রাজি হলেন না - কিছুতেই না |

শাহবাগের পরিস্থিতি দেখে আমার কান্না পেয়ে গেল, পায়েও আর জোর নেই - আমার পাশে হেঁটে আসা ভদ্রলোকের অবস্থায় প্রায় একই | আমি শাহবাগে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ জন্মদিনের কীর্তিকলাপ দেখলাম, এবং আশপাশের কয়েকজনের সাথে আলাপ করলাম | আব্দুল নূর নামের এক ভদ্রলোক বললেন তিনি মুগদা যাবেন, কিন্তু নিরুপায় হয়ে এখন রাস্তার পাশে ফুটপাতে বসে আছেন | পাশে তাকিয়ে দেখলাম তার মা রাস্তায় শুয়ে আছেন, জানলাম তিনি বারডেম হাসপাতালে ডাক্তার দেখতে এসেছিলেন সেই ভোর সকালে, এখন আটকে গেছেন | তৌহিদ নামের একজন পথচারী জানালেন আরেক দুঃখের কথা | আজকের জ্যামের কারণে তিনি চাকরির ইন্টারভিউ মিস করেছেন - চাকরিটা খুব দরকার ছিলো তার | ইয়াসমিন নামের এক গৃহিণীর সাথেও কথা হলো, মেয়ের স্কুল ছুটি হয়েছে ১২টায়, তিনি স্কুলে পৌঁছাতে পারেননি সময় মতো - তাকে রীতিমতো দৌড়াতে দেখলাম রাস্তায়, যেভাবেই হোক মেয়ের কাছে পৌঁছানো আপ্রাণ চেষ্টা করছেন |

কোনোরকম গা বাঁচিয়ে হেঁটে আসছিলাম, এমন সময় আরেক পথচারী তার পানের পিক ছুড়ে দিলেন আমার গায়ে, এই ঘটনার কারণ কি, আমি জানিনা | ঘটনা আমি টের পেয়েছি অনেক পরে, সময় মতো টের পেলে খবর ছিলো ওই লোকের | আমি মোটামুটি সারারাস্তা হেঁটে প্রায় আড়াই ঘণ্টা পর ফার্মগেট পৌঁছেছি | আড়াই ঘণ্টা যদি আমি না হাঁটতাম তাহলে আদৌ সময় মতো আসতে পারতাম কীনা আমার সন্দেহ আছে | 

আমার মনে হয়, এই শহরের সবাইকে সাইকেল চালানোর অভ্যাস করা উচিত, তাতে করে বাড়তি মেদ কমবে, সময় বাঁচবে এবং রাস্তার ট্রাফিক জ্যামের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে কিছুটা | সবার আজকে চূড়ান্ত দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে, যদি আমরা সাইকেল চালাতাম, সাইকেলের লেন থাকতো এই শহরে, তাহলে একটু হলেও নিস্তার পেতাম |

Comments

The Daily Star  | English

People didn’t sacrifice lives just for election: Asif Mahmud

The adviser stresses the need for reforms for which people came out and ousted 'fascist' Awami League government

1h ago