‘সবাইকে মাতিয়ে রাখতেন আবদুল কাদের’

আবদুল কাদের। ছবি: সংগৃহীত

'কোথাও কেউ নেই' নাটকে বদি চরিত্রে অভিনয় করে ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছিলেন অভিনেতা আবদুল কাদের। এছাড়া, অসংখ্য নাটকে অভিনয় করেছেন তিনি। মঞ্চেও সরব ছিলেন।

'মেরাজ ফকিরের মা' নাটকের মেরাজ চরিত্রটি তার জীবনের অন্যমত সেরা কাজ।

জনপ্রিয় অভিনেতা আবদুল কাদেরের প্রথম প্রয়াণ দিবস আজ। তাকে

নিয়ে দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে কথা বলেছেন ফেরদৌসী মজুমদার, রামেন্দু মজুমদার ও আসাদুজ্জামান নূর।

ফেরদৌস মজুমদার: আবদুল কাদের অনেক মেধাবী অভিনেতা ছিলেন

আবদুল কাদের অনেক মেধাবী অভিনেতা ছিলেন। এমন মেধাবী অভিনেতার সংখ্যা আমাদের এখানে কম। যে কোনো চরিত্রের সঙ্গে মিশে যেতে পারতেন। কী সিরিয়াস চরিত্র, কী কমেডি চরিত্র। তার প্রতিভা সব সময় আমাকে মুগ্ধ করেছে।

অভিনয় জীবনে কত স্মৃতি আমাদের। তিনি নাটকের দল 'থিয়েটার'র সঙ্গে জড়িত ছিলেন। একই দলে কাজ করায় তাকে অন্যদের চেয়ে বেশি করে চিনতে পেরেছি। চেনার সুযোগ বেশি পেয়েছি। তাকে জেনেছি কাছ থেকে। একজন ভালো অভিনেতা শুধু নয়, একজন মানুষও ছিলেন তিনি।

একবার 'এখনো দুঃসময়' নাটকের শো করতে ঢাকার বাইরে গিয়েছিলাম। মেকআপ-গেটআপ নিয়ে গেট দিয়ে ঢুকছি। আমার সঙ্গে আবদুল কাদের ছিলেন। নিরাপত্তাকর্মী আমাকে চিনতে পারেননি। আটকে দিয়েছিলেন। আবদুল কাদের তখন হাসতে হাসতে বলেছিলেন, 'উনাকে ছেড়ে দিন নইলে আপনাদের কারো রক্ষা নেই!'

লোকটি অবাক। আবদুল কাদের আমার পরিচয় দেওয়ার পর লোকটি হা করে ছিলেন।

এক সময় প্রতি শুক্রবার আবদুল কাদের ও খায়রুল আলম সবুজ আমার বাসায় আসতেন। আমরা অনেক গল্প করতাম। এক শুক্রবার সকালে তারা বাসায় এলে বলি, 'নাস্তা করেছ?'

আবদুল কাদের নাটকের সংলাপ টেনে বলেছিলেন, 'তর খিদা লাগে ক্যান?'

রসবোধ সম্পন্ন মানুষ আবদুল কাদের নাটকের সংলাপ থেকে নিয়ে কথা বলতে পছন্দ করতেন।

'মেরাজ ফকিরের মা', 'এখনো দুঃসময়' ও 'পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়' নাটকে আমরা এক সঙ্গে অভিনয় করেছি। অভিনেতা হিসেবে নতুন করে বলার নেই।

প্রিয় মানুষটি নেই আজ এক বছর হয়ে গেল। যেখানে আছে ভালো থাকুক।

রামেন্দু মজুমদার: সবাইকে মাতিয়ে রাখতেন আবদুল কাদের

'থিয়েটার'-এ শুরু থেকে জড়িত ছিলেন আবদুল কাদের। আমাদের নাটকের দলের জয়েন্ট সেক্রেটারি ছিলেন অনেকদিন। কাজ দিয়ে, মেধা দিয়ে নিজেকে তিনি দলের জন্য অপরিহার্য করে তুলেছিলেন। তিনি কাজ ভালোবাসতেন, ভালোবাসতেন অভিনয়।

'এই চরিত্র করা যাবে না' বা 'সেই চরিত্র করা যাবে না'—এমন কথা কখনো বলেননি। তার মনে-প্রাণে ছিল অভিনয়। তার ধ্যান ছিল অভিনয়ে। অভিনয়কে কতটা ভালোবাসা যায়, তাকে দেখে অনেকের শেখার ছিল।

একজন অভিনেতা সাধারণত মঞ্চ নাটকের একটি মাত্র চরিত্রের সংলাপ মুখস্থ করে থাকেন। কিন্তু, আবদুল কাদের ছিলেন ব্যতিক্রম। নিজের চরিত্র শুধু নয়, অন্যদের সংলাপ তার মুখস্থ থাকত।

কতটা পরিশ্রমী ও মঞ্চের প্রতি ভালোবাসা থাকলে সবার সংলাপ মুখস্থ করা সম্ভব! এমন কাজ আর কাউকে করতে দেখিনি।

যেকোনো পরিবেশে তার রসবোধের কারণে পরিবেশ অন্যরকম হয়ে উঠত। তিনি সবাইকে মাতিয়ে রাখতেন। এমন বিরল প্রতিভা কম শিল্পীর মধ্যে দেখেছি। একটাই আফসোস বড় অসময়ে মানুষটি আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। মঞ্চে তার আরও অনেক দেওয়ার ছিল।

যতদূরেই থাকুক, দূর থেকে তাকে ভালোবেসে যাব, মনে করব।

তিনি সবশেষ মঞ্চে অভিনয় করেছিলেন 'মেরাজ ফকিরের মা' নাটকে। এটি করতে গেলে তার কথা খুব করে মনে পড়ে।

আসাদুজ্জামান নূর: মঞ্চকে কাদের ভীষণ ভালোবাসতেন

আবদুল কাদের আমার প্রিয় সহশিল্পী ছিলেন। তিনি খুব মনখোলা মানুষ ছিলেন। শত মন খারাপের মধ্যেও তার সঙ্গ পেলে যে কারো মন ভালো হয়ে যেত।

তার সঙ্গে বেশ কয়েকটি কাজ করেছি। সবচেয়ে আলোচিত কাজ 'কোথাও কেউ নেই'। এই নাটকে আমার চরিত্রটি যেমন আলোচিত, তেমনিভাবে বদির চরিত্রটিও মানুষের মনে দাগ কেটে আছে। বাকের ভাই ও বদি নাম ২টি মানুষের মনে রয়ে যাবে। বদির সাক্ষীর কারণে বাকেরের ফাঁসি হয়। এ জন্য মানুষ তাকে মনে রাখবে।

আবদুল কাদেরের বড় গুণ তিনি মঞ্চকে ভীষণ ভালোবাসতেন। মঞ্চে তিনি অসাধারণ অভিনয় করতেন। এ ছাড়া, ভালো সংগঠকও ছিলেন।

মানুষ হিসেবেও খুব ভালো ছিলেন। সংসারী ছিলেন প্রবলভাবে। এত কাজের মধ্যেও সবার আগে সংসারের কথা মনে রাখতেন, সংসারের সবকিছু সামাল দিতেন।

শিল্পচর্চা, সংসার ও ভালোমানুষ—এই গুণগুলো সবার এত বেশি থাকে না। কিন্তু, তার মধ্যে ছিল। এখানেই তিনি আলাদা। সবকিছুর ওপর তিনি ছিলেন প্রিয় সহশিল্পী।

প্রিয় সহশিল্পীর জন্য ভালোবাসা।

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

15h ago