বিটিএস কি সত্যি ভেঙে গেল?

কে-পপ ব্যান্ড বিটিএস। ছবি: সংগৃহীত

গত ২-৩ দিন ধরে গুঞ্জন শোনা দক্ষিণ কোরিয়ার পপ ব্যান্ড বিটিএস ভেঙে গেছে।  বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমেও এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। মূলত বিটিএস সদস্যদের একটি ভিডিও বার্তার মাধ্যমে এ গুঞ্জন ছড়িয়েছে। গত মঙ্গলবার ওই ভিডিও বার্তায় বিটিএস সদস্যরা ঘোষণা দেন, তারা ব্যক্তিগত ক্যারিয়ারে মনোযোগী হতে বিরতি নিচ্ছেন। তারপর থেকেই বিটিএস ভাঙার গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে।

সেভিনটিনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার বার্ষিক ফেস্টা ডিনারে ব্যান্ডের সদস্যরা তাদের আগামী দিনের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেন। ডিনারের একটি ভিডিও পোস্ট করা হয় তাদের ইউটিউব চ্যানেলে। প্রায় ১ ঘণ্টা দীর্ঘ ভিডিওর ইংরেজি সাবটাইটেলে 'বিরতি' শব্দটি ব্যবহার করা হয়। ফলে, তখনই এ নিয়ে ভক্তদের মাঝে নানা জল্পনা শুরু হয়৷ অবশ্য এর কয়েক ঘণ্টা পরে ভিডিও'র সাবটাইটেল সম্পাদনা করে 'বিরতি' শব্দটি পরিবর্তন করে 'আমরা অস্থায়ী বিরতি নিচ্ছি' ব্যবহার করা হয়।

কিন্তু, এই গ্রুপের প্রতিনিধিত্বকারী দক্ষিণ কোরিয়ার বিনোদন সংস্থা 'বিরতি' শব্দ নিয়ে আপত্তি তুলে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে। হাইব বলছে, বিষয়টি স্পষ্ট করতে জানানো হচ্ছে- তারা বিরতিতে নেই। কিন্তু, তারা কিছু দিন নিজেদের ব্যক্তিগত ক্যারিয়ার নিয়ে কাজ করবেন এবং ভিন্ন ভিন্ন ফরম্যাটে সক্রিয় থাকবেন। এজন্য তাদের সময় প্রয়োজন।

বিটিএসের এজেন্ট যাই বলুক না কেন বিষয়টি নিয়ে বিশ্বব্যাপী আলোচনা হচ্ছে। বিটিএস ভেঙে গেছে এমন গুঞ্জন জোরালো হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে বিটিএস আর্মিরাও বেশ চিন্তিত। তবে, বিটিএস আবার একসঙ্গে পারফর্ম করবে কিনা সেটা এই মুহূর্তে নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। কিন্তু, কীভাবে বিটিএসের এই সিদ্ধান্ত বিশ্বব্যাপী আলোচিত হলো এবং কেন ভেঙে যাওয়ার মতো গুঞ্জন ছড়ালো তা জেনে নিন।

বিটিএস 'বিরতি'

দক্ষিণ কোরিয়ার বিনোদন সংস্থা হাইবের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তারা এখনো একটি গ্রুপ হিসেবে কাজ করবে। এর পাশাপাশি বিটিএস সদস্যরা আলাদাভাবেও কাজ করবেন। বিটিএস বিরতি নিচ্ছে না। বরং বিটিএসের প্রত্যেক সদস্যে এ সময়ে নিজেদের একক কাজে বেশি মনোনিবেশ করবেন।

বিটিএসের ওই ঘোষণার পর কোরিয়ান সময় রাত ৩টার দিকে হাইব বিষয়টি স্পষ্ট করতে এই বিবৃতি দেয়। কারণ, কিছু বিশ্লেষক ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, বিটিএসের এমন ঘোষণা সংস্থাটির বাজারে বিরূপ প্রভাব ফেলবে। এই উদ্বেগ যে মোটেও ভিত্তিহীন ছিল না তা জানা গেছে ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে। ব্লুমবার্গ রিপোর্ট করেছে, ওই ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পর কোরিয়ান বিনোদন সংস্থাটি গত বুধবার ট্রেডিংয়ের প্রথম ঘণ্টায় ১.৭ বিলিয়ন ডলার বাজার মূল্য হারায়।

বিটিএস যা বলেছে

কে-পপ গ্রুপটি ডিনারের সময় তাদের নবম বার্ষিকী উদযাপন করছিল। এর আগে, গত সপ্তাহে তারা নতুন অ্যালবাম 'প্রুফ' প্রকাশ করে। বিটিএস সদস্যরা ভিডিওটিতে নানা বিষয়ে আলোচনা করেন। তখন কিছু সদস্যকে খুব আবেগপ্রবণ বলে দেখা গেছে। তারা যে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেন, তার মধ্যে একটি ছিল কোরিয়ান বিনোদন শিল্পের প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একজন স্বতন্ত্র শিল্পী হিসেবে আত্মপ্রকাশের ক্ষেত্রে যেসব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিলেন তা নিয়ে আলোচনা করেন বিটিএস সদস্যরা।

আরএম বলেন, কে-পপ এবং পুরো প্রক্রিয়ার সমস্যা হলো- এটি কাউকে পরিপক্ব হয়ে উঠতে সময় দেয় না। কারণ এখানে যে কাউকে ক্রমাগত কাজ চালিয়ে যেতেই হবে এবং কিছু না কিছু করতে হবে। ভক্ত এবং পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে এ নিয়ে দীর্ঘদিন আলোচনা হয়েছে। শিল্পের সীমাবদ্ধতাগুলো শিল্পীদের অনেক সৃজনশীলতা, স্বাধীনতা বা আগ্রহের জায়গাতে কাজ করার সুযোগ দেয় না।

ভিডিওটিতে সুগা নতুন বাদ্যযন্ত্র নিয়ে তার আগ্রহের কথা ব্যাখ্যা করেন। সবচেয়ে কঠিন কাজ হলো গানের কথা লেখা। এটি জোর করে হয় না। আমাকে এমন কিছু লিখতে হবে যা নিয়ে আমি সত্যিই ভাবি।

বিটিএসের কিছু ভক্ত মনে করছেন, একক কাজে মনোনিবেশের ফলে তারা যা করতে চেয়েছিলেন তা নিয়ে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ পাবে।

বিটিএসের আত্মপ্রকাশ এবং বিশ্বব্যাপী প্রভাব

বিটিএস ২০১৩ সালের জুনে আত্মপ্রকাশ করে। তারপর কয়েক বছরের মধ্যে জনপ্রিয় ব্যান্ডে পরিণত হয়। সামাজিক প্রচারাভিযানের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী পরিচিত ওঠে। তাদের লক্ষ্য ছিল, বিশ্বব্যাপী তরুণদের ক্ষমতায়ন। তাদের ফ্যান বেস ছিল সারা বিশ্বে এবং এত ফ্যান আর কোনো ব্যান্ডের নেই। এ কারণেই সরকার থেকে শুরু করে বিভিন্ন সংস্থা তাদের গুরুত্ব দিতে একপ্রকার বাধ্য হয়েছিল।

জিন বলেন, আইডল হিসেবে আমার অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে। আমি এটি খুব উপভোগ করেছি। আগামী দিনে এগিয়ে যেতে আরও বেশি উপভোগ করব।

বিটিএস বছরের পর বছর ধরে অসংখ্য পুরস্কার জিতেছে, পেয়েছে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। তাদের জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ভাষণ দিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। সম্প্রতি হোয়াইট হাউস সফরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে এশীয়-আমেরিকানদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বন্ধের উপায় নিয়ে আলোচনা করেছে বিটিএস।

বিটিএসের উত্থান এবং ক্রমবর্ধমান ফ্যানডম ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি কোরিয়ান বিনোদন শিল্পের অন্যান্য শিল্পীদের অনুপ্রাণিত করেছিল। জিমিন বলেন, আমি মনে করি এ কারণেই আমরা এই মুহূর্তে একটি কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। আমরা নিজেদের পরিচয় খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। এটি কঠিন ও দীর্ঘ প্রক্রিয়া।

জে-হোপ বলেন, আমি মনে করি এই মুহূর্তে এই পরিবর্তন আমাদের প্রয়োজন। আমাদের দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু করা বিটিএসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

বিটিএসের এই সিদ্ধান্ত ভক্তদের সমর্থন পেয়েছে বলে আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে। কারণ সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোতে বিটিএস আর্মিরা ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। তাদের উদ্দেশে জাংকুক বলেন, আমরা প্রত্যেকেই অনেক কিছু রপ্ত করতে কিছুটা সময় নেব। তবে, প্রতিজ্ঞা করছি, আমরা এখনকার চেয়ে আরও পরিপক্ব হয়ে ফিরে আসব। তাই, আপনারা আমাদের জন্য আশীর্বাদ করবেন।

Comments

The Daily Star  | English

US-China tariff war punishes Bangladesh

Bangladesh is one of those nations that face pressure from Washington to decouple their manufacturing industries from Chinese suppliers, according to officials familiar with trade negotiations.

11h ago