পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায় নাটকে ৪০ বছর ধরে কাজ করছি: কেরামত মওলা
সাড়া জাগানো মঞ্চ নাটক 'পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়', 'রক্ত করবী', 'বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ' এবং কালজয়ী সিনেমা 'সূর্য দীঘল বাড়ি' ব্যাপক খ্যাতি এনে দেয় কেরামত মওলাকে।
দীর্ঘদিন ধরে দেশের পরিচিত নাটকের দল 'থিয়েটারের' সঙ্গে জড়িত আছেন তিনি। মঞ্চ ও সিনেমা ছাড়াও অসংখ্য টেলিভিশন ও বেতার নাটকে অভিনয় করেছেন এই অভিনেতা। একুশে পদক পাওয়া গুণী অভিনেতা কেরামত মওলার আজ ১৫ নভেম্বর জন্মদিন। ৮০ বছরে পা দিলেন তিনি।
অভিনয় জীবনে মঞ্চ নাটকে বেশি সময় দিয়েছেন। এখনো মঞ্চে সরব তিনি। 'দুই বোন', 'তাসের দেশ', 'ডাকঘর', 'মহাপুরুষ', 'ইডিপাস', 'ওথেলো', 'সেনাপতি', 'চারিদিকে যুদ্ধ'-সহ আরও অনেকগুলো মঞ্চ নাটকে অভিনয় করে ঢাকার মঞ্চকে সমৃদ্ব করেছেন কেরামত মওলা। দেশের বাইরেও মঞ্চ নাটকে অভিনয় করেছেন তিনি।
কেরামত মওলা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মঞ্চের সব কাজই আমার কাছে প্রিয়। মঞ্চকে অনেক বেশি ভালোবাসি। 'পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়' নাটকে বৃদ্ধের চরিত্রটি আসলেই আমার কাছে খুবই ভালো লাগার একটি কাজ। এই চরিত্রটি টানা ৪০ বছর ধরে করছি।
'সূর্য দীঘল বাড়ি' ছাড়া আরও যেসব সিনেমায় কেরামত মওলা অভিনয় করেছেন, সেগুলো হলো- 'নদীর নাম মধুমতি', 'পদ্মা নদীর মাঝি', 'এখনই সময়', 'মহানায়ক', 'দুখাই', 'নন্দিত নরকে', 'মোল্লাবাড়ির বউ', 'রাজলক্ষী শ্রীকান্ত', 'রাণী খালের সাঁকো' ও 'অঙ্গীকার' উল্লেখযোগ্য।
টেলিভিশনে তার অভিনীত কয়েকটি আলোচিত নাটকের মধ্যে রয়েছে, 'মাটির কোলে' ও 'জোনাকি জ্বলে', 'তিনি একজন মুক্তিযোদ্বা', 'নদীর আরেক নাম', 'গহর গাছী' ও 'ফিরে দেখা'।
২০১৪ সালে অভিনয় কলায় অবদানের জন্য একুশে পদক পান কেরামত মওলা।
কেরামত মওলা সম্পর্কে নাট্যজন ফেরদৌসী মজুমদার বলেন, ''কেরামত মওলার সঙ্গে অনেক বছরের পরিচয়। অনেক বছরের সুসম্পর্ক। আমার পরিচালনায় মঞ্চে 'দুই বোন' নাটকে অভিনয় করেছেন। সেটি একটি সাড়া জাগানো নাটক। এত দর্শক হতো যে, টিকিট দিতে পারতাম না।'
তিনি আরও বলেন, 'কেরামত মওলা অসম্ভব ভালো মানুষ। একজন ভালো অভিনেতা তো অবশ্যই। ভরাট কণ্ঠ তার। এটা মঞ্চে কাজে দেয়। যখন অভিনয় করেন শতভাগ নিষ্ঠার সঙ্গে করেন। থিয়েটারে আমাদের পথচলা বহু বছরের। আমাকে অসম্ভব সম্মান করেন। আমিও তাকে খুব পছন্দ করি। ৮০ বছরে পা দিয়েছে জেনে ভালো লাগছে। শতায়ু হোক।'
নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার বলেন, 'মঞ্চ-টেলিভিশন নাটক ও সিনেমার গুণী অভিনেতা কেরামত মওলা। সবসময় কঠিন চরিত্রে অভিনয় করতে পছন্দ করেন। এত দুরূহ সব চরিত্রে অভিনয় করেন, অনেকে সাহসও পান না করতে। কালজয়ী কিছু সিনেমা ও মঞ্চ নাটকে ছাপ রেখে গেছেন। যা তাকে বাঁচিয়ে রাখবে অনেককাল।'
তিনি আরও বলেন, 'থিয়েটারে আমরা লম্বা সময় কাটিয়ে দিলাম। কেরামত মওলা একজন চারুশিল্পী। এটা টেলিভিশনে কাজে লাগিয়েছেন। ডিজাইনার হিসেবে কাজ করেছেন টেলিভিশনে। আর্ট কলেজের ছাত্র ছিলেন তিনি।'
'কেরামত মওলা আমার খুব পছন্দের মানুষ। ভীষণ পছন্দ করি তাকে', যোগ করেন রামেন্দু মজুমদার।
এদিকে নিজের জন্মদিন নিয়ে কেরামত মওলা বলেন, 'দিনভর মানুষের ভালোবাসা পাচ্ছি, এটাই জীবনের বড় প্রাপ্তি। এই ভালোবাসা নিয়েই বেঁচে থাকতে চাই। আজ সারাদিন বাসায় আছি। পরিবারের সঙ্গে সময় কাটছে।'
তিনি আরও বলেন, 'জীবন মানে কর্মময় একটি অধ্যায় পার করা। কর্মই মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে।'
Comments