রূপসীদের রূপকাহন

আমাদের সবচেয়ে বড় উৎসব ঈদ। রোজায় সারাদিনের কর্মব্যস্ততা আর ঈদ শপিংয়ে ব্যস্ত থেকে নিজের প্রতি হয়তো খেয়াল করা হয় না। কিন্তু একটু সময় দিলে আপনিও রূপলাবণ্যে হয়ে উঠতে পারেন অন্যরকম। সঙ্গে ঈদের দিনে নিজেকে রাখুন ফ্রেশ আর প্রাণবন্ত।


গরমে ত্বকে ঘাম-তেল নিঃসরণের পরিমাণ বেড়ে যায়। এর ওপর ধুলো-ময়লা, নোংরা জমে ত্বক নির্জীব ও অনুজ্জ্বল হয়ে পড়ে। এ সময় ত্বক ভালো রাখার জন্য ক্লিনজিং, টোনিং, ময়েশ্চারাইজিংÑ এই তিনটি বেসিক স্কিন কেয়ার রুটিন মেনে চলতে হবে। সকালে ঘুম থেকে উঠে ফেসওয়াশ দিয়ে ভালো করে মুখ ধুয়ে নিন। ফ্রেশ থাকার জন্য টোনার খুব জরুরি। রোজ বা ল্যাভেন্ডারের মতো ফুলের নির্যাস দিয়ে তৈরি টোনার গরমের জন্য আদর্শ, স্বাভাবিক শুষ্ক ত্বকের জন্য গোলাপজলও ভালো। ত্বক পরিষ্কার করার পর তুলোয় টোনার বা গোলাপজল নিয়ে ভালো করে মুখে ও গলায় লাগিয়ে নিন। ইচ্ছে হলে ফ্রিজেও গোলাপজল রাখতে পারেন। তবে আপনার ত্বক যদি তৈলাক্ত প্রকৃতির হয়, তাহলে অ্যাসট্রিনজেন্ট লোশন ব্যবহার করুন। অ্যাসট্রিনজেন্ট লোশন ত্বকের  অতিরিক্ত তেল কম রাখতে সাহায্য করে। আর রাতে ভালো করে মুখ পরিষ্কার করে ময়েশ্চারাইজিং ক্রিম ম্যাসাজ করুন। ম্যাসাজ করার সময় ক্রিমে সামান্য পানি মিশিয়ে নিতে পারেন। শোবার আগে ভেজা তুলো দিয়ে অতিরিক্ত ক্রিম মুছে ফেলুন।


সকালে বাইরে বের হওয়ার আগে অবশ্যই সানস্ক্রিন লাগাবেন। বাইরে বের হওয়ার অন্তত ২০ মিনিট আগে সানস্ক্রিন লাগান। এটি সূর্যের ইউভিএ ও ইউভিবি রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করবে। মুখের সঙ্গে গলা, ঘাড় ও অন্যান্য এক্সপোজড অংশেও সানস্ক্রিন লোশন লাগান। রোদে অনেকেরই সানট্যানের সমস্যা দেখা দেয়। সানট্যানের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে গোসলের আগে টকদই, চালের গুঁড়ো ও কাঁচা হলুদ বাটা মিশিয়ে একটা প্যাক তৈরি করে শরীরের এক্সপোজড অংশে লাগিয়ে নিন। শুকিয়ে গেলে গোসল করে নিন। নিয়মিত মাখলে সানট্যানের সমস্যা অনেক কমে যাবে। ত্বক উজ্জ্বল ও মসৃণ হবে। এ সময় অনেকেই ব্রণ বা র‌্যাশের সমস্যায় ভোগেন। এ ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে হলুদ ও নিমপাতা একসঙ্গে বেটে লাগিয়ে নিন। নিমপাতা অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে দারুণ। এই গরমে গোসলের সময় কয়েকটি নিমপাতা পানিতে ফুটিয়ে ছেঁকে ঠা-া করে নিয়ে সে পানি দিয়ে গোসল করুন। এতে ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন বা র‌্যাশ হবে না। নিমপাতা মুখের ডার্ক স্পট বা ট্যান কমাতে সাহায্য করে। নিমপাতা ও হলুদ বাটা একসঙ্গে মিশিয়ে কালো দাগের ওপর লাগান। পুদিনা পাতা ও গোলাপের পাপড়ি একসঙ্গে পানিতে মিশিয়ে ফুটিয়ে নিন। ঠা-া হলে লেবুর রস মিশিয়ে ছেঁকে নিয়ে বোতলে ভরে ফ্রিজে রাখুন। গোসলের পর সারা শরীরে লাগিয়ে নিন। ঘাম কম হবে। উজ্জ্বল ও কোমল ত্বক পেতে কয়েকটা ফেস প্যাক ট্রাই করতে পারেন।


শসা, পেঁপে ও তরমুজ এগুলো ত্বক ঠা-া রাখতে সাহায্য করে। যখন যে ফল খাবেন তার এক টুকরো মুখে ঘষে নিন। দেখবেন ফ্রেশ লাগছে। আর নিমিষে ত্বকের জেল্লা ফিরে আসবে। ত্বক ঠা-া রাখার জন্য শসার রসের সঙ্গে ২ চা-চামচ মিল্ক পাউডার, একটা ডিমের সাদা অংশ, সামান্য গোলাপজল একসঙ্গে মিশিয়ে গলায় ও মুখে লাগিয়ে নিন। শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন। ত্বক ঠা-া হবে, সঙ্গে ত্বকের কালো ভাবও দূর হবে। ঘরে বসে নিজেকে একটু সময় দিয়ে রূপচর্চা করুন। তবে যাদের এই ঘরের রূপচর্চার সময়ই নেই, তারা ভালো স্যালনে রূপ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত চর্চা করুন। তাহলে যে কোনো উৎসবে আপনি ক্লান্তির ছাপ মুছে হয়ে উঠবেন উচ্ছল।


ঝলমলে চুলের আকাক্সক্ষা সবারই। আর উৎসবে সবাই চুলগুলোকে একটু সুন্দর রাখতে চায়। নিয়মিত পরিচর্যায় তা হয়ে ওঠে উজ্জ্বল। গরমে রোদে বেশিক্ষণ থাকার জন্য চুলে সানবার্নের সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়া রোদের তাপ, ধুলো-ময়লা, অতিরিক্ত ঘেমে যাওয়া এ রকম নানা কারণে চুল সহজেই নিস্তেজ ও ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। এমনকি স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুলও নিষ্প্রভ হয়ে পড়ে। অতিরিক্ত ঘাম হওয়ার ফলে চুলের গোড়া ঘেমে যায়। অনেকের আবার চুলের গোড়ায় ঘাম জমে গন্ধ হয়। ঘামের ফলে চুলে সহজেই ধুলো-ময়লা বসে যায়। এর ফলে চুল চটচটে হয়ে যায়। আবার অনেক সময় স্ক্যাল্পে ইনফেকশন বা র‌্যাশের সমস্যাও দেখা দেয়। চুল পড়া শুরু হয়। এসব সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে হলে ভালো বিউটি এক্সপার্টের পরামর্শ নিন। এছাড়া বাড়িতেও যতœ নেয়া সম্ভব।  রোজ অলিভ অয়েল ম্যাসাজ, শ্যাম্পু, কন্ডিশনারের মতো সামান্য কয়েকটি জিনিস করুন। আর সপ্তাহে একদিন হেয়ার মাস্ক ট্র্রাই করুন। চুল ও স্ক্যাল্প নিয়মিত পরিষ্কার রাখা অত্যন্ত জরুরি। সপ্তাহে অন্তত তিন দিন শ্যাম্পু করুন। তবে যারা রোজ বাইরে বেরোন, তারা প্রয়োজনে রোজই শ্যাম্পু করতে পারেন। কোমল হারবাল শ্যাম্পু ব্যবহার করুন। শ্যাম্পু করার সময় প্রথমে চুল ভালোভাবে ভিজিয়ে নিন। তারপর আঙুলের ডগা দিয়ে শ্যাম্পু স্ক্যাল্পে কিছুক্ষণ ম্যাসাজ করুন। তবে খুব বেশি জোরে ঘষবেন না। শ্যাম্পু করার সময় বেশি করে পানি দিয়ে চুল ধোবেন। খেয়াল রাখবেন, চুলে যেন শ্যাম্পু লেগে না থাকে। গরম পানি নয়, ঠা-া পানি দিয়ে সবসময় চুল ধোবেন। এর পাশাপাশি ঘরোয়া হেয়ার প্যাকও ট্রাই করে দেখতে পারেন। হেয়ার প্যাক ভেতর থেকে চুলে পুষ্টি জাগিয়ে চুল মজবুত রাখতে সাহায্য করে। দুটো পাকা কলা ভালো করে চটকে নিন। এর সঙ্গে অলিভ অয়েল, মধু, টকদই মেশান। চুলে ভালো করে এই প্যাক লাগিয়ে নিন। আধা শুকনো হলে পানি দিয়ে ধুয়ে শ্যাম্পু করে নিন। এতে চুলের টেক্সচার আগের চেয়ে অনেক ভালো হবে।
দু’তিন টেবিল চামচ দুধ ও পরিমাণমতো মধু একসঙ্গে মিশিয়ে চুলে লাগিয়ে নিন। হালকা হাতে কিছুক্ষণ ম্যাসাজ করুন। শাওয়ার ক্যাপ পরে নিন। প্যাক আধা শুকনো হয়ে এলে পানি দিয়ে চুল ধুয়ে নিন। নিয়মিত এই হেয়ার প্যাক ব্যবহার করলে চুল নরম হবে, জেল্লা বাড়বে।
যাদের চুলের গোড়া বেশি ঘামে তারা দিনের শেষে বাড়ি ফিরে চুল ভালো করে শুকিয়ে নিন। তারপর বড় দাঁতের চিরুনি দিয়ে ভালো করে চুল আঁচড়ে নিন। কাঠের চিরুনি হলে সবচেয়ে ভালো হয়। গরমে চুলের ডগা ফেটে যাওয়া, রোদে পোড়ার হাত থেকে রেহাই পেতে হলে গরমের শুরুতেই চুল ট্রিম করিয়ে নিন। যারা ঈদ উপলক্ষে চুলের নতুন হেয়ার স্টাইল করতে চান, তারা অন্তত দু’সপ্তাহ আগে চুল কাটুন। সেট হতে সময় লাগে। কালার রিবন্ডিং যেকোনো স্টাইল ঈদ উপলক্ষে আগেই করুন। চুলের যতœ নিন, তাহলে যেকোনো স্টাইলে মানাবে।
 রাহনুমা শর্মী
মডেল : পূজা
মেকআপ অ্যান্ড স্টাইলিং : হারমনি স্পা
অ্যান্ড ক্লিওপেট্রা বিউটি স্যালন
ছবি : শাহরিয়ার কবির হিমেল

 

Comments

The Daily Star  | English

Domestic tourism heats up this winter

The local tourism industry was suffering from apprehension over the loss of business amid a long recession stemming from mass unrest, which began in July

1h ago